সদ্যোজাত এবং শিশুদের চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে প্রয়োজন চিকিৎসকদের সমষ্টিগত উদ্যোগ। সেই লক্ষ্যেই রবিবার নিউ টাউনে সদ্যোজাত ও শিশুরোগ চিকিৎসকদের নিয়ে ‘নিও পেডিকন’ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সদ্যোজাত এবং শিশুকে চিকিৎসা দিতে হবে যথাযথ পদ্ধতি মেনে। এবং পূর্ববর্তী তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যে ওষুধ কার্যকর, সেটি প্রয়োগ করাই বাঞ্ছনীয়। এটি শিশুকে সুস্থ করতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই আগামী দিনে গবেষণাতেও অত্যন্ত সহায়ক হবে। একই রকম ভাবে প্রয়োজন মতো আইনি ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে।’’
নিউ টাউনে তাঁদের এখনকার হাসপাতাল সংলগ্ন জায়গায় আরও একটি চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা চলছে বলে জানান সম্মেলনের আয়োজক, নেওটিয়া-ভাগীরথী হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, শিশুরোগ চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে কী ভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায়, সেই পথ খুঁজতেই রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিশুরোগ চিকিৎসকদের নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন। অনুষ্ঠানে স্নায়ুবিক বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি তুলে ধরেন চিকিৎসক সমীর হাসান দলওয়াই। আবার, শিশুদের ওজন এবং উচ্চতা মাপা হলেও রক্তচাপ মাপার চল তেমন নেই। সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় চিকিৎসক সুমন্ত্রকুমার রাউত বলেন, ‘‘সুস্থ শিশুর ক্ষেত্রে বছরে এক বার রক্তচাপ মাপলেই চলে। কিন্তু যার কোনও রকম সমস্যা আছে, তার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্তচাপ মাপা প্রয়োজন। না হলে রক্তচাপের সমস্যা যে রোগের কারণে, সেটি চিহ্নিত করা যাবে না।’’
সম্মেলনে শিশুদের ‘নেফ্রো-ইউরো-কেয়ার’ নিয়েও আলোচনা চলে। সুমন্ত্র জানাচ্ছেন, অনেক শিশুরই মাঝেমধ্যে প্রস্রাবে সংক্রমণ হয়। এমন ক্ষেত্রে শুধু উপসর্গ দেখে চিকিৎসা নয়, বরং সংক্রমণের কারণ খুঁজে বার করতে হবে। না হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এই চিকিৎসার জন্য নেফ্রোলজিস্ট এবং ইউরোলজিস্টদের সমন্বয়ের কথাও আলোচনায় উঠে আসে। আবার, ক্রিটিক্যাল কেয়ারে চিকিৎসাধীন মাইক্রোপ্লাজ়মা নিউমোনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস-সহ অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুদের শুশ্রূষায় কী পদ্ধতি মানা হচ্ছে, রোগীভিত্তিক আলোচনায় তা তুলে ধরেন চিকিৎসক মিহির সরকার-সহ অন্যেরা। মা ও সদ্যোজাতকে একসঙ্গে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা কতটা এবং তার নির্দিষ্ট সাফল্যের দিকটি আলোচনায় তুলে ধরেন নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)