মন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ
জমি অর্ডিন্যান্সের ব্যাখ্যা তলব করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে জন্য গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহকে পাঠাবেন রাইসিনা পাহাড়ে। অথচ দিনভর খোঁজ করে নাকি তাঁকে খুঁজেই পাননি প্রধানমন্ত্রী!
এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? হোক বা না-হোক, মন্ত্রী বীরেন্দ্র আজ এমন কথাই বলেছেন। তাঁর মন্ত্রকের অধীনে বদল হচ্ছে আইনে, অথচ তিনি গোড়া থেকেই আঁধারে। রাষ্ট্রপতি যখন অর্ডিন্যান্সের ব্যাখ্যা চাইছেন, তখনও তাঁর বদলে পাঠানো হল অন্য তিন মন্ত্রীকে! এর ব্যাখ্যা কী? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নেই আজ কার্যত হাস্যকর ব্যাখ্যা দেন বীরেন্দ্র। তাঁর কথায়, “ওঁরা আমাকে খুঁজে পাননি।”
তার মানে! বছরের শেষ দিনটিতে কোথায় বেপাত্তা ছিলেন মন্ত্রী? এ বার আরও হেঁয়ালি মন্ত্রীর জবাবে, “দিল্লিতেই ছিলাম। তবে ওঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।” হাসির রোল ওঠে সাংবাদিক বৈঠকে।
আসল ব্যাপারটা কী?
সরকারি সূত্রই জানাচ্ছে, তাঁর মন্ত্রকের অধীনে আইন সংশোধনের কথা বীরেন্দ্র জানতেন না। তা ছাড়া জমি আইন সংশোধন করে কৃষক স্বার্থ লঘু করায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী। কিছু দিন আগেও সাংবাদিকদের কাছে বুক ঠুকে হরিয়ানার এই জাঠ নেতা বলেছিলেন, “চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ থাকতে জমি আইনে কৃষক স্বার্থ লঘু করা হবে না।” বাস্তবে দেখা গেল, অর্ডিন্যান্স জারির গোটা প্রক্রিয়াই চলছে তাঁকে এড়িয়ে।
আইন সংশোধন নিয়ে বীরেন্দ্রর সঙ্গে আলোচনাই করেননি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। জমি অর্ডিন্যান্সে মন্ত্রিসভা সায় দেওয়ার পর বীরেন্দ্রকে পাশে বসিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বীরেন্দ্র একটি কথা বলারও সুযোগ পাননি। সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই তড়িঘড়ি তিনি সোজা বাড়ি চলে যান। পর দিন নিজের মন্ত্রকেই যাননি তিনি।
এর পরে দেখা গেল, বীরেন্দ্রকে নয়, রাষ্ট্রপতির কাছে অর্ডিন্যান্সের ব্যাখ্যা দিতে প্রধানমন্ত্রী পাঠালেন জেটলি, নিতিন গডকড়ী ও সদানন্দ গৌড়াকে। সরকারে জেটলি তাঁর প্রধান সেনাপতি। গডকড়ী প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী আর সদানন্দ আইনমন্ত্রী। এঁদের নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও বিতর্ক বাধে বীরেন্দ্রকে ওই দলে না রাখা নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এই অবস্থায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকেই বিতর্ক মেটানোর নির্দেশ দেয়। এবং সেই নির্দেশ মেনেই সাংবাদিক বৈঠক করে বীরেন্দ্র আজ ঘোষণা করেন, তিনি আদৌ ক্ষুব্ধ নন। সেই সঙ্গে এ-ও বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, জমি আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই কৃষক স্বার্থকে অবহেলা করা হয়নি। যদিও বিতর্ক মেটাতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বোঝানো তো দূরস্থান, নিজেকেই প্রায় হাসির পাত্রে পরিণত করেন মন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “আমি ক্ষুব্ধ বলে যে জল্পনা চলছে তা একেবারে কল্পনা। রেগে থাকলে কি আর মন্ত্রিসভায় থাকতাম? কবে ছেড়েছুড়ে দিতাম!”
কৃষক স্বার্থ অটুট রাখা নিয়ে প্রশ্নে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান বীরেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত অস্বস্তি কাটাতে কংগ্রেস থেকে আসা এই নেতা বলেন, “রাহুল গাঁধীকে খুশি করতে আগের সরকার যে আইন পাশ করেছিল, তাতে অজস্র ভুল ছিল। তা নিয়ে আমাদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল। সেই জন্য জমি আইনে সংশোধন করা হল।” কৃষক স্বার্থ অটুট থাকবে এই দাবি করলেও তার সপক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে কার্যত হোঁচট খেতে হয় বীরেন্দ্রকে।
মন্ত্রী দাবি করেন, পাঁচ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণে কৃষকদের সম্মতি নেওয়ার শর্ত বিলোপ করার দাবি ছিল বেশির ভাগ রাজ্যের। যদিও তালিকা থেকে কেরল, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড় ও কর্নাটক এই চারটির বেশি নাম পড়ে শোনাতে পারেননি তিনি। পাঁচ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করলে প্রান্তিক চাষি বা সেই জমির উপর জীবিকা নির্ভরশীল এমন পরিবারগুলি কী ভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন তারও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। উল্টে বলে দেন, “যদি কোনও রাজ্য কৃষক স্বার্থ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হন, তা হলে তাঁরা সংশোধিত জমি আইন প্রয়োগ নাও করতে পারেন।”
এই জাঠ নেতার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বরাবর কৃষকদের জন্য আন্দোলন ও রাজনীতি করেছেন বীরেন্দ্র। হরিয়ানায় সেটাই দস্তুর। তাই নিজেই মনে মনে অর্ডিন্যান্সটি মানতে পারছেন না মন্ত্রী, অন্যদের বোঝাবেন কী ভাবে? সম্ভবত সেটা বুঝেই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাননি প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy