ওজন বশে রাখতে কার্যকরী প্রোটিন ডায়েটও। ছবি:শাটারস্টক
ওজন কমাবে মাছ–মাংস–ডিম, শুনে অবাক লাগারই কথা৷ কারণ, এখনও অনেকেই ভাবেন ওজন কমাতে নিরামিষের বিকল্প নেই৷ সে ভাবনা একেবারে বেঠিকও বলা যায় না৷ কিন্তু যদি অল্প তেলে রান্না করা পর্যাপ্ত শাক–সব্জি–ডাল, কম মিষ্টি ফল ও অল্প ব্রাউন রাইস বা ব্রাউন ব্রেড খাওয়া হয়, হাই ক্যালোরি খাবার বাদ যায়, ওজন কমবে। তবে তার সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন না থাকলে তা কতটা স্বাস্থ্যকর হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷
শরীরের অভ্যন্তরীণ কাজ চালাতে প্রোটিনের ভূমিকা আছে৷ সে খিদে কমায়, পেট ভরা রাখে, বাড়ায় শরীরে ক্যালোরি খরচের হার, পেশির গঠন সুদৃঢ় করতেও তার জুড়ি নেই৷
না, তার মানে এই নয় যে আমিষ ছাড়া প্রোটিন হয় না৷ উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও আছে৷ যেমন বিন্স, ডাল, বীজ, বাদাম, রাজমা, ছোলা, দুধ, দই, পনির, ছানা৷ তবে তার মধ্যে অনেকগুলিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়৷ ফলে সে সব খেয়ে চাহিদা পূরণ করতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ একটার সঙ্গে আর একটা খেয়ে হিসেব সমান সমান করতে হয়৷ না হলে ওজন সে ভাবে না-ও কমতে পারে, নির্দিষ্ট ক্যালোরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার চেষ্টা করলে বাড়াবাড়ি খিদে পেতে পারে, হতে পারে অপুষ্টি৷ কাজেই হুট করে কিছু করার আগে প্রোটিন কী করতে পারে না পারে তা এক বার বুঝে নিন৷
ঠিকঠাক ডায়েট ফলো করলে প্রোটিনেও ওজন কমবে। ছবি: শাটারস্টক
প্রোটিনের ভূমিকা
(১) প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে পিওয়াইওয়াই এবং জিএলপি–১ নামে দু’টি হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে৷ তাদের প্রভাবে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে৷ আসে তৃপ্তি৷ আবার ঘ্রেলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় বলে কথায় কথায় খিদে পায় না৷ কম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়৷ ১০ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে অভ্যস্ত পূর্ণবয়স্ক মানুষ যদি ৩০ শতাংশ প্রোটিন খেতে শুরু করেন, পেট ভরে খেয়েও দিনে মোটামুটি ৪৪০ ক্যালোরির ঘাটতি হতে পারে৷
(২) প্রোটিন হজমের সময় মেটাবলিক রেট প্রায় ২০–৩৫ শতাংশ বাড়ে, কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট হজমের সময় বাড়ে ৫–১৫ শতাংশ৷ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যাঁরা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে অভ্যস্ত, খাওয়ার পর বহুক্ষণ পর্যন্ত বেশ ভাল পরিমাণে ক্যালোরি খরচ হতে থাকে তাঁদের৷ মেটাবলিক রেট হয়ে যেতে পারে প্রায় দ্বিগুণ৷
(৩) ৬৫ জন মোটা মহিলাকে ৬ মাস ধরে স্টাডি করে দেখা গেছে এঁদের মধ্যে যাঁরা হাই প্রোটিন ডায়েট খেয়েছেন তাঁদের প্রায় ৪৩ শতাংশ ফ্যাট কমেছে৷ ৩৫ শতাংশ মহিলার ওজন কমেছে কম করে ১০ কেজি৷
ভাবছেন, অন্য ভাবে খাবারের ক্যালোরি কমিয়ে ওজন কমাবেন? খিদে ম্যানেজ করতে পারলে করতে পারেন৷ তবে মনে রাখবেন, সাধারণ লো–ক্যালোরি খাবারে কিন্তু পেশির ক্ষয়ও হয়৷ ওজন কমার সেটাও একটা কারণ৷ হাই প্রোটিন ডায়েটে সে ভয় নেই৷
(৪) হাই প্রোটিন ডায়েট খাওয়ার পাশাপাশি ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে গঠিত হয় শক্তপোক্ত পেশি৷ ঠেকানো যায় বয়সজনিত পেশির ক্ষয়৷
কতটা প্রোটিন
ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক বা ডিআরআই–এর মতে প্রতি কেজি আদর্শ ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট৷ বহু বিশেষজ্ঞের মতে এটুকু খেলে শরীরে এর অভাব না হলেও বাড়তি উপকার পাওয়ার আশা কম৷ তাঁদের মতে, প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১.৩ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া জরুরি৷ আবার কম বয়সে যদি ওজন ও ফ্যাট কমিয়ে পেশি তৈরি করতে চান, খেতে হবে প্রতি কেজিতে ১.৬ গ্রামের হিসেবে৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যাঁরা ২.৪ গ্রামের হিসেবে প্রোটিন খান, তাঁদের তুলনায় যাঁরা ১.৬ গ্রাম খান, তাঁদের উপকার হয় বেশি৷ মোটামুটি হিসেবে খাবারের মোট ক্যালোরির ২০–৩০ শতাংশ আসা উচিত প্রোটিন থেকে৷ দিনের প্রতিটি খাবারের সঙ্গেই যেন পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকে৷
ভাল ও আরও ভাল প্রোটিন
প্রোটিন তৈরি হয় বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে৷ মোট ২২টি থাকে তাতে, তার মধ্যে ৯টির বিরাট গুরুত্ব, কারণ শরীরে তারা তৈরি হয় না, গ্রহণ করতে হয় খাবারের মাধ্যমে৷ এদের বলে এসেনসিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড৷ প্রোটিনের ভাল, কম ভাল, খুব ভাল ইত্যাদি নির্ভর করে তার মধ্যে ক–টা অ্যামিনো অ্যাসিড আছে তার উপর৷ যাতে সব ক’টা আছে সেই হল সবচেয়ে ভাল প্রোটিন৷ এর প্রধান উৎস আমিষ খাবার৷ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ৷
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যেমন, বিন্স, ডাল, মটর–রাজমা–ছোলা, সয়াবিন, বাদাম ও বিভিন্ন বীজে অনেকগুলি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে বিভিন্ন মাত্রায়৷ তাদের মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে গেলে খেতে হবে মিলিয়ে–মিশিয়ে৷ যেমন, বিন্স অন টোস্ট, সবজি মেশানো খিচুড়ি, ভাত–ডাল–সবজি ইত্যাদি৷
শুধু নিরামিষ নয়, ওজন কমাতে পারে প্রোটিনও। ছবি: শাটারস্টক
হাই প্রোটিন ডায়েট
বয়স, ওজন, অসুখ–বিসুখ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ডায়েট চার্ট বানাতে হবে৷ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন৷ বুঝে নিলে নিজেও পারবেন৷ কীভাবে করবেন দেখে নিন৷
(১) কেজিতে ওজন মেপে তার সঙ্গে ১.২–১.৬ গুণ করে দেখুন কত প্রোটিন দরকার আপনার৷ বেশি খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে প্রথম দিকে কম করে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়ান৷ খেয়াল রাখবেন প্রতিটি খাবারের সঙ্গেই যেন ২৫–৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকে৷
(২) ফুড ডায়েরি বানান৷ আপনি সচরাচর যে খাবার খেয়ে সুস্থ থাকেন তাতে প্রোটিন ও অন্যান্য উপকারি উপাদান কী মাত্রায় আছে তা দেখে নিন নির্দিষ্ট অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে৷ সারা দিনে কত ক্যালোরি খাচ্ছেন সেই হিসেবও এখান থেকে পেয়ে যাবেন৷ এবার অল্প–বিস্তর রদবদল করলেই দেখবেন পুষ্টি ও ক্যালোরির টার্গেটে পৌছে গিয়েছেন৷
(৩) ভাল জাতের প্রোটিন খাওয়ার চেষ্টা করুন৷ চেষ্টা করুন টাটকা মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও অন্যান্য প্রোটিন খেতে৷ সংরক্ষিত খাবার যথাসম্ভব কম খান৷ সসেজ, বেকন ইত্যাদিতে টাটকা মাংসের উপকার নেই৷
(৪) খাবার যাতে সুষম হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন৷ অর্থাৎ পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়ার পাশাপাশি উপকারি ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটও যেন মাপমতো থাকে৷
মেনু চার্ট
দিনে ১০০ গ্রাম প্রোটিনের হিসেবে কন্টিনেন্টাল খাবারের দুটি মেনু চার্ট দেওয়া হল৷ আপনার কতটা দরকার সেই বুঝে কম–বেশি করবেন৷
(১)
• ব্রেকফাস্ট: গোটা ডিম ৩টে, ১টা হোল হুইট টোস্ট, বড় একচামচ আমন্ড বাটার, ১টা নাশপাতি৷
• লাঞ্চ: টাটকা অ্যাভোক্যাডো ও কটেজ চিজ দিয়ে বানানো স্যালাড, ১টা কমলালেবু৷
• ডিনার: ১৭০ গ্রাম স্টেক, মিষ্টি আলু ও গ্রিল্ড জুকিনি৷
(২)
• ব্রেকফাস্ট: ১ চামচ প্রোটিন পাউডার, এক কাপ নারকোল দুধ ও স্ট্রবেরি দিয়ে বানানো স্মুদি৷
• লাঞ্চ: ১০০–১২০ গ্রাম ক্যান্ড স্যালমন, অলিভ অয়েলে সতে করা সবুজ শাকসব্জি, একটা আপেল৷
• ডিনার: ১০০–১২০ গ্রাম গ্রিল্ড চিকেন সঙ্গে কুইনোয়া ও ব্রাসেল স্প্রাউট৷
আরও পড়ুন : মেঘলা দিন বলে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা বড় ভুল
আরও পড়ুুন: শাড়ি পরিয়েই সেলেব্রিটি কলকাতার গৃহবধূ, পারিশ্রমিক লক্ষাধিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy