মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসন্ন ভারত সফরের বিরুদ্ধে ১৩টি বাম দলের মিছিল। শনিবার ধর্মতলা এলাকায়। ছবি: দেবাশিস রায়।
দিল্লিতে তাঁরা কুশপুতুল পোড়ালেন। আর কলকাতায় তাঁদের মিছিল থেকে ঘোষণা করা হল, বারাক ওবামা ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন থেকে রওনা দিয়ে দিল্লিতে পৌঁছনোর আগেই তাঁর এই সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে ফেললেন বামেরা!
চার বছর আগে ওবামা যখন এ দেশে এসেছিলেন, সে সময় তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত নৈশভোজে হাজির ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। এ বার কিন্তু যন্তরমন্তরে দাঁড়িয়ে ওবামার মুণ্ডপাত করলেন বামেরা। জামা-প্যান্টের সঙ্গে যত্ন করে টাই পরানো কুশপুতুলে আগুন দেওয়ার পরে প্রকাশ কারাটের সদর্প ঘোষণা, ওবামার সঙ্গে অন্নগ্রহণও করবেন না তাঁরা।
কলকাতায় এ দিন ধর্মতলার লেনিন মূর্তি থেকে মিছিল করে ১৩টি বাম দল। মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের কিছু আগে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। ওই সমাবেশ থেকেই ওবামাকে ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’ ঘোষণা করা হয়। সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত বসিরহাটে বলেন, “ভোটের আগে মোদী বলেছিলেন, ক্ষমতায় এসে কালো টাকা উদ্ধার করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি তো রাখলেনই না, উল্টে ওবামাকে ডেকে বিদেশিদের হাতে সর্বস্ব তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।”
এই জাতীয় অভিযোগ বা বিক্ষোভে ওবামার কী এল গেল, কিংবা নরেন্দ্র মোদীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল কি না, সে খবর দিতে পারলেন না কেউই। তবে বিক্ষোভ-মিছিল সেরে সিপিএমের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্ররা ফিরে গেলেন মুখে সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে, বেশ জোরালো প্রতিবাদ করা গিয়েছে। যদিও মিছিল-ফেরত মানুষজনের মুখেই প্রশ্ন উঠে এল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে যখন পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে, তখন ওবামার সফরের প্রতিবাদ করে কী লাভ? ওবামার সংসর্গ এড়ালে কি বামেদের সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গবাসীর ধারণায় আদৌ কোনও বদল ঘটবে?
চার বাম দলের বিক্ষোভ বা সভা হলে বহু দিন ধরেই যন্তরমন্তরে বিশেষ ভিড় হয় না। এ বার তাই বাধ্য হয়েই সিপিআই(এম-এল) এবং এসইউসি-র হাত ধরেছে সিপিএম। সিপিআই(এম-এল)-এর ছাত্র সংগঠন আইসা-র মজবুত সংগঠন রয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের সমর্থকদের জন্যই আজ অনেক দিন পরে দিল্লির মান্ডি হাউস থেকে যন্তরমন্তর পর্যন্ত মিছিলে কিছুটা ভিড় দেখা গিয়েছে। জেএনইউ-র ছাত্র ও দলের নেতা-সদস্যদের বাদ দিলে বামেদের যে সব সমর্থক মিছিলে সামিল হয়েছিলেন, তাঁরা দিল্লির সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। আমেরিকা সিরিয়া থেকে শুরু করে ইরাকে কত লোকের প্রাণ নিয়েছে, আমেরিকা কেন পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় নিতে চাইছে না, সে সব তাঁরা কতখানি মাথা ঘামালেন বোঝা গেল না।
ওবামার সম্মানে আয়োজিত আগামী কালের নৈশভোজ বয়কটের যুক্তি হিসেবে কারাট এ দিন বলেন, “সংসদীয় দলের তরফে সীতারাম ইয়েচুরিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি যাবেন না। আমরা মিছিল করব আবার নৈশভোজেও যাব, তা হয় না।” চার বছর আগে ওবামার ভারত সফরের সময় রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে গিয়েছিলেন ইয়েচুরি।
এ দিন তিনি ছিলেন কলকাতায়। একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের অবসরে তিনি আজ বলেন, “ভারত সরকার নিজেদের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন সহযোগী হিসেবে দেখাতে চাইছে। কিন্তু দেশবাসী তা মানবে না। সংসদে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সরকারকে।”
সংসদে বামেদের এখন যেটুকু শক্তি, সেই প্রসঙ্গ তুলে বাম শরিক দলের এক প্রবীণ নেতা মুচকি হেসে মনে করালেন, সে বার ইয়েচুরির সঙ্গে করমর্দনের পর ওবামা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কমিউনিস্টদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউপিএ সরকার কী করছে? এর পরেই ওই প্রবীণ নেতার কটাক্ষ, “এ বার হয়তো ওবামা কোনও কমিউনিস্ট দেখলে মোদীর কাছে জানতে চাইতেন, এঁরা এখনও টিকে আছেন! তার চেয়ে মুখ না দেখানোই ভাল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy