গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাঙালির বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য জাতির গুচ্ছের অভিযোগের অন্যতম হল, কোনকালে ঘি খেয়ে এখনও তার গন্ধ শুঁকে বেড়ানোর বাতিক। এ কথা স্বীকার করতে অস্বস্তি নেই যে নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অন্যদের তুলনায় বেশ কয়েক কদম এগিয়ে, তা সে নীরদচন্দ্র যতই ‘আত্মবিস্মৃত’ বলে স্বজাতিকে গাল পাড়ুন না কেন। পুরনো সবই বাতিলের ফর্দে উঠিয়ে যা কিছু নতুন, তাকেই মাথায় তুলে ধেই ধেই নাচার মানসিকতা অধিকাংশ বাঙালিরই না-পসন্দ। তাই যুগের হাওয়ায় গা ভাসিয়েও প্রাচীন অনেক কিছুই আমরা সযত্নে আঁকড়ে রাখি, একসঙ্গেই রোমন্থনের লাটিম আলগা করে স্মৃতির গুলিসুতো ছেড়ে যাওয়ার সুখও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি। সে কারণে আজও কলকাতার রাস্তায় ট্রাম আর টানারিকশা দেখা যায়, মাল্টিপ্লেক্সের সঙ্গে ভিড় জমে আটপৌরে সিনেমা হলেও এবং ঝাঁ-চকচকে ফুড কোর্টের শহরে এখনও টিকে থাকে অলিগলির প্রাচীন পাইস হোটেলগুলি।
কলকাতার রসনা মানচিত্রে পাইস হোটেলের উদয় মোটামুটি আঠেরো শতকের মাঝামাঝি। আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখা গ্রামীণ বাঙালি চাকরি জুটিয়ে মহানগরের পথে পা বাড়াল। একসঙ্গেই উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে দূরদূরান্ত থেকে শহরে আসতে শুরু করল পড়ুয়ারাও। নতুন শহরে এঁদের অধিকাংশেরই বাসস্থান হয়ে উঠল মধ্য ও উত্তর কলকাতায় গজিয়ে ওঠা একের পর এক মেসবাড়ি। ঘর জুড়ে সারিবদ্ধ তক্তপোশে শোয়ার ব্যবস্থা আর দু’বেলা উদরপূর্তির জন্য বহাল হল রান্নার ঠাকুর, যাঁদের অনেকেই আদতে উৎকলবাসী। শহুরে গেরস্থবাড়ির হেঁশেল সামলানোর কাজে তত দিনে যাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত। শহরে যখন দিনকে দিন এ ভাবে মেসের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকল, তখন আবার দেখা দিল নতুন সমস্যা। থাকার বন্দোবস্ত করা গেলেও বিবিধ কারণে বেশ কয়েকটি মেসে খাবারের ব্যবস্থা করা নিয়ে নানা ঝক্কি শুরু হল। ফলে কিছু মেসবাড়ি থেকে রান্নার পাটই উঠিয়ে দেওয়া হল। অন্য দিকে, যে সব বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা বহাল রইল, সেখানে বহিরাগত বোর্ডারদের কেউ কেউ পরিচিতদের হাত ধরে নগদ গুনে পাত পাড়তে শুরু করলেন। কিন্তু স্থায়ী বাসিন্দাদের সামলে, নতুন খদ্দেরদের চাহিদা মেটানো সহজ কথা নয়। এই যখন অবস্থা, তখনই প্রয়োজন দেখা দিল পরিযায়ীদের অন্ন সংস্থানের স্থায়ী সমাধানের। নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা জরিপ করে কলকাতার বুকে গজিয়ে উঠল পর পর ভোজনশালা, যেখানে সস্তায় ভরপেট খানার সুবন্দোবস্ত কায়েম হল।
পাইস হোটেলের শিকড় কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে ভ্রমণপথিক বাঙালির সুপ্রাচীন তীর্থপথেই। পর্যটনের নেশায় বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি দিলে মালপত্তরের তালিকায় হাঁড়ি-কড়াই-খুন্তি নেওয়ার রেওয়াজ বরাবরই ছিল। কোনও মঠ-মন্দির বা ধর্মশালায় রাতের আশ্রয় মিলে গেলে ছাঁদা খুলে বাসনপত্তর বার করে কাঠের আঁচে চাল-ডাল চাপিয়ে খোরাকির ব্যবস্থা করা জানা ছিল আগেই। তীর্থযাত্রায় বাংলার বাইরে পা ফেললে বহু দুর্গম অঞ্চলে চটির ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকেই বহাল। কিন্তু সেখানকার খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। অবাঙালি রসনায় খিদের জ্বালা মিটলেও, ভেতো বাঙালির তৃপ্তি হয় না। অতএব চাহিদা বুঝে দিকে দিকে গড়ে উঠল বাঙালির জিভসওয়া ভাতের আস্তানা। হা-ভাতে বঙ্গসন্তানের জঠরজ্বালা জুড়োতে দেশ-বিদেশে ভাতের হোটেল চালু করলেন বেপরোয়া বাঙালিই, যাদের পিছনে দাদা-বৌদি, দিদি ও মাসিমাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলকাতার সাবেক পাইস হোটেলগুলির পাশাপাশি বঙ্গ খাদ্য সংস্কৃতিতে তাঁদের ভূমিকাও কিছু কম উল্লেখযোগ্য নয়। সপরিবার প্রমোদ ভ্রমণ, তীর্থযাত্রা বা কর্মক্ষেত্রে বদলির তাগিদে ভিন্রাজ্যে পাড়ি দেওয়া বাঙালির জন্য ভারত জুড়ে গজিয়ে উঠল অসংখ্য বোর্ডিং হাউস আর ভাতের হোটেল। খানিকটা সেই ধারা অনুসরণ করেই পরবর্তী কালে মেসবাড়িগুলির জন্য চালু হল ভাতের হোটেল। সেই সময়ে মাত্র দুই-চার পাই খসালেই সেখানে পেটচুক্তি ঘরোয়া খাবারের ঢালাও ব্যবস্থা। শহুরে সেই সব ভাতের হোটেল তাই চলতি জবানে পরিচিতি পেল পাইস হোটেল নামে।
নগরজীবনের খরচ সামলাতে হিমশিম খাওয়া খাইয়েদের কথা ভেবে পাইস হোটেলে সামান্য খরচে পেট ভরাতে ভাত-ডাল-সব্জির দেদার জোগান থাকল শুরু থেকেই। সঙ্গে মাছ অথবা মাংস নিলে বাড়তি রেস্ত খসানো ছিল দস্তুর। গ্রাহকের ট্যাঁক সুরক্ষিত রাখাই শুধু নয়, এই সব আদি ভোজনশালার পাচককুল খাইয়েদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার জোগানোয় সদাসতর্ক থাকতেন। কাজের খাতিরে ঘরছাড়া মানুষের যাতে হোটেলের খাবার হজম করতে না পেরে খামোখা পেটের রোগে কাবু না হয়ে পড়েন, সে খেয়াল তাঁরা রাখতেন সব সময়ে। তাই তেল-মশলার কালোয়াতি এ সব খাদ্যশালার চলনে ছিল না। সেকালের সামাজিক রীতি মেনে ভাত বেড়ে দেওয়া হত কলাপাতায়। মাটির ভাঁড়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা। কালের সঙ্গে পাঞ্জা কষে শহরের বুকে টিকে থাকা প্রাচীন এই সব ভাতের হোটেলে আজও সেই ধারা অনেক জায়গাতেই বজায় রেখেছে। এখানকার হেঁশেলে এখনও রান্না হয় ঘানিতে পেশা সর্ষের তেলে, প্যাকেটজাত গুঁড়ো নয়, ব্যবহার করা হয় হামানদিস্তা বা শিলনোড়ায় বাটা মশলা, আর মেনে চলা হয় আদ্যিকাল থেকে চলে আসা রন্ধন প্রক্রিয়া। মাটিতে বসে খাওয়া ছিল তৎকালীন রেওয়াজ, যা আজও বহাল রয়েছে কৈলাস বোস স্ট্রিটের জগন্মাতা ভোজনালয়ে।
পাইস হোটেলের পুনরুত্থান
যুগের নিয়মে অনেক কিছুই বদলে যায়। সামাজিক অনুসঙ্গে পরিবর্তনের ঢেউ বার বার এলোমেলো করে দিয়ে যায় অভিরুচি, অভ্যাস ও গুরুত্বের হিসেব-নিকেষ। বিলুপ্তির প্রান্তে দাঁড়িয়ে পাইস হোটেল সংস্কৃতিরও অবসান ঘটতে চলেছিল হয়তো বা। বিংশ-একবিংশ শতকে পাইস হোটেলের মৃত্যুঘণ্টা বাজাতে শহরে এল নবসাজে সজ্জিত শুধুমাত্র ‘বাঙালি খাবারের’ রেস্তোরাঁ। আপাদমস্তক পেশাদার সেই সব দোকানের চটক ও পরিষেবা গ্রাহক টানতে সিদ্ধহস্ত। তুলনায় এঁদো গলির পাইস হোটেল নস্যি। নতুন এই আগ্রাসনের জেরে প্রায় নাভিশ্বাসই উঠতে চলেছিল পাইস হোটেল শিল্পের। ঠিক এমন সময়ে বিনা নোটিসে আচমকাই জিয়নকাঠির হদিস দিল প্রযুক্তির উন্মেষ। আন্তর্জালের হাত ধরে জনসংযোগে নতুন মাত্রা যোগ করল সোশ্যাল মিডিয়া। মানে সাদা বাংলায় বলে সমাজমাধ্যম। তার জেরেই নবীন প্রজন্মের খাদ্যসন্ধানীদের দূরবিনে ধরা পড়তে শুরু করল ধুঁকতে থাকা মান্ধাতার সমকালীন শহরের মুষ্টিমেয় পাইস হোটেল। ফুড ভ্লগারদের বদান্যতায় বিস্মৃতির ধুলো ঝেড়ে আরও এক বার বাঁচার মরিয়া লড়াইয়ে শামিল হয়েছে তারা। কারণ, তাদের পুঁজি খাঁটি মশলা আর টাটকা আনাজ ও মাছ-মাংস।
জন্মলগ্ন থেকেই যেমন এ বিষয়ে যত্নবান পাইস হোটেলের কর্ণধারেরা, তেমনই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে টিকে থাকতে গেলে চাই এর উপরেও আরও অনেক কিছু। আক্ষেপের বিষয়, এ নিয়ে বেশির ভাগ হোটেল কর্তৃপক্ষই সজাগ নন। প্রথমেই ভেবে দেখা যাক পরিচ্ছন্নতার কথা। সকলেরই জানা আছে যে, হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকানা বাদ দিলে, কলকাতা ও মফস্সলের অধিকাংশ ভাতের হোটেল মাত্রাতিরিক্ত নোংরা পরিবেশে অবস্থিত। যাতায়াতের পথে অথবা হাত-মুখ ধোয়ার জায়গায় স্তূপাকৃতি উচ্ছিষ্ট, এঁটো বাসনকোসন, ধুলোমাখা দরজা-জানলা-কড়িবর্গা আর আলো-পাখা, প্রথম দর্শনেই নবাগত শহুরে খাইয়ের মনে বিবমিষা সৃষ্টি করতে বাধ্য। এর সঙ্গে রয়েছে নোনা-ধরা, কালি-ঝুল মাখা টিমটিমে রান্নাঘর। ভেবে দেখা উচিত, এমন আবহে স্বাস্থ্যসম্মত রসনাপাকের অস্তিত্ব নিয়ে খদ্দেরের মনে কি প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক নয়? অথচ, এ বিষয়ে চিরউদাসীন কর্তৃপক্ষ। বলছি না যে, রাতারাতি ভোজনশালার ভোল পালটে দিতে হবে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা খাতে সামান্য খরচ করলে যদি গ্রাহকের সুনজর ফেরানো যায়, তা হলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসারই মঙ্গল হবে।
দ্বিতীয়ত, পাইস হোটেলের আয় বাড়াতে হলে প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণও। তাঁদের টানতে গেলে ঘুণধরা মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতেই হবে।
ফুড ভ্লগারদের প্রচারগুণে হাল আমলে পাইস হোটেলের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন নবযুগের আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল গ্রাহকেরা। হোটেল মালিকরাও এ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাঁদের পছন্দের নাগাল পেতে তাই দরকার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিরন্তর প্রচার। সেখানে গলা তুলে প্রচার করতে হবে হোটেলের যতেক ইউএসপি। প্রয়োজনের খাতিরে এ বিষয়ে পেশাদারের দ্বারস্থ হওয়াও অসাধ্য নয়। লক্ষণীয়, সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ও ইয়ং বেঙ্গল হোটেলের মতো সুপ্রাচীন তথা স্বনামধন্য সুখাদ্যশালা উপরোক্ত ধারা অনুসরণ করে কিন্তু ইতিমধ্যে সুফল লাভ করেছে।
তৃতীয়ত, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে রসনাক্ষেত্র ফেঁদেছি যখন, তখন খদ্দেরের স্বস্তিবৃদ্ধি ঘটাতে বাতানুকূল পরিবেশ তৈরি করা আবশ্যিক। মনে রাখতে হবে, দিনের শেষে গ্রাহকই ব্যবসায়ীর ভাগ্য নিয়ন্তক। তাঁকে যতটা তৃপ্তি দেওয়া যায়, ততই ব্যবসায়ে লক্ষ্মীলাভের পথ সুগম হয়। খাওয়ার সময়ে ঘেমেনেয়ে একশা হওয়ার যুগ বহুকাল হল পিছনে ফেলে এসেছেন খাইয়েরা। ঠান্ডাঘরে বসে ধোঁয়াওঠা ভোজ্যের রসাস্বাদনে তাঁরা এখন অভ্যস্ত। সুখের কথা, কিছু কিছু জায়গা এ বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু যাঁরা এখনও গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে সুখের খোয়ারিতে মগ্ন, তাঁদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলেই মনে করি।
চতুর্থত, নব্য গ্রাহক টানার উদ্দেশে বেশ কিছু পাইস হোটেলই এখন খাদ্যতালিকায় চিনা বা মোগলাই পদ অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়াসী। আমার মতে, এই হঠকারিতা না করে বরং সাবেক রেসিপি কী করে আরও স্বাদু করে তোলা যায়, খাবার পরিবেশনে হওয়া যায় আরও একটু যত্নবান, পরিবেশনকারীর পরিচ্ছদ করে তোলা যায় একটু পরিষ্কার-পরিপাটি, মাটিতে বসে আহারের ব্যবস্থা আরও পরিচ্ছন্ন ও রুচিসম্মত আঙ্গিকে সাজানো যায়, ময়লা টেবিল-চেয়ার মেরামত করে হাল ফেরানো যায়, সেগুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। পাশাপাশি, নিয়ম করে প্রতি রাতে হোটেল ধুয়েমুছে সাফসুতরো করায় আরও একটু বেশি সময় খরচ করা হোক, নোনাধরা ঘরের দেওয়াল সারিয়ে তাতে পড়ুক দু’এক পোঁচ ডিসটেম্পারের ছোপ আর আর্থিক লেনদেনে যুক্ত হোক অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা। মনে রাখা দরকার, এই সব রসনাঠেকে নিত্য যাতায়াতকারীদের দৃষ্টিও কিন্তু কালের নিয়মে পালটেছে।
বাঁধা-খদ্দের ধরে রাখতে চাইলেও এই সব রদবদল অত্যন্ত জরুরি।
কোথায় কোন খাবার খ্যাতিলাভ করেছে
১. জগন্মাতা ভোজনালয়ের বয়সের গাছ-পাথর না থাকা দোকানে কড়িবর্গাওয়ালা উঁচু সিলিংয়ের নীচে সিমেন্টের লাল মেঝের উপর আসন পেতে বসার ব্যবস্থা, থালার উপর সদ্য ধুয়ে আনা কলাপাতার কোণে লেবুর ফালি, পেঁয়াজের টুকরো, কাঁচা লঙ্কা আর এক চিমটে নুন পুরনো কালের কথা মনে পড়িয়ে দিতে বাধ্য। মাটিতে পাত পেড়ে খাওয়ায় যাঁদের অসুবিধে, তাঁদের জন্য পাশের ঘরে টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থাও আছে। সাইনবোর্ডে বাংলা ও ইংরেজি অক্ষরের নীচে ওড়িয়া হরফ বুঝিয়ে দেয় উৎকল মালিকানার সংযোগ। এখানকার প্রতিটি রান্নায় ওড়িয়া স্বাদ পরম্পরার স্বাদু স্বাক্ষর থাকা তাই স্বাভাবিক। কালে কালে খাদ্যতালিকার বহর বেড়েছে বটে, তবে পাতলা মুসুর ডাল, ঝিরঝিরে আলুভাজা, মৌরলা মাছের চচ্চড়ি, ছোট ভেটকির সর্ষেবাটা ঝাল আর সিগনেচার ডিশ ‘কচি পাঁঠার দিলদরিয়া ঝোল’ চেখে না দেখলে ঘোরতর অন্যায় হবে। আরও পাওয়া যায় গুরজাওলি, ট্যাংরা, কই, তেলাপিয়া, পমফ্রেট, এমনকি, কাঁকড়ার ঝালও। অবশ্যই বাদ পড়েনি চিংড়ির মালাইকারিও। যদিও স্বাদের নিক্তিতে তাকে সেরার শিরোপা দেওয়া বাড়াবাড়ি হবে।
২. পোস্তবাটা দেওয়া রুইয়ের ঝোল একাধিক পাইস হোটেলে পাওয়া গেলেও আমার মতে সেরা রান্নাটা রাঁধতেন রাজাবাজার মোড় ছাড়িয়ে উত্তরমুখী ফুটপাথ ধরে খানিক এগিয়ে ‘অতিথি’ হোটেলের রাঁধিয়েরা। সে পদের স্বাদমাহাত্ম্য এমনই যে, মাছের খণ্ড সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র হাতার পর হাতা ঝোল দিয়ে ভাত মেখেই আহ্লাদে আটখানা হতেন ভোজনরসিকেরা। কিন্তু মহার্ঘ্য পোস্তের গগনস্পর্শী দামের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরেই নাকি অমন অসামান্য পদটি মেনু থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জহরতের সন্ধানে অকুস্থলে পৌঁছে অন্তত এমনই শুনেছি পরিবেশনকারীর মুখে। সান্ত্বনা হিসাবে তাঁর পরামর্শ শিরোধার্য করে ভাপা পোনা চেখে মুগ্ধ হলেও আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল। অতিথির খাদ্যতালিকায় মাছের ছড়াছড়ি। পছন্দমাফিক বেছে নেওয়া যায় রুই সর্ষে, দই পোনা বা রুই মাছের কালিয়া। এ ছাড়াও মেলে ট্যাংরা, পার্শে, পাবদা আর মৌরলার ঝাল। নিরামিষ পদও এখানে সমান মুখরোচক, যার মধ্যে চালকুমড়ো দিয়ে মুগডালের স্বাদ ভোলার নয়। এখানে ওল চিংড়ির ঘণ্ট না খেলেও আফসোস থেকে যাবে বহুকাল।
৩. কলকাত্তাইয়া পাইস হোটেলের মধ্যে মোস্ট গ্ল্যামারাস অবশ্যই মধ্য কলকাতার রানি রাসমণি রোডে সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম। প্রায় সাত দশক ধরে স্বাদ ও খাদ্যমানে অসাধারণ ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই এঁদের সাফল্যের চাবিকাঠি। এই ভোজনশালার তারিফদারের লিস্টিতে কত যে গুণীজন রয়েছেন, তার হিসাব রাখা কঠিন। চিরাচরিত ভাতের হোটেলের পরিচিত পদাবলীর মাঝে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা এঁরা বরাবরই করে চলেছেন। উদাহরণ হিসাবে স্রেফ চিংড়ির কথাই ধরা যাক। সমগোত্রীয় রসনাঠেকে চিংড়ি বলতেই গলদার মালাইকারি এবং অনুপাত ও আধিক্যের জেরে প্রায়ই তার স্বাদ-বর্ণ-গন্ধে খাইয়ের বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হওয়ার জোগাড় হয়। গতানুগতিকতায় গা না ভাসিয়ে তাই সিদ্ধেশ্বরীর টেবিলে দেখা মেলে ডুমো করে সব্জি ফেলা ছোট চিংড়ির গা-মাখা ঝালের। ছিটেফোঁটা হরকত আপাত সাধারণ সেই রান্নায় মেলে না, কিন্তু স্বাদের গুণে অনায়াসে তা দিয়ে এক থালা ভাত খেয়ে ফেলা যায়। মরসুমে ইলিশের বিভিন্ন পদ পরখ করতে গেলেও অব্যর্থ ঠিকানা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য আবার কাঁচকলা-পটল-আলু দেওয়া রুইয়ের কবিরাজি ঝোলও এখানে পাওয়া যায়। আগেই বলে রাখা ভাল, নিতান্ত রুগীর পথ্য ভেবে নাক সিঁটকালে বিলকুল ঠকতে হবে। কারণ, এই আপাত-নিরীহ ঝোলের স্বাদ এক বার যিনি চেখেছেন, তাঁকে আবারও কড়া নাড়তে হবে জানবাজারের এই ঠিকানায়।
৪. পাইস হোটেলের পাঁচালিতে আর এক স্বনামধন্য সদস্য খিদিরপুরের ইয়ং বেঙ্গল হোটেল। ফ্যান্সি মার্কেট যাওয়ার পথে কার্ল মার্ক্স সরণির উপর একশো ছুঁই ছুঁই ভোজনশালার অন্দরসজ্জা থেকে রান্নার পদ্ধতি এবং পদসমাহারের খুঁটিনাটিতে সাবেকিয়ানার স্বাক্ষর এখানে প্রকট। অন্যান্য পাইস হোটেলের সঙ্গে মিল বলতে, বাটা মশলায় রান্না আর কলাপাতায় পরিবেশনের রীতি। বাকি সব কিছুতেই ব্যতিক্রমী ঘরানা সুস্পষ্ট। ইয়ং বেঙ্গলের রান্না মানেই সহজপাচ্য, দীর্ঘ চলার পথে সেই সুনাম ধরে রাখতে সফল এই হোটেল। নিরামিষ পদের এত বৈচিত্রও অন্যান্য ভাতের হোটেলে চোখে পড়ে না। তালিকায় রয়েছে মোচার কোফতা, কাঁচকলার কোফতা, বিউলির ডালের সঙ্গে আলুপোস্ত বা উচ্ছে ভাজা, কচু শাক, ফুলকপির রোস্ট, ডালবড়ার ঝালের মতো হরেক আটপৌরে পদ। আবার শীতে মুগডালে কয়েক কিসিমের আনাজ ফেলে অভূতপূর্ব স্বাদের ‘পঞ্চরত্ন’ সৃষ্টি করে রসিকজনের চিত্তহরণ করতেও সমান দক্ষ ইয়ং বেঙ্গল। তবে আমিষপ্রেমীদেরও হতাশ হওয়ার কথা নয়। কারণ, এ হোটেলের মেনুতে রয়েছে মোচা চিংড়ি ঘণ্ট, মাছের মাথা দিয়ে রাঁধা বাঁধাকপির ঘণ্ট, মাছের ডিমের বড়ার ঝালের মতো সাবেক সব পদ। রয়েছে পমফ্রেট ও ট্যাংরার ঝাল, কাতলার কালিয়া, চিংড়ির মালাইকারি এবং অবশ্যই ভাপা ইলিশের আয়োজন। মাংসাশীরা তৃপ্ত হতে পারেন চিকেন ও মটন কারিতে।
৫. দক্ষিণ কলকাতায় প্রাচীনতম পাইস হোটেল রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের তরুণ নিকেতন। শতবর্ষ পেরোনো এই ভোজনশালায় অতীতে মাটিতে বসিয়ে খাওয়ানোর রেওয়াজ থাকলেও, বেশ কয়েক দশক আগে তা লুপ্ত হয়েছে। এখন সেখানে টেবিল-চেয়ারে বসার ব্যবস্থা আর স্টেনলেস স্টিলের থালা-বাটিতে খাবার পরিবেশনের প্রথা চালু। বুঝতেই পারছেন, পরিবেশনে বদল কী ভাবে আনছে সাবেক পাইস হোটেলও। এই হোটেলে বাঁধাধরা থালি সিস্টেম অমিল। প্রতিটি পদের জন্য তো বটেই, কলাপাতা ও মাটির ভাঁড়ে খানাপিনার বাসনা চরিতার্থ করতেও মূল্য ধার্য করা হয় এই ভাতের হোটেলে। তবে অন্য একটি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। আমিষ ছাড়া কোনও পদেই পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করা হয় না তরুণ নিকেতনে। মোট ন’রকম মাছের ভ্যারাইটি ছাড়াও চিংড়ির মালাইকারি এখানকার বিখ্যাত। তবে সেরা রান্নার তালিকায় যে দু’টি পদ বাদ না দিলেই নয়, তা হল কচু চিংড়ি ও কচুপাতা চিংড়ি। ইদানীং শেষোক্ত পদটি বহু ভোজনশালায় আকছার পাওয়া গেলেও, শতক পার করে দেওয়া প্রপিতামহ পাইস হোটেলে এই পদটি পরখ না করলে অধর্ম হবে।
কোন খাবারের এখন গড়ে কত দাম
যুগের নিয়মে বাজারের অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাইস হোটেলেও মাগ্গি-গন্ডার দিন শেষ হয়েছে। ভোজনশালার পরিবেশ ও খাদ্যবৈচিত্রে বিশেষ রদবদল না হলেও লাফিয়ে দাম বেড়েছে খাবারদাবারের। তবু বাঙালি রান্নার বাজারচলতি রেস্তরাঁর তুলনায় এখনও কিছুটা সস্তায় পেট ভরানোর ব্যবস্থা টিকে রয়েছে শহরের পুরনো ভাতের হোটেলগুলোয়। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি ঠিকানায় ঘুরে খাবারের দামের মোটামুটি আন্দাজ পাওয়া গেল। যেমন শুক্তো, ডাল, এক রকম ভাজা, দুই রকম তরকারি এবং চাটনির নিরামিষ থালা নিলে খরচ পড়বে হোটেল ব্যতিরেকে মোটামুটি ৭৫ থেকে ১৮৫ টাকার মধ্যে। তার সঙ্গে পছন্দ অনুযায়ী মাছের পদ নিলে অতিরিক্ত খরচ পড়বে। রুই, কাতলা, ভেটকি, পারশে, চিতল, পাবদা, চারাপোনা থেকে শুরু করে মরশুমি ইলিশের প্লেটপিছু দাম পড়বে ৯০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। মাপ ও প্রজাতি অনুযায়ী চিংড়ি এবং কাঁকড়ার পদের দাম ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া মুরগির ঝোল ও পাঁঠার কষা মাংসের রেট যথাক্রমে ১২৫ টাকা এবং ১৭৫-১৯০ টাকার আশেপাশে। অতিরিক্ত ভাতের জন্য প্রায় সব হোটেলেই ৫-১০ টাকা দিতে হবে। এ বাদে কলাপাতা ও মাটির ভাঁড়ে পাত সাজানোর বাসনা হলে এবং থালায় পাতিলেবুর ফালি যোগ করলে আরও ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি খরচ গুনতে হবে। সোজা কথায়, কলকাতার পাইস হোটেলের বর্তমান রেট অনুসারে ২০০ টাকার মধ্যে পেট ভরানো সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার এবং ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে আমিষ মিল পাওয়া যায়। যে কোনও শৌখিন রেস্তরাঁয় পরিবেশিত বাঙালি রসনার তুলনায় তা কম হলেও, পরিষেবার খরচ যে সে ভাবে তুলতে হয় না পাইস হোটেল কর্তৃপক্ষকে তা অবশ্য বলার অপেক্ষা থাকে না । তবে ‘জলের দর’ বলার অবকাশ আজ আর নেই মোটেই; ‘পাইস হোটেল’ আর ‘পাই’- এ নয়, পরিষ্কার টাকার হোটেলই হয়ে গিয়েছে স্বাধীন ভারতের উত্তর-স্বাধীনতা যুগে।
আলোর বাইরে যারা
প্রচারের আলোকবৃত্তের আড়ালে এমনই আরও কয়েকটি ভাতের হোটেল এখনও ভোজনরসিক মহলে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সফল। যেমন মানিকতলা বাজারে ছাদের উপর নাম-না-জানা রসনাক্ষেত্রটি। টাটকা মাছের এমন বৈচিত্র কলকাতায় আর কোনও হোটেলে পেয়েছি বলে মনে পড়ছে না। অথবা ধরা যাক শ্যামবাজারে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উলটো ফুটপাথের উপরে তারা মা ইটিং হাউসের কথা। কম খরচে এখানেও বেশ কিছু মাছের পদ সহজলভ্য। এখানে পরখ করতে হবে টাটকা বাটা মাছ ভাজা আর সাবধানীদের জন্য আলু আর পটল বা ঝিঙে দেওয়া চারাপোনার সুস্বাদু পাতলা ঝোল। কলকাতা হাই কোর্ট পাড়াতেও একটি ভাতের হোটেল তুমুল জনপ্রিয় তার মাছ ও পাঁঠার মাংসের ঝোলের কারণে। কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল ও মহল, কলেজ স্কোয়্যারের কাছে আয়েশ হোটেল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের জগন্নাথ ভোজনালয়, ক্যামাক স্ট্রিটের অরুণ হোটেল, ঢাকুরিয়া বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া রায় হোটেল, গড়িয়াহাট বাজারের আদর্শ হিন্দু হোটেল ছাড়াও তালিকায় রাখা যায় এদের তুলনায় বয়েসে নবীন দক্ষিণ কলকাতার নেতাজিনগরের ভূপেন কেবিনকেও।
কলকাতায় প্রথম কোথায় কবে পাইস হোটেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও তথ্য জানা নেই। তবে বিডন স্ট্রিটে একদা চালু ছিল পীরুর পাইস হোটেল। শোনা যায়, সেখানেই নাকি ১৮৮৬ সালে বন্ধুদের খাবার সংক্রান্ত গোঁড়ামি ভেঙেছিলেন নবীন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু অতিথিদের জন্য পীরু কী কী পদসম্ভার সাজাতেন, সে খবর জানার জো নেই। তবে বৃত্তান্ত থেকে ধারণা করা যায় যে, হোটেলে কুলীন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের খাদ্যাভাসে অচল কয়েকটি খাদ্য উপাদান অবশ্যই মজুত ছিল, নচেৎ নির্বোধ হিঁদুয়ানির মূলে কুঠারাঘাত করতে এই ঠিকানা বেছে নিতেন না নরেন্দ্রনাথ।
মুসলমান পাইস হোটেল
ইতিহাস বলছে, কলকাতার রসনা মানচিত্রে মার্কামারা হিন্দু হোটেলগুলির পাশাপাশি আদিকাল থেকেই মুসলিম ঘরানার বেশ কিছু সস্তা ভাতের হোটেল এখনও বহাল তবিয়তে চালু রয়েছে। মনে রাখতে হবে, গ্রামবাংলা থেকে কেবলমাত্র হিন্দুরা নয়, মুসলিম তরুণরাও পেশার স্বার্থে তিলোত্তমায় থিতু হয়েছিলেন উনিশ শতকের মাঝামাঝি বা তারও আগে থেকে। তাঁদের জন্য পকেটদুরস্ত নিত্য খোরাকির ব্যবস্থা করতেও শহরের ইতিউতি মাথা তুলেছিল একগুচ্ছ পাইস হোটেল।
রাজাবাজার, চিৎপুর ও তপসিয়া অঞ্চলে কাজের সুবাদে বেশ কিছু দিন যাতায়াতের অভিজ্ঞতায় তাদেরই কয়েকটিতে পাত পাড়ার সৌভাগ্য অধমের হয়েছে। হিন্দু হোটেলগুলির সঙ্গে এ সব ঠিকানায় খাদ্যতালিকায় তফাত থাকলেও ভাত-ডালের বন্দোবস্ত একই রকম। আর্থিক স্বাচ্ছল্য বুঝে মাছের বদলে সেখানে গোমাংসের আধিক্যই স্বাভাবিক। খরচা করলে অবশ্য খাসির বন্দোবস্তও রয়েছে। কালক্রমে হেঁশেলে ঢুকেছে মুরগিও। মধ্য কলকাতার চাঁদনি চকের কাছে এমনই একটি অনামী একচিলতে আস্তানায় বেশ কয়েক বার চেখে দেখেছি গরম ভাতের সঙ্গে সুস্বাদু বিফ ভুনা। মাঝারি মাপের দু’টুকরো মাংসখণ্ডের সঙ্গে কালচে বাদামি ঝোলে ডুবে থাকা ঢাউস আলুর টুকরোয় ম্রিয়মাণ নিয়ন আলো ঠিকরে পড়তে দেখে ঘোর লেগে গিয়েছিল পয়লা দর্শনে। স্বীকার করতে বাধা নেই, ঝোলমাখা ভাতের গ্রাস মুখে পুরে অনাস্বাদিত রসনাঘাতে শিহরিত হয়েছে স্বাদচৈতন্য। আবার রাজাবাজারের এমনই এক অজানা ঠিকানায় এক বার চমকে দিয়েছিল কাশ্মীরি রসনার অন্যতম সেরা সৃষ্টি, গুস্তাবার ক্ষুদ্র সংস্করণ। ভাতের সঙ্গে পাতে পড়েছিল ভেড়া নয়, বাজারচলতি খাসির দেহাংশ যত্ন নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ বেটে তোলা একজোড়া মখমলি নরম মাংসগোলক। অপূর্ব স্বাদু আগুনরাঙা থকথকে গ্রেভিতে স্নান করে তাদের যে অতুলনীয় স্বাদবাহার খুলেছিল, দশক পার করেও স্মৃতির হাতবাক্সে তা চিরউজ্জ্বল রয়েছে।
তবে অধুনা ফের জনপ্রিয়তার আলোকবৃত্তে ফিরে আসা সাবেক পাইস হোটেল যাঁদের জন্য আপন স্থানাধিকার করতে সফল হল, সেখানেও পা হড়কানোর আশঙ্কা রয়েছে। সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তা কুড়োতে গিয়ে অতিশয়োক্তির তোড়ে হামেশাই শিব গড়তে গিয়ে বাঁদর গড়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি, খাদ্যবিলাসীদের রুচি পালটানোর ফলে খাবারের স্বাদ ও পরিবেশন পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের আবহ, পরিচ্ছন্নতা ও কর্মীদের আচরণ সম্পর্কেও সচেতন হয়েছেন হাল আমলের গ্রাহকবৃন্দ। সব দিক সামাল দিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয় হাসিল করতে পারবে কি বাঙালির রসনা ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক পাইস হোটেল? শুভাকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও সংশয় রয়েই যায়।
(সব ছবি: অর্ণব দত্ত।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy