ছবি: পিটিআই।
অতিমারির আক্রমণে অর্থনীতি বিধ্বস্ত। সঙ্কুচিত জিডিপি। চাহিদা ফিরিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ওষুধ সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে এই ছবি উঠে আসার পরে বুধবার দিনভর মোদী সরকারকে বিঁধলেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, বহু বিশেষজ্ঞ এত বার বলার পরেও কেন সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে এখনও হাত গুটিয়ে কেন্দ্র?
রাহুল গাঁধীর টুইট, “যে বিষয়ে বহু মাস ধরে সতর্ক করছি, সে কথাই বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বেশি ঋণ দেওয়া নয়, কেন্দ্রের উচিত, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি। শিল্পপতিদের কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়ার বদলে প্রয়োজন দরিদ্রদের হাতে টাকা দেওয়া।”
২০১৯-২০ সালের বার্ষিক রিপোর্ট মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাতে দেখা যাচ্ছে, করোনার ধাক্কায় প্রথম ত্রৈমাসিকের পরে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও বৃদ্ধির হার থাকতে পারে শূন্য শতাংশের নীচে। অর্থাৎ, সরাসরি কমতে পারে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতীয় অর্থনীতির উপরে করোনার কামড় ২০০৮ সালের বিশ্ব জোড়া মন্দার থেকেও ‘বিষাক্ত’। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বেশি আর সেই পথ সহজ নয়।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, “পর পর দুই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে নেমে যাওয়াকেই সাধারণত মন্দা হিসেবে ধরা হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে নিশ্চিত যে, ভারত মন্দার কোলে ঢলে পড়েছে। যে লক্ষ-লক্ষ কর্মী কাজ খুইয়েছেন কিংবা যে সমস্ত ছোট-মাঝারি শিল্প ভেন্টিলেটরহীন আইসিইউ-এ চলে গিয়েছে, ময়ূরের সঙ্গে ছবি তুলে তাঁদের সমস্যার সমাধান হবে না।”
বিধ্বস্ত অর্থনীতির থেকেও বিরোধীরা অনেক বেশি করে নিশানা করছেন মোদী সরকারের কার্যত হাত গুটিয়ে থাকাকে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু-সহ প্রথম সারির বহু অর্থনীতিবিদ বলা সত্ত্বেও কাজ হারানো কর্মী কিংবা দরিদ্রদের নগদ জোগায়নি কেন্দ্র। ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্পও মূলত ঋণের সুবিধায় ঠাসা। চাহিদা চাঙ্গার লক্ষ্যে সরকারি ব্যয় নিতান্ত অল্প।
অর্থনীতিবিদরা বার বার বলেছেন, পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে সরকার বিপুল টাকা ঢাললে, এক দিকে যেমন স্থায়ী সম্পদ তৈরি হবে, তেমনই তার হাত ধরে চাঙ্গা হবে বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবার চাহিদা। কল-কারখানার চাকা ঘুরবে। কাজ পাবেন অনেকে। বাড়বে বেতন। বিভিন্ন পণ্য কিনতে তা খরচ করলে, তবেই বাড়বে চাহিদা। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় পরিকাঠামোয় ১০০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লগ্নির প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তার কতখানি রাজকোষ থেকে আসবে, তা অস্পষ্ট।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বলেছে, চাহিদা ফের মাথা তুললে তবেই ছন্দে ফিরতে শুরু করবে অর্থনীতি। কিন্তু এখনই সেই সম্ভাবনা দূর অস্ত্। তাই অর্থনীতিকে খাদের মুখ থেকে টেনে তুলতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিতে আস্থা রাখা ছাড়া গতি নেই।
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, “পরিকাঠামোয় টাকা ঢালুক সরকার। তৈরি করুক কাজের সুযোগ। হাতে টাকা দিক কাজ হারানো কর্মীদের।” আর, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, “গভর্নরের উচিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টের বেশ কিছু হিন্দি এবং ইংরেজি কপি প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের পাঠানো। (পৃথিবীর) আর কোনও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের কথা সম্ভবত এমন ‘রাজকীয় ভাবে’ অগ্রাহ্য করা হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy