বিপদ
আস্তানা ছেড়ে বের হবার আগে, চারদিক একবার দেখে নিল পল্টু। অন্ধকার রাত। দূরে রাস্তার টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছে। আলোর নীচে, গাছপালা, বর্ষাতি, ঝোপঝাড়। গা ঢাকা দিয়ে যে করেই হোক, অন্তত অতটা আজ পৌঁছতেই হবে।
কিন্তু এই গা-ঢাকা দেওয়ার কাজটা কি সহজে হবে? মাঝখানের চওড়া রাস্তায় এখনও জগিং করে ঘাম ঝরাচ্ছে কেউ কেউ। শনশন করে তীব্র বেগে হাঁটছে অনেকেই। হাতে হাত, ঢিলেঢালা গল্প করতে করতেও পথ হাঁটছে ছেলেমেয়েরা। কম হলেও মাঝে মাঝে হুশহাশ করে চলে যাচ্ছে দু’একটা গাড়ি, স্কুটার কী মোটরসাইকেল। এদের মধ্যে কারও কাছ থেকেই চরম আঘাত আসতে পারে।
কিন্তু উপায় কী! এটুকু ঝুঁকি নিতেই হবে, রাস্তায় নেমে ভাবল পল্টু। পুরোনো আড্ডা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। লোকের আনাগোনা বেড়ে গেছে অনেক। পাশের খোলা জায়গায় কাল সারাদিন মাটি খুঁড়ছিল একদল লোক, কী উদ্দেশ্যে কে জানে! এদের মধ্যে কেউ অনায়াসে পল্টুদের দেখে ফেলতে পারত। কাল রাত্রেই পুরোনো আড্ডা ছেড়েছে পল্টুর চার-পাঁচজন বন্ধু।
পাশের বড় ক্লাবহাউসে আজ পার্টি আছে বোধহয়। হইহুল্লোড়, নাচগান, ব্যান্ডের শব্দ ভেসে আসছে। ভাগ্যিস গেটের কাছেই পুরোনো বিরাট বড় বড় কয়েকটা গাছ আছে। নইলে চোখ-ধাঁধানো আলো এখান অবধি আসত। একটু আগে বাজি-পটকা ফাটিয়ে আলোটালো নিয়ে একটা বরযাত্রী দল গিয়েছিল। হাওয়ায় এখনও পোড়া পোড়া গন্ধ। পল্টুকে ভ্রুক্ষেপ না করেই, শর্টস পরে দৌড়ে গেল একজন, এত কাছ দিয়ে যে লোকটির পারফিউমের গন্ধ পাওয়া গেল হাওয়ায়। ঝরঝর করে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল এই সময়।
কয়েকটি পরিবার বেরিয়ে এসেছিল ক্লাবের গেট দিয়ে। বৃষ্টিতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। একটি গাড়ি ঢুকতে যাচ্ছিল ক্লাবে। এলোমেলো মানুষজন দেখে ক্যাঁচ করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল। উজ্জ্বল হেডলাইটের আলোয় দু’পাশে অনেকখানি দেখা যাচ্ছে। নিজেকে যথাসম্ভব লুকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল পল্টু। কাল, পরশু, এমনকী তিন-চার দিন আগেও আড্ডা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল তার যেসব আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, তাদের অনেকের থেঁতলানো চিড়েচ্যাপ্টা মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে গেটের দু’পাশে। বিহ্বল কয়েকটি মুহূর্ত। তার মধ্যেই কী করণীয় ঠিক করে প্রাণপণে জায়গাটি পার হয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগল পল্টু। আর কীই বা করত। রাস্তায় স্বজনদের দেহ পড়ে থাকতে দেখলে শামুকদের দাঁড়াতে নেই।
ছবি
গতমাসের সাহিত্যপত্রে ‘বাড়ি’ নামের উপন্যাসের প্রথম কিস্তি লিখেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যিনি, মানে প্রমথবাবু, সকালে পার্কে ঘুরতে গিয়ে চোখের সামনে তাঁকে দেখে রীতিমত চমকে উঠলাম। আগে শুধু ছবি দেখেছি। মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। উনি নিজেই নমস্কার করে বললেন, স্যামুয়েল প্রমথ বিশ্বাস।
১৮৫৭’র বিদ্রোহের কিছু আগের ব্রিটিশ কায়দায় তৈরি বাড়ি, বাগানে শ্বেতপাথরের পরি, শোওয়ার ঘরের সংলগ্ন বাথরুমে বিরাট বড় বাথটব, ড্রইংরুমের এক দিকে ফায়ার প্লেসের পাশে বসে লেখালেখি করেন একজন লেখক। মাঝে মাঝে ভেসে আসে চার্চের ঘণ্টার শব্দ, যদিও আশেপাশে কোথাও চার্চ নেই। সন্ধের পর জানলার বাইরে এসে দাঁড়ায় সাদা পোশাক পরা, অসাধারণ সুন্দরী একটি যুবতী, বলতে গেলে, পুরো লেখাটাই আমার মাথায় গজগজ করছে। সেই সঙ্গে অজস্র প্রশ্ন। প্রতি নমস্কার জানিয়ে বললেম, আমি আপনার ভক্ত পাঠক একজন। কত যে কথা জানার আছে আপনার কাছ থেকে।
বেশ তো, আসুন না একদিন বাড়িতে। সহৃদয় হেসে প্রমথবাবু ওঁর বাড়ির ঠিকানা আমায় বুঝিয়ে দিলেন। সেই একদিন, আজই হতে পারে না কেন! আমার উত্সাহ টগবগ করছিল। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেও, মুখ হাত ধুয়ে আমি ঠিকানা মিলিয়ে ওঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। সদর দরজায় বেল টিপতেই, নিজেই দরজা খুলে প্রমথবাবু আপ্যায়ন করলেন, আসুন, আসুন।
‘বাড়ি’ উপন্যাসে, এত জীবন্ত আপনার বর্ণনা, মনে হয় চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি। একটি সোফায় বসতে বসতে বললাম, ওই রকম বাড়ি কি সত্যিই কখনও দেখেছিলেন?
দেখেছিলাম বৈকি, ছবিও আছে বেশ কিছু, হাসতে হাসতে প্রমথবাবু সেন্টার টেবলের ওপর রাখা পুরনো, ঢাউস একটা অ্যালবামের দিকে ইশারা করলেন।
নিজেই হাতে নিয়ে দেখব কিনা ভাবছি, প্রমথবাবু বললেন, আমি মশাই বাড়িতে একাই থাকি। আমার অভদ্রতা ক্ষমা করবেন, আমি চট করে দু’কাপ কফি তৈরি করে আনছি।
না না শুনুন, আপনি ব্যস্ত হবেন না। কফির কোনও প্রয়োজন নেই।
তা কী হয়, প্রমথবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি আজ প্রথমবার এসেছেন। আপনি অ্যালবামের ছবি দেখুন। আমার পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবে না।
ভেঙে পড়া জরাজীর্ণ বাড়ির আধুনিক কালে তোলা রঙিন ছবি। প্রথম ছবিটাই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা পরির। হাত নেই, কাকের বিষ্ঠায় পিঠ ভরে গেছে। বাগানের গেট নেই। জানলার ফ্রেম নেই, দরজা নেই, খুলে নিয়ে গেছে কেউ। কয়েক পাতা উল্টে দেখি বাড়ির ছাতও নেই। দেওয়ালের ধ্বংসাবশেষ কোনও ক্রমে দাঁড়িয়ে আছে। এই তো বাথটব, অন্তত সাত আট জায়গায় ফাটা, আগাছায় ভরে আছে। ওহো, এই ছবিটা ফায়ার প্লেসের! গল্পে, নায়কের দেহের ওপরের দিকটা, কোমর অবধি ঢোকানো ছিল এই রকম ফায়ার প্লেসে। পা দুটি বাইরে। একটি পায়ের জুতোর তলায় ছোট কাগজের টুকরো সাঁটা, তার ওপর লেখা, আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়! কী কল্পনা!
পাতা উল্টে পরের ছবিতে গিয়ে আমার চক্ষু স্থির হয়ে গেল। পুরনো দিনের কালোসাদা ছবি। এই ফায়ার প্লেস, তখন ভাঙা চেহারা ছিল না, বেশ পরিপাটি। পাশে রাইটিং টেবিলে লিখছেন প্রমথবাবু। এটা কী করে সম্ভব! এই বাড়ি যখন নতুন ছিল, তখন প্রমথবাবুর জন্ম হওয়ার কথা নয়। তা হলে কি ওঁর বাবা, কিংবা ঠাকুর্দা? আচ্ছা এমন নয়তো, যে বাড়িটাকে পরবর্তী কালে আবার নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে? কিন্তু তার এমন পুরনো কালো সাদা ছবি! সেটাও তো ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। পরের, সেই একই রকম, প্রায় বিবর্ণ ছবিতে প্রমথবাবুর সঙ্গে বিয়ের কনের পোশাকে এক বিদেশিনী। ক্ষীণ হলেও চার্চের ঘণ্টার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেলাম এই সময়। অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর, খেয়াল হল, প্রমথবাবু সেই যে গেছেন, এখনও কিন্তু কফি নিয়ে ফিরে আসেননি।
নিরপতি আয়া নহি আভি
ভারী পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এসে লোকটি বলল, নিরপতি, নিরপতি কোওন?
আমি নিরপতি নই। আমার পাশে বসা লোকটির দিকে তাকালাম। সে তাকাল তার পাশের লোকটির দিকে। সে তার পাশের। একজন তো তাঁর পাশে বসা লোকটিকে বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, অ্যাই, তুমি নিরপতি তো? যাঃ আমি মোটেই নিরপতি নই, লোকটি তত্ক্ষণাত্ অস্বীকার করল। ঘুরে ফিরে দেখা গেল, সমবেত জনতার মধ্যে নিরপতি বলে কেউ নেই। ইতিমধ্যেই পর্দা সরিয়ে, পাজামার ওপর হাফ শার্ট পরা সেই দুঃখী চেহারার মানুষটি আবার বেরিয়ে এসেছে। আমাদের সকলের দিকে এক বার দৃষ্টিপাত করে সে বলল, নিরপতি আয়া নহি ক্যা?
বিরাট এবং বিখ্যাত একটি মাল্টি স্পেশালিটি সেন্টারে, ডাক্তাররা সব নিজের চেম্বারে বসে কাজ করছেন, রোগী দেখছেন। প্রত্যেকের চেম্বারের বাইরে একটি করে ওয়েটিং রুম আছে বটে। কিন্তু সেখানে জায়গা নেই বলে তার বাইরের কমন স্পেসে আমরা অপেক্ষা করছি। সেখানেই চা এবং কফি মেশিন নিয়ে বসেছে একজন। নিঃশেষিত কাগজের কাপ উপচে পড়ছে তার বিন থেকে। মাছি-ভনভনে সেই জায়গাটিতে বসে, চায়ে ডুবিয়ে লেড়ো বিস্কুট খাচ্ছিল মাথান্যাড়া একটি বাচ্চা। তার বিস্কুট শেষ হওয়ার জন্যে হোক কিংবা নিরপতির খোঁজ করা সেই লোকটিকে দেখেই হোক, সে ভ্যঁা করে বিকট কান্না জুড়ল। এক পাশে, উদভ্রান্ত চোখের দৃষ্টি কিন্তু ভীষণ সুন্দরী একজন মহিলা বসেছিলেন। উনি সম্ভবত এসেছেন মনস্তত্ত্ববিদের কাছে। নিরপতির খোঁজ শুনে, হঠাত্ই নিরপতি, নিরপতি বলে পাশের সিঁড়ি দিয়ে ওপর তলায় উঠতে যাচ্ছিলেন প্রায়। পাশে বসা ওঁর সম্ভবত স্বামী, হাত ধরে টেনে বসালেন। সিলিং ফ্যানের ঠিক নীচের জায়গাটি দখল করে আলুথালু হয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন, দশাসই এক মহিলা। অন্য এক অনুরূপ মহিলার কোলে মাথা। বন্ধ চোখ না খুলেই জিজ্ঞাসা করলেন, কী বলে গেল রে লোকটা? দ্বিতীয়জন যত্ন করে প্রথম জনের মাথা থেকে একটি একটি করে উকুন বার করে মারছিলেন। মনোযোগ ধরে রেখে জবাব দিলেন, ১৮টা। ঠিক সেই সময়, পর্দা সরিয়ে লোকটি আবার এল। চার দিকে ভাল করে দেখে বলল, নিরপতি আয়া নহি অভি তক?
পাজামার ওপর হাফ শার্ট পরা, খোঁচ খোঁচ দাড়ি, এই সব দুঃখী চেহারার লোকেরা অপেক্ষা করে। খালি কাপ উপচে পড়ে। মাছি ভন ভন করে। বাচ্চা কাঁদে। উদভ্রান্তের মতো কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে চায়। কেউ নিরবচ্ছিন্ন উকুন মারে বসে। কেউ সাড়া দেয় না। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ সাড়া দিয়ে বলি না, আমি, আমিই নিরপতি। এবং নিরপতি বা নৃপতিরা আসেও না।
বেলুন
কাচ বসানো বিবর্ণ রাজস্থানী ব্লাউজ পরা বান্নোর বাঁ কাঁকালে দেড় বছরের প্রায় উলঙ্গ বিট্টু। হলুদ, বেগুনি, লাল, নীল, সবুজ, চার পাঁচটি বড় বড় বেলুন ধরে আছে বান্নো, ডান হাত দিয়ে। বিট্টু তার লালা-মাখা বাঁ হাতটি বার বার বাড়াচ্ছে বেলুনের দিকে। পাচ্ছে না, তার আগেই, সদাসতর্ক বান্নো সট করে ডান হাতটি উঠিয়ে দিচ্ছে ওপরে। এই সময়, সবুজ আলো লাল হয়ে হতেই কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়া ছেড়ে বান্নো হুটপাট নেমে পড়ল রাস্তায়।
প্রথম গাড়িটা একটা সাদা অ্যাম্বাসাডর, ভেতরে হুঁকোমুখো কয়েক জন পুরুষ বসে আছে। ওরা আর যাই নিক বেলুন নেবে না। দ্বিতীয়টা লরি, ও দিকে না যাওয়াই ভাল। উল্টোবাগে শুরু করে তৃতীয় গাড়িটির কাছে এসে থামল বান্নো। কাচ ওঠানো ঠান্ডা গাড়ি। তা হলেও, স্পষ্ট দেখা যায় ফুটফুটে একটি বাচ্চা ও তার মা বসে আছে পেছনের সিটে। অতএব, বেলুন ধরা ডান হাতটি গাড়ির জানলার কাছে এনে, বেলুন বিক্রির বাঁধা গত শুরু করে দিল বান্নো। গাড়ির ভেতর থেকে অবশ্য এই সব কিছু নির্বাক চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের মতো। তবু রং-এর আকর্ষণে সে দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, ফুটফুটে জিজ্ঞাসা করল, ওগুলো কী মাম্মি?
বেবি, ওগুলো বেলুন, বড় সাইজের বেলুন।
বেলুন! কী করে বেলুন দিয়ে?
বাচ্চারা খেলে। অবশ্যম্ভাবী ফুটফুটে বলল, আমিও খেলব, আমাকে দাও না, মাম্মি প্লিজ...।
নো, বেটা নো, ওগুলো নয়, আমি তোমাকে আরও ভাল ভাল বেলুন...।
বান্নোর ডান হাত গাড়ির জানলার কাছে নামিয়ে আনায়, দূরের জিনিস এখন বিট্টুর নাগালের মধ্যে। এমন সুযোগ হাতছাড়া না করে, বিট্টু তার বাঁ হাতটি আবার বাড়িয়ে দিল বেলুনের দিকে। সদাসতর্ক বান্নোও যথাসময়ে সট করে ডান হাত তুলে দিল ওপরে। অকৃতকার্য হয়ে বিট্টু তার লালামাখা বাঁ হাতটি থপথপ করে দু’বার ঠুকে দিল জানলার কাচে। ভাবটা যেন দেখলে তো ওস্তাদ, তুমিও পেলে না, আমিও পেলাম না।
রাস্তার অন্য পাশে সবুজ ঘাসে ঢাকা লনে বসেছিলেন দু’জন ট্যুরিস্ট। তাঁদের একজন গাড়ির আড়াল হওয়ায়, বেলুনধরা রোগা হাত, বিবর্ণ রাজস্থানী ব্লাউজ, বান্নো ও তার বাঁ কাঁকালের বিট্টুকে দেখতে পেলেন না। তাঁর চোখে পড়ল হাল্কা নীল আকাশের পশ্চাত্পটে, ঊর্ধ্বমুখী, বড় বড় রঙিন বেলুন। পাশের জনকে ঠেলা দিয়ে বললেন, কী সুন্দর লাগছে দেখো। অন্য জন, তত্ক্ষণাত্ সায় দিয়ে বললেন, ইয়েস, কালারফুল ইন্ডিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy