করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে সেফ হোম চালু করেছেন যিশু সেনগুপ্ত। ফাইল চিত্র
এমনিতে তাঁর সময় পাওয়াই মুশকিল। কখনও কোভিড ওয়ার্ডের কাজে ব্যস্ত। কখনও সুন্দরবনে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ— সব ঠিক মতো গাড়িতে উঠল কিনা, নিজেই তদারকি করছেন। অথচ, মানুষের বিপদে কী ভাবে পাশে দাঁড়ালেন, এই প্রশ্ন শুনেই লজ্জিত হয়ে পড়লেন। বহু সাক্ষাৎকারে সাবলীল তারকা-অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যেন খানিক আড়ষ্ট।
ছোটবেলার পাড়া, ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯ মে তিনি ২০টি বে়ড নিয়ে একটি ‘সেফ হোম’ খোলেন কোভিড আক্রান্তদের জন্য। ভাবনা সম্পূর্ণ নিজের হলেও প্রথম দিন থেকে পাশে পেয়েছিলেন বন্ধু সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকে। সঙ্গে ছিলেন কিঞ্জল নন্দের মতো চিকিৎসক এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ৪-৫জন ছাত্র। সাহায্য পেয়েছিলেন বিধায়ক দেবাশিস কুমার এবং তাঁর মেয়ে দেবলীনার কাছ থেকেও। তাঁরাই সেফ হোমের জায়গা খুঁজে দিয়েছিলেন অভিনেতাকে। হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগের কথা ভাবলেন? প্রশ্ন শুনে হতবাক যিশু। ‘‘এই সঙ্কটের মুহূর্তেও কাজ না করলে আর কখন করব? তবে আমি তো কোনও মহান কাজ করছি না। বহু মানুষ তাঁদের মতো করে সকলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এ সময়ে। ভগবানের ইচ্ছায় সামর্থ্য রয়েছে, তাই আমিও করছি। যতদিন থাকবে, ততদিনই করার চেষ্টা করব। এটাই তো মানুষ হিসেবে এখন আমাদের কর্তব্য, তাই না,’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন অভিনেতা।
গত বছরও ইন্দ্রদীপ, রুদ্রনীল ঘোষ এবং আরও অনেকের সঙ্গে আমপানের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছিলেন যিশু। কথায় কথায় জানা গেল, তার আগেও বহুবার সঙ্কটের সময়ে নানা ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু সে কথা প্রকাশ্যে আনতে চাননি। এখনও সে সব বলতে ঘোরতর আপত্তি তাঁর। ‘‘প্লিজ অত কিছু জিজ্ঞেস করবেন না, এ সব বলা আমার পক্ষে যথেষ্ট লজ্জাজনক,’’ অনুরোধ যিশুর। তাঁর কাছে মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এ ভাবেই বড় হয়েছেন তিনি। ‘‘দেখেছি, মা নিজের গয়না বিক্রি করে রিকশাচালকের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। বাবা ১৮ বছর ধরে যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেকবারই আমাদের জন্য কেনা পুজোর জামাকাপড় যাত্রাদলের মানুষদের দিয়ে দিতেন। বলতেন, তোদের তো অনেক আছে। সঙ্কটের সময়ে মানুষকে সাহায্য করা আমার কাছে এতটাই স্বাভাবিক। এ কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই,’’ অভিনেতার গলায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে সঙ্কোচ।
বাবা-মায়ের নামে খুব তাড়াতাড়ি একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন শুরু করবেন যিশু। সদ্য ইয়াস বিদ্ধস্ত সুন্দরবনের ৪টf দ্বীপে ত্রাণ পৌঁছে দিলেন তিনি। গঙ্গাপুর গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলেন ৩-৪ জন চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে। ৩০০ পরিবারের হাতে তুলে দেন চাল-ডাল-মুড়ি-মশলা-সোলার লাইট, পানীয় জল, ওষুধ এবং আরও কিছু প্রয়োজনীয় দ্রব্য। বিনামূল্যে কোভিড সেফ হোম শুরু করেছিলেন একেবারেই একা। কিন্তু এই উদ্যোগে শুরু থেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলেন বহু মানুষ। প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি থেকে অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মতো টলি-পলাড়ার অনেকেই সাহায্য করেছেন। এগিয়ে এসেছেন বহু শিল্পপতি। বাদ যাননি সাধারণ মানুষও। ‘‘আমার সেফ হোমে পরিষেবা দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এমনকি কারও কাছ থেকে কোনও রকম আর্থ সাহায্যও নিইনি। তবে অনেক পরিবার এখান থেকে যাওয়ার সময়ে অত্যন্ত খুশি হয়ে কিছু টাকা দিতে চাইছেন। একজন জোর করে ৫ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই টাকা আমাদের ত্রাণের কাজে খুব সাহায্য করেছে। এমন অনেকের কাছ থেকেই ত্রাণের জন্য সাহায্য পেয়েছি,’’ বললেন যিশু।
সেফ হোম শুরু করার সময়ও বহু মানুষের সাহায্য পেয়েছিলেন যিশু। সন্দীপ ভুতোরিয়া থেকে নমিত বাজোরিয়া— সকলেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার পেতে বেশ খানকটা হয়রানি হয়েছিল তাঁর। তখন এগিয়ে আসে ‘দ্য বেঙ্গল’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। পরে অবশ্য প্রয়োজন না পড়ায় সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেরত দিয়ে দেন যিশু।
এক সময়ে তাঁর সেফ হোমের ২০টি বেডই ভর্তি ছিল। গত সপ্তাহ থেকে একটু একটু করে মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। সেফ হোম যেন দ্রুত খালি হয়ে যায়, এমনটাই যিশুর প্রার্থনা। ‘‘কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে আমাদের এখন আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তৃতীয় ঢেউ নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা বারবার সতর্ক করছেন। অবিলম্বে প্রতিষেধক নেওয়া এবং কোভিড-বিধি মেনে চলা আরও জরুরি এখন। যতই আমরা সরকারকে বা অন্য কাউকে দোষ দিই, ভুল তো সকলেরই ছিল। পুজো-বড়দিন-চৈত্র সেল কিছুই তো বাদ দিইনি আমরা,’’ বললেন অভিনেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy