জগদীশ ভগবতী
সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে একটা সময় মন কষাকষি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আদ্যোপান্ত কংগ্রেসি ছিলেন মাধবরাও সিন্ধিয়া। অথচ তাঁর স্মৃতি বক্তৃতার মুখ্য বক্তা জগদীশ ভগবতী শীর্ষ সারির কংগ্রেস নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢালাও প্রশংসা করে!
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা অর্থনীতিবিদ ভগবতীর বক্তব্য, “মোদী দায়িত্বে রয়েছেন, তাই আরও এক বার পরিবর্তনের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে ভারত।” তবে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি-র কিছু নেতা যে সম্প্রতি নানা রকম বিতর্ক তৈরি করেছেন, সে ব্যাপারে সতর্কও করেন তিনি। ভগবতীর বক্তব্য, সঙ্ঘ পরিবারের কিছু কাজ বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে পারে। এতে রাশ টানতে না পারলে সেটা মোদীর সংস্কার কর্মসূচির পথে বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে।
এই সতর্কবার্তায় কংগ্রেস নেতাদের অখুশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মতো কঠিন কাজে হাত দেওয়ার জন্য মনমোহন সিংহের প্রশংসা করলেও বিগত ইউপিএ জমানার ভুলভ্রান্তি ও খয়রাতির অর্থনীতির বেধড়ক সমালোচনা করেন ভগবতী। সেখানেই হয় সমস্যা। নামে অরাজনৈতিক হলেও তিন মূর্তি ভবনের ওই বক্তৃতার আসর কার্যত কংগ্রেসেরই মঞ্চ। সেখানে মোদীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ও ইউপিএ জমানার সমালোচনা অস্বস্তিতে ফেলে দেয় সভাকক্ষে হাজির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম থেকে শুরু করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, দীপেন্দ্র হুডার মতো বহু কংগ্রেস নেতাকে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই কিছু কংগ্রেস নেতাকে সভা ছেড়ে চলে যান।
কংগ্রেসের অন্দরে এমন প্রশ্নও উঠছে যে, মাধবরাও সিন্ধিয়া স্মৃতি বক্তৃতায় কেন জগদীশ ভগবতীর মতো অর্থনীতিবিদকে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হল? লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মাধবরাও-পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে। তা ছাড়া কংগ্রেস সূত্রও বলছে, হাইকম্যান্ডের উপর অসন্তুষ্ট জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়ার কথাও ভাবছেন।
মোদীর প্রশংসায় ঠিক কী বলেছেন অর্থনীতিবিদ ভগবতী? তাঁর বক্তব্য, মনমোহন জমানার খয়রাতি নীতির তুলনায় গুজরাতে ‘মোদীর মডেল’ অনেক বেশি কার্যকরী এবং উন্নয়ন ও আর্থিক বৃদ্ধির সহায়ক। তাঁর মতে, মনমোহন গাড়ি চালিয়েছিলেন ধীরে, দ্বিতীয় গিয়ারে। ভগবতীর কথায়, “আশা করা হচ্ছে মোদী তৃতীয় গিয়ারে গাড়ি চালিয়ে আরও দ্রুত সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, আর্থনৈতিক উদারিকরণ ও প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিন থেকেই উদ্যোগী হয়েছেন। যা দেশে দ্বিতীয় আর্থিক বিপ্লবের আশা জাগিয়েছে।
এমন মোদী-স্তুতিতে কংগ্রেসের নেতারা অস্বস্তিতে পড়লেও শেষ দিকে কিছুটা মুখরক্ষা হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্রের একটি প্রশ্নে। বক্তৃতার শেষে দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হন ভগবতী। সেই সুযোগে ওমপ্রকাশ প্রশ্ন করেন, মোদী যদি এতই সংস্কারপন্থী তবে ইউপিএ জমানায় তিনি কেন বিজেপির অন্য নেতাদের সঙ্গে মিলে এক ছাদের নীচের বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, পরমাণু চুক্তি, এমনকী পণ্য পরিষেবা করের মতো সংস্কারের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছিলেন? এটা কি দ্বিচারিতা নয়!
এর জবাব দিতে গিয়ে কিছুটা ইতস্তত করেন ভগবতী। তার পর জানান, সরকার এক-দু’বছরের মধ্যে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেবে বলেই তাঁর আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy