Woman who once worked in the paddy field has become a global entrepreneur dgtl
shoes
Muktamani Devi: জীবন বদলে দেয় এক জোড়া জুতো! মাঠের মজুর মুক্তামণি এখন বিশ্বমানের শিল্পপতি
সিণ্ডারেলার সঙ্গে মণিপুরের মুক্তামণি দেবীর মিল আছে। কারণ মুক্তামণির উত্থানও জুতোর দৌলতে। সেও এক অন্য রূপকথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ১৮:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
কাচের জুতো পায়ে দেওয়ার পর ছাইয়ের বিছানা থেকে রাজপ্রাসাদে পৌঁছেছিল সিন্ডারেলা। গুপী-বাঘার জুতো জোড়ার কথাও সকলেরই জানা। রূপকথার সেই সব চরিত্রের সঙ্গে মণিপুরের মুক্তামণি দেবীর মিল আছে। কারণ মুক্তামণির উত্থানও জুতোর দৌলতে। সেও এক রূপকথা।
০২১৯
তবে এই জুতো সিন্ডারেলার মতো ‘পড়ে পাওয়া’ নয়। রূপকথার গল্পের মতো সাফল্য আসেনি মুক্তামণির। তিনি জুতো বানিয়েছিলেন হাতে বুনে। পরিশ্রম করেই নিজের জায়গা করে নিতে হয়েছে তাঁকে। যে কারণে বাস্তবের কাছাকাছি থেকেও মুক্তামণির গল্প রূপকথার সিন্ডারেলার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
০৩১৯
১৭ বছর বয়সে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন সহপাঠীকে। স্থায়ী উপার্জন না থাকায় ধানক্ষেতে দিন মজুরের কাজ শুরু করেন মুক্তামণি।
০৪১৯
এক সময়ে সন্তানের জন্য জুতো কেনার টাকাও ছিল না। আর এখন বিশ্বমানের জুতো ব্যবসায়ী মুক্তামণি। তাঁর তৈরি জুতো রফতানি হয় বিদেশে। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি ফ্রান্সেও চাহিদা রয়েছে মুক্তামণির জুতোর।
০৫১৯
মুক্তামণির বাড়ি মণিপুরের কাকচিংয়ে। চার সন্তানের মা। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসার টানতে উদয়াস্ত খাটতেন এক সময়।
০৬১৯
মাঠের কাজ তো ছিলই। সেই কাজ শেষ করার পরও চলত অর্থ উপার্জনের নানা ফিকির। বাড়ি থেকে খাবার বানিয়ে রাস্তায় বিক্রি করতেন রোজ। ফিরে এসে রাত জেগে উল বুনতেন। ছোট খাট সেই সব শিল্পকর্ম বিক্রি করে যদি হাতে অতিরিক্ত কিছু টাকা আসে!
০৭১৯
এর পরও অর্থাভাব থাকত। স্কুলে পড়া কন্যাকে এক জোড়া নতুন জুতো কিনে দেওয়ারও সামর্থ হয়নি মুক্তামণির। ছেঁড়া জুতো পরেই দিনের পর দিন স্কুলে যেত তাঁর মেয়ে।
০৮১৯
জোড়া তালি দেওয়া জুতো। স্বাভাবিক ভাবেই ধীরে ধীরে পরার অযোগ্য হয়ে যায়। মুক্তামণির জীবন বড় বাঁক নেয় তারপর।
০৯১৯
জুতো ছাড়া স্কুলে যাওয়া যাবে না বলে মেয়ের পুরনো জুতোটিকেই উল দিয়ে বুনে পরার মতো বানিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তামণি। সে জুতো দেখে অবশ্য ভয় পেয়েছিল মেয়ে।
১০১৯
উলের বোনা জুতো তো আর স্কুলের পোশাকের অঙ্গ নয়। যদি শিক্ষিকারা কথা শোনান! ভয়ের কারণ সেটাই।
১১১৯
ভয়ে ভয়েই স্কুলে জুতোটি পরে গিয়েছিল মুক্তামণির মেয়ে। জুতো দেখে এগিয়ে আসেন শিক্ষিকাও। তবে বকুনি দেননি। প্রশংসা করেন।
১২১৯
মুক্তামণির মেয়ের কাছে ওই শিক্ষিকা জানতে চেয়েছিলেন, এই জুতো কোথায় পাওয়া যায়। জানলে তিনিও নিজের মেয়ের জন্য এমন জুতো কিনবেন।
১৩১৯
প্রশ্ন শুনে অবাক হয়েছিল মুক্তামণির মেয়ে। মাকে এসে ঘটনাটি বলাতে তিনিই উলের জুতো বানিয়ে দেন। সঙ্গে মাথায় আসে নতুন ভাবনাও—উলের জুতো বানিয়েও তো বিক্রি করা যায়। মানুষ পছন্দ করলে বিক্রি হবে। আসবে টাকাও। মুক্তামণির উলের জুতোর যাত্রা শুরু তখন থেকেই। এখন যা দুনিয়া ঘুরে ফেলেছে।
১৪১৯
মুক্তামণি এখন মণিপুরের বৈগ্রাহিক নাম। সেখানকার এক নম্বর মহিলা উদ্যোগপতি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম প্রশংসা করেছিলেন মুক্তামণির কাজের। এমনকি তাঁর উত্থানের লড়াইয়েরও।
১৫১৯
জাতীয়স্তরে পরিচিতিও পেয়েছেন মুক্তামণি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাত থেকে পুরস্কারও নিয়েছেন। এমএসএমই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
১৬১৯
২০১৮ সালে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বদল এনেছেন এমন ১১ জন উদ্যোগপতিকে বেছে নিয়ে পুরস্কৃত করেছিল ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স। মুক্তামণি ছিলেন সেই ১১ জনের মধ্যে একজন।
১৭১৯
তাঁর তৈরি উলের জুতো নিয়ম করে রফতানি হয় বিদেশে। মুক্তা ইন্ডাস্ট্রি এখন বিশ্বমানের শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে জুতোর দাম বেশি নয়। ২০০ টাকায় শুরু হয়ে মুক্তামণির জুতোর সর্বোচ্চ দাম ৮০০ টাকা।
১৮১৯
সাফল্যের স্বাদ পেয়েও মাটিকে ভোলেননি। কারখানায় স্থানীয় মেয়েদের কাজ দেন মুক্তামণি। মেয়েদের উলের জুতো বানানোর পেশাদার প্রশিক্ষণও দেন।
১৯১৯
তবে সাফল্য উত্থান নিয়ে তিনি ভাবেন না। এক সময়ে দিন মজুরের কাজ করেছেন। সেই মুক্তামণিকে ১৩০ কোটির দেশে বদল আনার সম্মান দেওয়া হয়েছে। মুক্তামণির কথায়, ‘এর থেকে বড় সম্মান আর কী হতে পারে!’