Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

মন কেমন করা লাভাসার নিরালায়

ওই যে সবজে রং ধরা দূরের গাছগুলো, -কিছু গাছের ডালে দুধে আলতা গোলাপি, কমলা ছোপ—তাদের চাদ্দিক জুড়ে বসন্ত। এখানে ফাগ উত্‌সবের তেমন আলোড়ন নেই। তবু প্রকৃতির ফাগ ওড়ে। বসন্ত একটু ঘন হয়ে এলে অনেকখানি সময় জুড়ে বিকেল, সন্ধে নামে। আলো পিছলানো সড়কপথ। সন্ধের পিঠে কখন মায়াবী চাঁদ ভেসে পড়েছে লাভাসার পাহাড়ি ঢালে। দূরান্ত থেকে ভেসে আসছে অস্ফুট পাতা খসানোর শব্দ। দৃশ্য বদল হচ্ছে। -নীচে পুণে শহরের স্ট্রিট লাইটগুলো ঝাপসা দেখাচ্ছে। চাঁদনি রাতে এখন যেন হাত বাড়ালেই ছঁুয়ে ফেলা যাবে ওই আকাশটাকে। লিখছেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।তখনও আকাশে আলো ফুটতে সামান্য দেরি, সেই ভোর সকালে ড্রাইভার যোগেশ নাহারকর তার ওয়াগনর গাড়িটা নিয়ে আবাসনের দোরগোড়ায় হাজির। তার পরই স্বভাবসিদ্ধ একটা মিসড কলে তার হাজিরা জানায়। ইতিমধ্যে স্নান সেরে, কফি বিস্কুট খেয়ে ক্যামেরা আর ছোট দুটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে আমরাও বেরিয়ে পড়ি আনন্দ যাত্রায়। তিন দিনের সপ্তাহান্তিক ছুটিটা কাজে লাগিয়ে পাড়ি জমাই পশ্চিমঘাট পাহাড় ঢালে। অপেক্ষায় নিরালা এক পাহাড়স্থলি লাভাসা।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

৬ মার্চ ২০১৫

সন্ধে-৭.৪৫

এম টি ডি সি

লেক ভিউ কটেজ

লাভাসা-৪১২১১২

তালুক-মুলসি, জেলা-পুণে

তখনও আকাশে আলো ফুটতে সামান্য দেরি, সেই ভোর সকালে ড্রাইভার যোগেশ নাহারকর তার ওয়াগনর গাড়িটা নিয়ে আবাসনের দোরগোড়ায় হাজির। তার পরই স্বভাবসিদ্ধ একটা মিসড কলে তার হাজিরা জানায়। ইতিমধ্যে স্নান সেরে, কফি বিস্কুট খেয়ে ক্যামেরা আর ছোট দুটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে আমরাও বেরিয়ে পড়ি আনন্দ যাত্রায়। তিন দিনের সপ্তাহান্তিক ছুটিটা কাজে লাগিয়ে পাড়ি জমাই পশ্চিমঘাট পাহাড় ঢালে। অপেক্ষায় নিরালা এক পাহাড়স্থলি লাভাসা।

আমার নভি মুম্বইয়ের বাসগৃহ থেকে লাভাসা পৌনে তিন ঘণ্টার পথ। দূরত্ব ১৭০ কিমি। সায়ন-পানভেল এক্সপ্রেসওয়ে ধরে খানিক এসে যশোবন্ত পথকর নাকা পেরিয়ে মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ে। এটা জাতীয় সড়ক ৪। গাড়ি ছুটছে পুরো দমে। বস্তুত এক্সপ্রেস ওয়ে-তে একটা নির্দিষ্ট স্পিডে গাড়ি চালাতে হয় এবং মাঝপথে গাড়ি থামানো নিষেধ। এই পথে পাহাড় কেটে তৈরি বেশ কয়েকটি গুহাপথ আছে। প্রথমেই এল ভাটান ট্যানেল। লম্বা সুড়ঙ্গ পথে, ফুড়ুত্‌ করে গাড়ি ঢুকে গেল। সুড়ঙ্গপথ সমস্তটাই বৈদ্যুতিন আলোয় আলোকিত। এ বার এল মণ্ডপ টানেল। এই সুড়ঙ্গ পথটি আগেরটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। আবারও মসৃণ সড়কপথ। পথের দু’পাশে কখনও ফাঁকা জমি, কোথাও আবাদি জমি। দূরে পাহাড়ের হালকা ঢেউ। আবার একটা টোল প্লাজা, খালাপুর পথকর নাকা। আবারও নির্ভার যাত্রাপথ। এ বার বাঁদিকের রাস্তাটা কোপলি চলে গেল। আমরা এখনও জাতীয় সড়ক ৪-এ। মাঝে কিছুটা ঘাট রোড। আবারও একটা সুড়ঙ্গ। খান্ডালা-বোগাদা টানেল। সে টানেল পার হয়ে আবারও একটা সুড়ঙ্গ কানসিট-বোগদা টানেল। এর পর রাস্তার ধারে কুশগাঁও, মালেভি এমন সব জনপদ পেরিয়ে তালেগাঁও টোল প্লাজা। এ পাশে ফুড কোর্ট। অনেক খানি বিস্তৃত জায়গায় আমাদের গাড়ি পার্ক করা হল। সার দিয়ে গাড়ি পার্ক করা। বোঝাই যাচ্ছে হোলির ছুটিটায় রং না খেলে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন কাছে-পিঠে ভ্রমণে।

গাড়ি থেকে নেমে একটু হাত পা ছাড়িয়ে ফুড কোর্টের কুপনে লম্বা লাইনের পেছনে। আমার আগে আরও প্রায় জনা কুড়ি জন। ফুড কোর্টের ছাউনির নীচে বসার টেবিল-চেয়ারগুলোতেও তিল ধারণের জায়গা মেলা ভার। আর টেবিলগুলো খালি হতে না হতেই সেই এঁটো টেবিল আগলেই দুদ্দারিয়ে বসে পড়ছেন অন্যরা। যদিও অনুমোদিত সাফাই কর্মী রয়েছে। তবে তাদের তো আলস্য ভাব বিস্তর। মিশাল পাও, মেদু বড়া, মশলা-বাটার মকাইদানা সেদ্ধ আর ফিল্টার কফি খেয়ে প্রাতঃরাশ শেষে শরীর বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠল। মন তো চাঙ্গা ছিলই চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

ইতিমধ্যে আমরা চলে এসেছি, ‘কুইন অব দ্য ডেকান’, ‘অক্সফোর্ড অব দ্য ইস্ট’ পুণে। চারপাশে পাহাড় ঘেরা সমতল ভূমি। ছত্রপতি শিবাজির হাতে গড়ে ওঠা শহর। আমরা পুণে ছঁুয়ে যাচ্ছি আরও কিছুটা উপার। হোলির জনপ্রিয় হ্যাং আউটে চিত্রকরের ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো পাহাড়ি শহর লাভাসায়। বসন্তের এই সময়টায় হাপিত্যেশ অপেক্ষা থাকেই একটা হ্যাপি ব্রেকের। আর সময়টা মার্চ, মুম্বইয়ে গরমের আঁচটাও দিব্যি টের পেতে শুরু করেছে। তাই এ সময়ের ট্যুর প্ল্যানিং-এ পছন্দসই জায়গা বেছে নিই একটু ঠান্ডা জায়গা আর ঠান্ডার জায়গা বলতেই পাহাড়। হাত বাড়ালেই তো মুম্বইয়ের কাছেপিঠে বা সামান্য দূরে কত হিল ডেস্টিনেশন। দূরত্বও তেমন বেশি কিছু নয়। পুণের চাঁদনি চক থেকে ৫৭ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরা হল। পুণের এই চাঁদনি চক থেকে লাভাসা ৪২ কিমি। যাবার পথে বাঁ পাশে ভুগাঁও তালাও নামে একটা গোছানো লেক পড়ল। স্থানীয়দের ভিড় রয়েছে। কোনও ‘হোলি ইভেন্ট’ পার্টি চলছে লেক চত্বরের ধারে।

পশ্চিমঘাট পাহাড়কোলে ২১০০ ফুট উচ্চতায় ফ্যাশনদুরস্ত নব্য পাহাড়ি ছোট্ট শহর লাভাসা। চটকদার যেমন ঠাটবাটও তেমন। মূল শহরে যাওয়ার আগে বিরাট প্রবেশ তোরণ। সেখানে বাঁ দিকে কাঁচ-ঘেরা অফিসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তোরণদ্বার কর্মীরা বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইলেন লাভাসা আসার উদ্দেশ্য, কোথায়, কত দিন থাকব ইত্যাদি কিছু জরুরি প্রশ্ন। তার পর আমাদের হাতে লাভাসার ম্যাপ এবং ‘ভিজিটর গাইডেন্স’ লেখা প্রবেশপত্র ও “লাভাসায় আপনারা স্বাগত” জানিয়ে পথ ছেড়ে দিলেন।

কালো মসৃণ সড়কপথ। পাহাড়-উপত্যকা-জঙ্গল নিজস্ব বিনিময়ে আরও মোহময়। খালি চোখে যত দূর দেখা যায়, জানালার কাঁচে চোখ রেখে দেখে নিই। পাহাড়ের বিশালতা ও সৌন্দর্য অবাক করে। এক পাশে হালকা জঙ্গল তো চোখের নাগালে নীলাভ এক হ্রদের ঝলকানি। অনুগত ড্রাইভার কথা রাখে। পথপার্শ্বে রেলিং-এর গা ঘেঁষে গাড়ি দাঁড় করায়। নেমে পড়ি।

দূরের ওই হ্রদটাকে কাছে ডেকে নিই। কী যেন নাম ওর? ওড়াসগাঁও লেক। ২০ কিমি লম্বা এই হ্রদকে ঘিরেই তো পাখির বাসার মত আরামে পড়ে আছে লাভাসা নামের এই পাহাড়ি শহরটা। চারপাশের প্রকৃতি এসে জাপটে ধরে। বসন্ত ফিকে হয়ে যেতে যেতেও হয় না। দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়। মৌজ করে খান কতক ছবি তুলে রাখি।

কয়েকটা পাহাড়ি বাঁক পেরিয়ে ঈষত্‌ চড়াই পথ। কোথাও রেলিং-এর ধারে বসার জায়গা। অতিক্রম করে এসেছি ওড়াসগাঁও বাঁধ। বাজি পাসলকর বাঁধ নাম আসলে। মার্চে প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে যাওয়া বিস্তৃত জলাধার। অপরূপ ছবির মতো হ্রদ-উপত্যকা। যেখানে অন্য সব কিছুকে নেহাতই তুচ্ছ মনে হয়। প্রকৃতি আর পরিবেশের এক রম্য মিশেল। গন্তব্যে পৌঁছে যাই। গন্তব্য বলতে এমটিডিসি-র তত্ত্বাবধানে লেক ভিউ কটেজ। জায়গাটার নাম দাসভে। লাভাসা পুলিশ চৌকি থেকে সামান্য দূরে, পাহাড়ের ধাপে ধাপে সমস্ত কটেজটা। রিসেপশন ঘরটা সে দিনই সদ্য রং করা শেষ হয়েছে। তাই সেখানে কাউকে পেলাম না। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে খোঁজ করতেই কেয়ারটেকারের দেখা পেলাম। ঘর খালি নেই প্রথমেই শুনতে হল। বুকিং না করেই মুম্বই থেকে লাভাসা বেড়াতে চলে এসেছি। যদিও সামান্য অনুরোধ-উপরোধেই ঘর পেয়ে গেলাম প্রায় দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে।

হ্রদ মুখী সমস্ত কটেজটাই। আরও কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে খাবার জায়গা। এই খাবার জায়গাটাতে দাঁড়িয়েই দারুণ একটা ভিউ পাওয়া যায়। হ্রদ, পাহাড়, কেয়ারি করা বাগান, কটেজ আবাসিকদের বসার ছাউনি। এ ছাড়াও একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে দড়িতে ঝুলে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। দাসভে গ্রামটি হল লাভাসার ভর কেন্দ্র। নিরালা সবুজ গ্রামটিরই একাংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে ঝাঁ চকচকে হিল সাইড, টাউন। এই শহরটির পরিকাঠামো ‘লাভাসা কর্পোরেশন’-এর আওতায় ‘হিন্দুস্থান কন্সট্রাকশন কোম্পানি’র। ঘরে মালপত্র রেখে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে, নীচে খাবার ঘরে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। মরাঠি থালি নিলাম। খেতে খেতে দেখে যাচ্ছি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুঃসাহসিক কর্মীদের দড়ি ধরে নানা রংবাজি। বাগানের ঘেরাটোপে ছিটছিট ধূসর রঙা এক দঙ্গল পোষা চিনা মুরগি ঘুরে ঘুরে খঁুটে খঁুটে দানা খাচ্ছে। অভিজাত পোর্টোফিনো স্ট্রিট ধরে কেতাদুরস্ত তথা বিলাসবহুল বাংলো চত্বরে আপনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বৈকালিক এই হাঁটাকেই পাথেয় করে নিচ্ছি লাভাসা ভ্রমণের একটা আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে। অত্যন্ত মহার্ঘ কিছু হোটেল রয়েছে এ অঞ্চলে। কিছু বিদেশি আবাসিক রয়েছেন সেই সব অভিজাত হোটেলে। আরও রয়েছেন দেশের কিছু রহিস মানুষজন। অনেক সেলিব্রেটি নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট বা বাংলো কিনে রেখেছেন লাভাসায়। লাভাসা টাউন হলটাও বেশ ভাল দেখতে, অট্টালিকা। লাভাসার এই অঞ্চলটায় ইউরোপিয়ান স্টাইলের আধিক্য রয়েছে। একেবারে ভিড়ভারাক্কা নেই, বিশৃঙ্খলা নেই, নির্ঝঞ্ঝাট এবং খুব বেশি রকমের পরিচ্ছন্ন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব জোরদার। গোটা এলাকা জুড়ে মোতায়েন অতন্দ্র প্রহরী। যারা এলাকার স্বাচ্ছন্দ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ।

৭ মার্চ ২০১৫

দুপুর ২.২০

এম টি ডি সি

লেক ভিউ কটেজ

লাভাসা ৪১২১১২

তালুক-মুলসি, জেলা-পুণে

প্রকৃতির টানে ছুটি কাটাতে এসেছি পাহাড়-হ্রদ ঘেরা নব্য আধুনিক শহর লাভাসায়। বসন্তের সাত সকালেই হালকা কুয়াশার ছেঁড়া চার পাশ। তার মাঝে খানিক আলতো রোদের ঝিকিমিকি। বসন্ত ফুরিয়ে আসবে এ বার। শেষ কুঁড়িগুলো যতটা সম্ভব কুড়িয়ে আনি এমন একটা ভাবাবেগ নিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। এ বার যাচ্ছি শহরের অন্য দিকটায়। আমাদের এমটিডিসি কটেজ থেকে ১১ কিমি দূরে এক্স-থ্রিল নামে একটা দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতাপূর্ণ থাকার জায়গার কাছে। আসার সময় যাত্রাপথে সাইনবোর্ডে এই জায়গাটার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছিল। পথ চলেছে

গাছগাছালির বুক চিরে। মাথার ওপর প্রশস্ত নীল আকাশ। পাহাড়ের ঢালে ঝোপঝাড়ে গাছের ডালেডালে এখন শুধুই ঝরাপাতাদের গল্প। পথ বলতে নিতান্তই মেঠো পথ। লালমাটির। এবড়ো-খেবড়ো। কোথাও গর্ত তো কোথাও নুড়ি পাথরের চাঙর। পথের সঙ্গী অপাঙ্গে বিছিয়ে থাকা ওড়াসগাঁও হ্রদ।

জায়গাটার নাম বেমবটমল। পোস্ট অফিস বদরুক। মাঝে মাঝে গ্রামীণ স্কুল। ঘর-দোর। মন্দির। আর ওই মেঠো পথ। ডান পাশে হ্রদের জলে নৈঃশব্দ্যের সমাপতন। গাছের পাতা খসা ডালে ফুলের আধ-খোলা কুঁড়ি। আরও কিছু দিন পরে ওই গাছেদের মন ঢাকা পড়বে রঙিন কাপড়ে। ফুলের জলসায়। এখানে একা একাই হাঁটে সকাল-সন্ধে-রাত। মাত্র ১১ কিমি পথ। তবু গাড়ির দুলুনি ও গুটি গুটি এগিয়ে চলাকে মনে হয় যেন প্রায় তিন গুণ বেশি পথ অতিক্রম করছি।

আমাদের যাত্রাপথ এক্সথ্রিল-এর দোরগোড়ায় এসে থেমে গেল। পাথুরে রাস্তার বাঁকে তখন বহু লোকের চলাফেরায় যে পথের সৃষ্টি হয়েছে তেমনই এক পথ। সামনেই সুযোগ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা রেস্তোরাঁ ছাউনি ও তাঁবুর আভিজাত্য নিয়ে রাত্রিবাসের এক মনোরম ঠেক। গতানুগতিক থেকে জরা হটকে। রুক্ষ ও বিস্তৃত ভূখণ্ডে বিহ্বল করে দেওয়া কিছু অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিস-এর ব্যবস্থা রয়েছে ছোট বড় সবার জন্য। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহায়ক কর্মীদের সহায়তায় এই দুঃসাহসিক খেলাগুলোর মজা নেওয়া যেতেই পারে। ৩.৫ একর জমি জুড়ে পরিকল্পিত ভাবে গঠিত এই এক্সথ্রিল কমপ্লেক্সটা। তাঁবুগুলি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। আছে লাগোয়া কলঘরও। লাভাসায় ‘একান্ত’ বলে একটা খুব নিরালা এবং মহার্ঘ রিসর্ট আছে। সেটি লাভাসা পাহাড় চূড়ায়। সেখানেও যেতে হয় পাথুরে মাটির পথ ধরে প্রাকৃতিক রুক্ষতাকে সঙ্গী করে। সেখানেও নৈসর্গিক আর আমুদে মানুষগুলো এক বুক হুল্লোড় নিয়ে মেঠোপথ ধরে চলে যান। অতঃপর, আনন্দ হি কেবলম। জনপ্রিয় এক হ্যাং আউট।

শুধুই নীল। ভ্রমণ আবেশে গাঢ় দুই চোখে অপরূপ আভাস মাখায়। বিস্তীর্ণ পাহাড় ঘেরা এই নীলাভ হ্রদের লাবণ্য নিয়ে ছোট্ট শহর লাভাসা। পর্যটকরা আদর করে ছোট্ট শহর লাভাসাকে ডাকেন ‘লেক সিটি’। ২০ কিমি লম্বা ওড়াসগাঁও লেককে ঘিরেই পরিকল্পিত শহর লাভাসায় যাতায়াতও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের। মুম্বই ও পুণে দুই মেট্রোপলিটান শহরের কাছে হওয়ায় পর্যটকদের আসা-যাওয়াও লেগে থাকে। এখানে কয়েকটি আবাসিক স্কুল-কলেজও গড়ে উঠেছে। আছে ক্রায়েস্ট ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট।

পাথুরে রাস্তার বাঁকে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ছি ইচ্ছে মতোন। কোথাও গাছে ফুলের দাঙ্গা লেগেছে দেখেই ক্যামেরায় ভরে নিই। পুলকিত ভাবনাগুলো এক সঙ্গে জড়ো হয়। দু’চোখে প্রকৃতি বীক্ষণের রেশ। কিছু নৌকা জলের ওপর ভাসছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হ্রদের কিনারে এসে থামি। মন ভরে ছবি তুলে রাখি ক্যামেরায়। আরও কাছে তখন হ্রদের নীল জল আর একটু ভালা লাগা। সামনে উপত্যকা আর প্রকৃতির বেপরোয়া টোপ। নিঃসন্দেহে সেই টোপ গিলি। অকারণ মন ভেসে যায়। আজই বিকেলে চলে যাব লোনাভালা। সেখানেই রাত্রিবাস। সে গল্পও শোনাব কখনও। মন ভরে আপাতত লাভাসার প্রচুর ছবি তুলে রাখি ক্যামেরায়। মুম্বই ফিরে বাড়িতে আধবেলা ধাতস্থ হয়েই ফেসবুকে ছবিগুলো ভার্চুয়াল বন্ধু-বন্ধুনীদের কাছে পাঠাতে হবে। পরখ করে নেব আমার ভ্রমণ কথার কতগুলো ‘লাইক’ ও ‘কমেন্টস’ মেলে ফেসবুকের টাইমলাইনে। লাভাসার বাতাসে রোজ সূর্য ওঠে অস্ত যায়। একই বসন্ত আসে বারে বারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy