Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গি মানল না পুরসভা, তবু মৃতের পাড়ায় মশার ধোঁয়া

হাসপাতাল বলছে, রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ছিল। সঙ্গে ছিল অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। মঙ্গলবার রাতে রোগীর মৃত্যুর পরে ডেথ সার্টিফিকেটে অবশ্য ডেঙ্গি থাকার কথা উল্লেখ করেনি হাসপাতাল। তারা শুধু লিখেছে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। আর ওই ডেথ সার্টিফিকেটের উপরে ভিত্তি করে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এনআরএসে মৃত বেলেঘাটার ২২ বছরের রাজীব দাসের ডেঙ্গি হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

হাসপাতাল বলছে, রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ছিল। সঙ্গে ছিল অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। মঙ্গলবার রাতে রোগীর মৃত্যুর পরে ডেথ সার্টিফিকেটে অবশ্য ডেঙ্গি থাকার কথা উল্লেখ করেনি হাসপাতাল। তারা শুধু লিখেছে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। আর ওই ডেথ সার্টিফিকেটের উপরে ভিত্তি করে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এনআরএসে মৃত বেলেঘাটার ২২ বছরের রাজীব দাসের ডেঙ্গি হয়নি।

ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ১৪ বছরের পাকো ওঁরাওয়ের ক্ষেত্রেও। তাঁর শরীরেও ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। পাশাপাশি ওই কিশোর নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিল। হাসপাতাল অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছিল নিউমোনিয়া। সে ক্ষেত্রেও পুরসভা মানতেই চায়নি পাকোর ডেঙ্গির সংক্রমণ ছিল। পুরসভার ব্যাখ্যা, ওই কিশোরের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু থাকলেও পরিমাণ খুব কম। এতটাই কম যে, তাতে কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয় না।

বেলেঘাটার বাসিন্দা রাজীব গত ২১ অগস্ট এনআরএসে ভর্তি হন। অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়ার রোগী ২২ বছরের রাজীবের শারীরিক অবস্থা গোড়া থেকেই সঙ্কটজনক ছিল বলে জানান চিকিৎসকেরা। ২৬ অগস্ট তাঁর রক্ত পরীক্ষা হয়। এনআরএসের সুপার দেবাশিস গুহ বলেন, “অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়ার জন্যই রাজীবের ব্লাড কাউন্ট অত্যন্ত কমে গিয়েছিল। মৃত্যুর কারণ সেটাই। ডেঙ্গির জন্য মৃত্যু হয়নি। তাই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি লিখিনি।”

পুরসভা মুখে ডেঙ্গির বিষয়টি যতই অস্বীকার করুক না কেন, পুরকর্মীরা কিন্তু ২৭ অগস্টই বেলেঘাটার সরকার বাগানে রাজীব দাসের বাড়ির আশপাশে গিয়ে মশা মারার ধোঁয়া ছড়িয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেই রাজীবের পরিবার জানতে পারে যে তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাড়ির লোককে কিছু জানানোর আগেই পুরসভাকে খবরটা দেওয়া হয়েছিল। মৃতের দাদা খোকা দাসের কথায়, “পুরসভা এত দিনে জেগে উঠেছে, সেটা ভাল কথা। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে তারা আগে থেকে এতটা উদ্যোগী হলে হয়তো ভাইকে অকালে মরতে হত না।”

এত সবের পরেও বুধবার পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য অতীন ঘোষের মন্তব্য, “রাজীবের ডেঙ্গি হয়নি।” তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “এখানে কোথাও ডেঙ্গির কথা লেখা নেই।” কিন্তু পুরসভা ২৭ অগস্ট রাজীবের বাড়ি ও তার আশপাশে গিয়ে কেন মশা মারার ধোঁয়া ছড়িয়েছিল? কেনই বা তাঁর পরিবারকে গিয়ে ডেঙ্গির কথা জানিয়েছিল? পুর-কর্তৃপক্ষ তার ব্যাখ্যা দেননি।

জীবাণুবিজ্ঞানীদের অনেকেরই আশঙ্কা, ডেঙ্গি নিয়ে পুরসভার এই তথ্য গোপন করার প্রবণতা পরবর্তীকালে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, কলকাতায় ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ। কোনও মানুষের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু থাকলে ওই মশা তাঁর শরীর থেকে জীবাণুটি নিয়ে অন্য মানুষের দেহে সংক্রামিত করে। অর্থাৎ যাঁর দেহে ডেঙ্গির জীবাণু থাকে, তিনিই এই রোগ সংক্রমণের পক্ষে বিপজ্জনক। কোনও রোগীর শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিললেই পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের উচিত সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের অভিযান চালানো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করা। এটাই রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গোড়ার কথা বলে মন্তব্য করেছেন ওই জীবাণু বিজ্ঞানীরা।

এক জীবাণু বিজ্ঞানীর কথায়, “কোনও ব্যক্তির আইজিএম পজিটিভ হলে সেটা অবশ্যই ডেঙ্গি। রোগীর অন্য কোনও সমস্যা থাকতেই পারে, কিন্তু সেগুলোকে বড় করে দেখিয়ে ডেঙ্গিকে ছোট করলে সাধারণ মানুষের বিপদ বাড়বে বই কমবে না।” রাজ্যের কোথায় কত মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, কত জন মারা যাচ্ছেন সেই পরিসংখ্যান সঠিক ভাবে না পেলে প্রতিরোধ কর্মসূচিও যথাযথ ভাবে করা যাবে না বলে অভিমত জীবাণু বিজ্ঞানীদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE