সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে। ছবি: উজ্জ্বল দেব
বিহুর আগেই অসমে বিধানসভা নির্বাচন করানোর জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে আর্জি জানালেন রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী তাঁদের জানালেন— বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে কমিশন। একইসঙ্গে তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচারের অনুমতি দেওয়া, ভোটারদের অভিযোগ মেটানো এবং ভোটের কাজে গাড়ি ব্যবহার নিয়ে সমস্যা মেটাতে কমিশন দ্রুত ২৪ ঘণ্টা ‘অনলাইন’ পরিষেবা শুরু করতে চলেছে।
দু’দিনের সফরে গুয়াহাটি এসে অসমের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি, জেলাশাসক, এসপি ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে প্রথম পর্যায়ের বৈঠক করেন জৈদী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি ও ওমপ্রকাশ রাওয়াত।
কংগ্রেস, এআইইউ়়ডিএফ, বিজেপি, অসম গণ পরিষদ এবং এনসিপি প্রতিনিধিরা কমিশনারকে জানান— এপ্রিল মাসে বিহু উৎসব চলবে। তাই তার আগে দু’দফায় ভোট করালে ভাল হয়। শুধুমাত্র সিপিআই বিহুর পরে ভোট করানোর প্রস্তাব দেয়।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, রাজনৈতিক দল, রাজ্য সরকার, পুলিশ ও প্রশাসন বিহুর আগে ভোট করানোর অনুরোধ জানিয়েছে। নিয়মমতো ৪ জুনের আগে ভোট-পর্ব শেষ করতে হবে। সে দিকে তাকিয়ে রাজ্যের আবেদন বিবেচনা করছে কমিশন।
জৈদী বলেন, ‘‘ভোট-প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সরল করতে এ বার কমিশন তিনটি অনলাইন পরিষেবা চালু করতে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলি যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী সভা করার অনুমতি পায়, সে জন্য অনলাইনে সুবিধা নামে একটি পরিষেবা চালু হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ভোটের আগে-পরে ভোটারদের বিভিন্ন অভিযোগ থাকে। তা সঠিক জায়গায় জানাতে পারেন না অনেকেই। সে সব অভিযোগ গ্রহণ করা ও তার দ্রুত সমাধানের জন্য ‘সমাধান’ নামে অন-লাইন পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নির্বাচনে গাড়ি ভাড়া নেওয়া, ‘লগ-বুক’ রাখা, গাড়ির মালিকদের টাকা দেওয়ার বিষয়গুলি অন-লাইনে সারতে চালু করা হচ্ছে ‘সুগম’ প্রকল্প।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও জানান— বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতে, রাজ্যে সন্ত্রাস কমলেও ভোটে সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতী ও বাহুবলীদের ব্যবহার করা হতে পারে। তাই কমিশন অবিলম্বে জেলাশাসক ও এসপিদের এই ধরণের অপরাধীদের শনাক্ত করে নজরে রাখতে বলেছে। এখন থেকেই অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে অভিযান চলবে। রাজ্যের সব বুথে সিআরপি মোতায়েন করা ও সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংবেদনশীল এলাকাগুলি চিহ্নিত করে সেখানে ভোট করার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু দিন আগে থেকেই ওই সব এলাকায় টহল দিয়ে মানুষের মন থেকে ভয় দূর করবেন।
জৈদী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে ভিভিপিএটি যন্ত্র ব্যবহারে জোর দিয়েছে। এই যন্ত্রে ভোট দিলে কোন প্রতীকে ভোট পড়েছে— তার স্লিপ ভোটদাতা পান। কিন্তু আমাদের হাতে এত ভিভিপিএটি যন্ত্র নেই। যত বেশি সম্ভব বুথে ভিভিপিএটি ব্যবহার করা হবে।’’ তাঁর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লক্ষ। তার মধ্যে নতুন ভোটার চার লক্ষ এবং যুব ভোটার প্রায় ছ’লক্ষ। কমিশন বিশেষ করে মহিলা ও যুব ভোটারদের বুথমুখী করতে চাইছে। খসড়া ভোটার তালিকায় নাম থাকা প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পেয়েছেন। বাকিদের হাতেও তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে তা়ড়া দিয়েছে কমিশন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ১১ জানুয়ারি। ওয়েবসাইটেও তা তুলে দেওয়া হবে। তাতে যাঁদের নাম থাকবে না— তাঁরা নাম ঢোকানোর আবেদন করতে পারেন। ধারাবাহিক নবীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে তাঁদের নামও ঢোকানো হবে। তবে জৈদী স্পষ্ট জানান, নাগরিকপঞ্জি নবীকরণের সঙ্গে ভোটার তালিকার কোনও সম্পর্ক নেই। অনুপস্থিত ভোটার, ছবি না মেলা ভোটার ও একাধিকবার নাম থাকা ব্যক্তির নাম ছেঁটে নতুন তালিকা তৈরি হয়েছে।
‘ডি-ভোটার’রা অনেক বছর ধরে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে কমিশনার জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন। সন্দেহজনক ভোটারদের ক্ষেত্রে আদালতের রায় মেনে নেওয়া হবে। জৈদী বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য প্রতি ভোটারকে বুথে আনা। সকলে যেন বিনা বাধায়, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। সেই জন্য সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা মজবুত করতে হবে। সব ভোটকর্মীকে নিরপেক্ষ হতে হবে। আমাদের আশা অসমে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy