Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Women

ঝাঁটা রেখে ফাইল হাতে ‘বল্লি চেচি’, সঙ্গী রেশমারা

কেরলের কোল্লম জেলার পাতানাপুরম ব্লক পঞ্চায়েত এ বার নজর কাড়ছে আনন্দবল্লির জন্যই।

এ আনন্দবল্লি এবং রেশমা মারিয়ম জয়

এ আনন্দবল্লি এবং রেশমা মারিয়ম জয়

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৯
Share: Save:

ঘরদোর ঝাঁট দিয়ে চেয়ার সাফ করা তাঁর কাজ। এত দিন ধরে যে সব চেয়ার পরিষ্কার করে এসেছেন, তারই একটিতে বসে দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার দিন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ‘বল্লি চেচি’। পোশাকি নাম এ আনন্দবল্লি।

ব্লক পঞ্চায়েত অফিসে তাঁর মুখ সকলেরই চেনা। পঞ্চায়েতের সঙ্গে সঙ্গে ব্লক অফিস-বাড়িতে অন্য দফতরগুলিতেও সাফ-সুতরোর কাজ করে দিন চালিয়ে এসেছেন তিনি। গত ১০ বছরের অস্থায়ী সাফাই-কর্মী আনন্দবল্লির হাতেই এ বার ব্লক পঞ্চায়েতের সভাপতির দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পেয়ে আনন্দবল্লি, স্থানীয় কর্মীদের ডাকে ‘বল্লি চেচি’, বলছেন, ‘‘স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি আমার জীবনে এমন ঘটতে পারে! একমাত্র আমাদের দলেই এটা সম্ভব। পার্টির কাছে ঋণ কখনও শোধ হবে না!’’

কেরলের কোল্লম জেলার পাতানাপুরম ব্লক পঞ্চায়েত এ বার নজর কাড়ছে আনন্দবল্লির জন্যই। সংলগ্ন এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে সিপিএম নেতারা আনন্দবল্লিকে রাজি করিয়েছিলেন ভোটে দাঁড়ানোর জন্য। প্রথমে আপত্তি করলেও ‘বল্লি চেচি’ পরে রাজি হন। তাঁর স্বামী পেশায় রঙের মিস্ত্রি এবং সিপিএমের সক্রিয় কর্মী। পাতানাপুরমের ওই ব্লক পঞ্চায়েত সভাপতির পদ এ বার তফসিলি মহিলার জন্য সংরক্ষিত। ভোটে জেতার পরে আনন্দবল্লিকেই ওই দায়িত্বের জন্য বেছে নিয়েছে সিপিএম। তফসিলি এবং আর্থিক ভাবে অনগ্রসর এক পরিবারের মহিলার এই উত্থানে খুশির হাওয়া গোটা ব্লক অফিসেই। স্কুলের পড়া শেষ করেননি আনন্দবল্লি। এখন তাঁর লক্ষ্য, কাউকে যাতে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে না হয়, তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে যেমন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি, কেরলে তেমনই ব্লক পঞ্চায়েত।

নতুন দায়িত্ব পেয়ে কী করতে চান? ‘বল্লি চেচি’ বলছেন, ‘‘অস্থায়ী কাজটা ছেড়ে দেব। পঞ্চায়েতের কাজই সর্বতো ভাবে করব। এখানে বেশ কিছু জায়গায় জলের সমস্যা রয়ে গিয়েছে। মহিলাদের গিয়ে জল নিয়ে আসতে হয়। জলের সমস্যা মিটিয়ে মহিলাদের কাজের সুরাহা করতে চাই।’’

শুধু আনন্দবল্লিই নন, স্থানীয় প্রশাসনের ভোটের পরে কেরলের নানা জায়গাতেই এখন মহিলা মুখ উজ্জ্বল। তিরুঅনন্তপুরম শহরের মেয়র হিসেবে ২১ বছরের বিএসসি ছাত্রী আর্যা রাজেন্দ্রনকে নিয়ে এসেছে সিপিএম। তেমনই পাতানামতিট্টা জেলার অরুভাপালম পঞ্চায়েতের সভাপতি হয়েছেন রেশমা মারিয়ম জয়। মনোনয়ন-পত্র জমা দেওয়ার মেয়াদ ফুরনোর সময়েই রেশমার ২১ বছর পূর্ণ হয়েছে, যা কি না ভোটে দাঁড়ানোর বয়স। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি আর দু’দিন আগে জারি হলে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোই হত না! বিবিএ পাশ রেশমা এসএফআই-এর জেলা নেত্রী।

একই ভাবে পালাক্কাড জেলার মালমপুঝায় পঞ্চায়েত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী রাধিকা মাধবন। কোঝিকোড়ের ওলাবান্নায় ২২ বছরের সারুথি এবং ওয়েনাড়ের পঝুতানায় অ্যানাস স্টেফির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত পরিচালনার দায়িত্ব। রেশমার ইচ্ছা, ‘‘আমরা চাই, তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে সক্রিয় রাজনীতির কাজে এগিয়ে আসুক।’’

কেরল সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবনের মতে, ‘‘খেটে খাওয়া মানুষ এবং তরুণ প্রজন্মের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আমরা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করেছি। তাঁদেরই স্থানীয় প্রশাসনে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ধরে রাখাই লক্ষ্য।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Women Kerala Women Empowerment Kerala Local Body Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy