যে ক্রিকেট ‘ধনীদের খেলা’ বলে পরিচিত, তাকে সাধারণের হাতের মুঠোয় এনে দিতে চেয়েছিলেন বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ী অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বন্ধু বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভাবনা এবং তার থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ২৫ বছরে পদার্পণ করল। ২৫ বছরে কি সেই স্বপ্ন পূরণ হল?
গত সোমবার অ্যাকাডেমির রজতজয়ন্তীর পূর্তি অনুষ্ঠানে সম্বরণ তাঁর ক্রিকেটস্পৃহ ছাত্রদের যা বললেন, তাতে বোঝা গেল লক্ষ্যপূরণের শেষ ধাপের প্রস্তুতি চলছে এখন। কারণ তিনি জানতে চাইলেন, ‘‘যদি ১৪ বছরের বৈভব রাজবংশী আইপিএল খেলতে পারে আর প্রথম আইপিএল খেলতে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা মারতে পারে, তবে তোমরা কেন পারবে না!’’

অঞ্জন বললেন, ‘‘আমি চাই আমাদের অ্যাকাডেমি থেকে অন্তত দু’জন আইপিএল খেলুক। এক জন অন্তত সুযোগ পাক জাতীয় ক্রিকেট দলে।’’ ছবি: সৌম্যজিৎ দে।
১৪ বছরের আশপাশের বহু কিশোর হাজির ছিল অনুষ্ঠানে। কারও বাড়ি সুন্দরবন, কেউ কলকাতায় মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেট শিখতে আসে ডায়মন্ড হারবার থেকে। অনূর্ধ্ব ১৩ এবং অনূর্ধ্ব ১৫— দু’টি দল আছে। সম্বরণের মুখে আইপিএল এবং বড় ম্যাচ খেলার কথা শুনে, স্বপ্ন ঝকঝক করছিল তাদের চোখেও। সম্বরণ জানালেন, সেই স্বপ্ন নিশ্চিন্তে দেখার ভরসা দিয়েছেন অঞ্জন। অ্যাকাডেমির ২৫ বছর উপলক্ষে মেধাবী খেলোয়ারদের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ী। কারণ ওঁর মনে হয়েছিল, ক্রিকেটের সমস্ত সরঞ্জাম অত্যন্ত দামি হয়। সবার সেই অর্থ খরচ করার পরিস্থিতি না-ও থাকতে পারে। অ্যাকাডেমির তরফেই সেটি উপহার পেলে অনেকেরই সুবিধা হবে।
দিন কয়েক আগেই অ্যাকাডেমির প্রতিভাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের হাতে ওই ক্রিকেট কিট তুলে দিয়েছেন কলকাতার মেয়র এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অঞ্জন বলেছেন, ‘‘আমি চাই আমাদের অ্যাকাডেমি থেকে অন্তত দু’জন আইপিএল খেলুক। এক জন অন্তত সুযোগ পাক জাতীয় ক্রিকেট দলে।’’

২৫ বছর উপলক্ষে এখানকার মেধাবী খেলোয়ারদের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সৌম্যজিৎ দে।
সংবরণও চান অ্যাকাডেমির ছাত্রেরা একদিন ভারতের হয়ে লাল বলের ম্যাচ খেলুক। টেস্ট ক্রিকেট খেলুক। তার জন্য জাতীয় স্তরের ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষক হিসাবে আনার চিন্তা ভাবনা চলছে, অস্ট্রেলিয়া থেকেও এক জন ক্রিকেটারকে প্রশিক্ষক হিসাবে আনা
যায় কি না, সে বিষয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানালেন সম্বরণ।
তবে কি ধনীদের খেলাকে সাধারণের আয়ত্তে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্নপূরণ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে?
অনুষ্ঠান শেষে অ্যাকাডেমির ছাত্রদের জন্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। অনূর্ধ্ব ১৩, অনূর্ধ্ব ১৫রা ভিড় করে প্লেটে খাবার নিয়ে ঘিরে বসেছিল টেবিলে। তাদের জিজ্ঞাসা করা গেল, আইপিএল খেলার ডাক পেলে কী করবে? ১৪ বছরের একটি মুখ খাবার প্লেট থেকে চোখ তুলে বলল, ‘‘ডাকলে যাব।’’ ভয় করবে না? জবাব এল, ‘‘ছক্কা মারব!’’