Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
বর্ধমান মেডিক্যাল

বিভাগ বাড়লেও বাড়েনি নার্স-কর্মী, সঙ্কট

দিনে রোগী আনাগোনা গড়ে প্রায় ১৭০০। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিত্‌সার গাফিলতি নিয়ে অভাব অভিযোগও আকছার দেখা যায়। অথচ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার ভরসা এ হাসপাতালে রোগীদের দেখভালের জন্য নার্স রয়েছেন মাত্র ৪০০ জন। অন্যান্য কর্মী সংখ্যাও যথেষ্ট অপ্রতুল। ফলে এ নিয়েই কার্যত খুঁড়িয়ে চলছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

দিনে রোগী আনাগোনা গড়ে প্রায় ১৭০০। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিত্‌সার গাফিলতি নিয়ে অভাব অভিযোগও আকছার দেখা যায়। অথচ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার ভরসা এ হাসপাতালে রোগীদের দেখভালের জন্য নার্স রয়েছেন মাত্র ৪০০ জন। অন্যান্য কর্মী সংখ্যাও যথেষ্ট অপ্রতুল। ফলে এ নিয়েই কার্যত খুঁড়িয়ে চলছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

বর্ধমান তো বটেই, আশপাশের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, এমনকি ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকে রোগী আসে এ হাসপাতালে। হাসপাতালের দাবি, অপর্যাপ্ত কর্মী নিয়ে রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম দশা তাদের। ভিড়ের চাপে অনভিপ্রেত নানা ঘটনাও ঘটছে। অথচ বারবার কর্মী, পরিকাঠামোর উন্নয়নের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন জানিয়েও লাভ হচ্ছে না বলে তাদের দাবি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত সাত-আট বছর ধরে যে তিনশো শয্যা বেড়েছে তার অনুমোদন না মেলায় তার প্রেক্ষিতে কর্মী, নার্সের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, “আমাদের এই হাসপাতালে চিকিত্‌সকের সংখ্যা তেমন কম নয়। স্নাতকোত্তর স্তরে প্রচুর আসন বেড়েছে। ফলে আমরা প্রচুর জুনিয়র ডাক্তারদের পাচ্ছি। কিন্তু রোগীদের ঠিক মতো চিকিত্‌সা করতে হলে নার্স ও গ্রুপ ডি কর্মীদের যথেষ্ট সংখ্যায় উপস্থিতিও দরকার। তার প্রচণ্ড অভাব রয়েছে আমাদের। স্বাস্থ্য ভবনকে বারবার ওই বকেয়া কর্মী চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা বলতে পারব না।”

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা হাজারের উপর। তাতে প্রতিদিনই প্রায় ১৭০০-র মতো রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু ওই রোগীদের দেখভালের জন্য যে হাজারের উপর নার্স প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৪০০-র মতো নার্স রয়েছে। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, “প্রায় তিনশো শয্যা এখনও অনুমোদিত হয়নি। ফলে তার সাপেক্ষে নার্সিং স্টাফ, জিডিএ মিলছে না। এতে যাঁরা বহাল রয়েছেন তাঁদের উপরে প্রচণ্ড চাপ বাড়ছে। চাপের মুখে কাজ করতে গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভবনাও থাকছে। ফলে চিকিত্‌সা গাফিলতির অভিযোগ বাড়ছে। বাড়ছে রোগীর আত্মীয়দের বিক্ষোভ, কর্মীদের উপরে আক্রমণের সংখ্যাও।”

কিন্তু অনুমোদন মিলছে না কেন? ওই আধিকারিকের কথায়, “নতুন করে অনেক বিভাগ খোলা হচ্ছে। গাইনি ও পেড্রিয়াটিক বিভাগের মতো কিছু বিভাগ প্রসারিত হয়েছে। ফলে বছরখানেক আগে থেকেই নতুন শয্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই শয্যাগুলি এখনও অনুমোদিত হয়নি। ফলে উপযুক্ত সংখ্যক নার্স বা সেবিকা মিলছে না।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি ওটির জন্য তিন শিফটে ৪১০জন কর্মী রয়েছেন। সেখানে দরকার আরও অন্তত ১০০ জন। জিডিএ কর্মীর ২৩৯টি পদ শূন্য। সুইপারের ২০টি পদ শূন্য। আট গাড়ি চালকের জায়গায় রয়েছেন ৩ জন। হাসপাতালের নানা পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় ৩০ জন কারিগরী কর্মীর মধ্যে ২৩ জনই নেই। রেডিওলজি বিভাগে ৪৩ জন কর্মী দরকার। তার মধ্যে ২০ জনই নেই। হাসপাতালের নিরপত্তা দেখতে দরকার অন্তত ১৫০ কর্মী। তার জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন। তবে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসারের সংখ্যা মোটামুটি সন্তোষজনক। কারণ মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইণ্ডিয়ার নিয়মে ওই সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগের কম হলে হাসপাতালের অনুমোদনই বাতিল হয়ে যায়। তাই কোনও মতে চুক্তিভিত্তিক মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করে অবস্থা সামলানো হচ্ছে। তবে বেতন কমের অজুহাতে ওই মেডিক্যাল অফিসারদের অনেকেই আর চাকরিতে থাকতে চাইছেন না বলেও হাসপাতালের দাবি। হাসপাতালের সুপার তথা মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ উত্‌পলকুমার দাঁ বলেন, “আমাদের কর্মীর সংখ্যা যথেষ্ট কম হলেও তাদের নিয়েই আপাতত কাজ চালাতে হবে।”

তবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিষদীয় সচিব তথা রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজির আশ্বাস, “হেলথ্‌ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার চিকিত্‌সক, নার্স, প্যারামেডিক্যাল স্টাফ ইত্যাদি নিযুক্ত হবেন। সেখানে থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মীর ঘাটতি যতটা সম্ভব মেটানো হবে।” ইতিমধ্যে বর্ধমানে অতিরিক্ত চিকিত্‌সক পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy