রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ইজরায়েল সফরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, একই সফরে যদি তাঁর প্যালেস্তাইন যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তবেই সম্মতি দেবেন তিনি।
মনমোহন জমানায় তেল আভিভের সঙ্গে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক মন্দ ছিল না। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। বাজপেয়ী জমানায় নয়াদিল্লি-তেল আভিভ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উচ্চতা পেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদীও ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সক্রিয়। সরকার গঠনের পর পরই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে তেল আভিভ পাঠিয়েছিলেন। তার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মার্কিন সফরে গিয়ে গত বছর নিউ ইয়র্কে এক পার্শ্ব বৈঠকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন তিনি। এ বার তিনি চাইছেন, রাষ্ট্রপতি ইজরায়েল সফরে যান। গত কুড়ি বছরে ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সে দেশে সফরে যাননি। ২০০৮ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম তেল আভিভ গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন না।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন শুধু ইজরায়েল সফরে যেতে আগ্রহী নন?
রাষ্ট্রপতির সচিবালয় ও বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশের সাবেক বিদেশনীতির দর্শনে এখনও বিশ্বাস করেন প্রণববাবু। নেহরু-ইন্দিরা গাঁধীর সময় থেকেই ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন ভারসাম্যের কূটনীতিতে আস্থা রেখেছে কংগ্রেস। নয়াদিল্লিতে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের দফতর খুলতে ভারত শুধু অনুমতিই দেয়নি, ভারতই প্রথম কোনও আরব গোষ্ঠী বহির্ভূত রাষ্ট্র, যে প্যালেস্তাইনকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তা ছাড়া, ইন্দিরা-রাজীব জমানায় ইয়াসের আরাফত যে কত বার ভারত সফরে এসেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। প্রাক্তন এক কূটনীতিকের কথায়, “ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সম্পর্কে ইন্দিরা গাঁধীর কূটনৈতিক ভাবনা প্রণববাবুর থেকে ভাল আর কে জানেন? তিনি ভারসাম্যের কূটনীতি করতে চাইছেন কেবল তা নয়, কোথাও ভারসাম্যের অভাব হলে তার শরিকও হতে চাইছেন না।”
তুলনায় প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েল সম্পর্কে গোড়া থেকেই বিপরীত অবস্থান নিয়েছিলেন বিজেপি তথা জনসঙ্ঘের নেতারা। মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলকে মতাদর্শ গত ভাবে একটি বড় শক্তি হিসেবে দেখে আরএসএস। কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পর সেই মনোভাবেরই ছায়াপাত ঘটতে শুরু করেছে। ’৯২ সালে থেকে তেল আভিভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের যাত্রা শুরু হলেও এ বছরই প্রথম ভারত সফরে আসেন ইজরায়েলের কোনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। নয়াদিল্লিতে এক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোশে ইয়া-লোন সম্প্রতি বলেন, “নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক এত দিন পর্দার আড়ালে ছিল! আর আজ আমি আপনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছি।”
তবে প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক তথা বর্তমানে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বলেন, “১৯৪৮ থেকে ’৯১ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কংগ্রেস ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এ হল কংগ্রেসের মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা। অথচ প্যালেস্তাইনকে নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, ব্রিটেন-রাশিয়া-চিন কিন্তু সে পথে হাঁটেনি। কেন্দ্রে মোদী সরকারের প্যালেস্তাইন নিয়ে ছুঁত মার্গ নেই। কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের জন্য সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসারে আগ্রহী।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যখন একই সঙ্গে দু’টি দেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তখন বিষয়টি অতিশয় মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। তবে মন্ত্রকের এক কূটনীতিক বলেন, এই সিদ্ধান্ত কূটনীতির স্তরে হবে না। হবে রাজনৈতিক স্তরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy