প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা। ফাইল চিত্র।
তার বিরুদ্ধে কৃষকদের গাড়িতে পিষে, গুলি ছুড়ে খুনের অভিযোগ। অথচ উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। মোদী সরকারের মন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিসকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেই সমন উপেক্ষা করে আজ সে পুলিশের সামনে হাজির হয়নি।
এ হেন আশিস মিশ্রকে আজ যোগী আদিত্যনাথের সরকার সুপ্রিম কোর্টে ‘কমবয়সী ছেলে’ যাকে ‘নিশানা করা হচ্ছে’ বলে বর্ণনা করল।
লখিমপুর খেরি কাণ্ডে খুনে অভিযুক্তর সম্পর্কে যোগী সরকারের আইনজীবী হরিশ সালভের মুখে এই কথা শুনে আজ প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা মনে করিয়ে দিয়েছেন, অভিযুক্তর সম্পর্কে ‘গুরুতর অভিযোগ’ রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “অন্যান্য অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও কি একই রকম আচরণ করা হয়? যেমন এই নোটিস পাঠানো ইত্যাদি!”
লখিমপুর খেরিতে চার কৃষকের হত্যা-সহ মোট আট জনের মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করেছিল। কাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে, তাদের মধ্যে কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। আজ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, “আমরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নই। আমরা দায়িত্বশীল প্রশাসন ও পুলিশ আশা করি। এখানে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর, গুলিতে আহত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।” যোগী সরকারের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যেমনটা উচিত ছিল, তেমন ভাবে আপনারা এগোচ্ছেন না। কী বার্তা দিচ্ছেন, ভেবে দেখুন। আপনাদের যাবতীয় তৎপরতা শুধু মুখে, কাজে নয়।” বিচারপতি হিমা কোহালি বলেন, “এ ক্ষেত্রে পুরনো কথাটা খেটে যায়, প্রুফ অফ দ্য পুডিং ইজ ইন দ্য ইটিং।” বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, “এটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সব অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হওয়া উচিত।”
স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের নিয়ে উত্তরপ্রদেশের এসআইটি কতখানি ঠিকমতো তদন্ত করছে, সে প্রশ্নের সঙ্গে আজ সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে দায়িত্ব দিলে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে। যোগী সরকার জানায়, তারা সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্ট চাইলে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “এ ক্ষেত্রে যে সব ব্যক্তি যুক্ত, তাতে সিবিআইও সমাধান নয়।” কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা হলেন, “শীর্ষ আদালত আজ সঠিক ভাবেই সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধেই যেখানে খুনের অভিযোগ, সেখানে মোদী সরকারে সিবিআই বা যোগী সরকারের পুলিশ কী ভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে? এই জন্যই বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন দরকার।’’
গত কাল সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়ে ওঠার পরেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ লখিমপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর বাড়ির বাইরে আশিসকে সমনের নোটিস ঝুলিয়ে আসে। তাকে শুক্রবার সকাল ১০টায় ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু আশিস হাজির হননি। শনিবার আশিসকে ফের ডেকে পাঠানো হয়েছে। আজ অজয় মিশ্র বলেছেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। আজ শরীর ভাল না থাকায় যেতে পারেনি। আগামিকাল পুলিশের সামনে হাজিরা দেবে।”
আজ সালভে সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছেন, “তাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। আগামিকাল বেলা ১১টায় হাজির হতে হবে। না এলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” বিরোধীরা আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, খুনে অভিযুক্ত আশিসকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? আজ প্রধান বিচারপতিও সেই একই প্রশ্ন তুলে জানতে চেয়েছেন, অন্যান্য অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে কি একই আচরণ করা হয়? প্রধান বিচারপতি বলেন, “স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তো ৩০২ ধারায় খুনের মামলায় পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে!” আইনজীবী সালভে বলেন, “আমি প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। রাজ্যের তৎপরতায় কোনও খামতি থাকলে পূরণের চেষ্টা করব। একটু সময় দিন।” প্রধান বিচারপতি জানান, দশেরার পরে তিনি মামলাটি শুনবেন। ২০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন দেওয়া হয়েছে।
লখিমপুরের ঘটনায় এফআইআর-এ বলা ছিল, যে গাড়ি কৃষকদের পিষে দিয়েছিল, তাতে বসে আশিস মিশ্র গুলিও ছুড়ছিল। আজ সালভে অবশ্য দাবি করেছেন, নিহতদের ময়ানতদন্তে গুলির আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ঘটনাস্থলে ফাঁকা কার্তুজ মিলেছে। হতে পারে নিশানা খারাপ ছিল। তবে অভিযোগ সত্যি হলে এটা সম্ভবত ৩০২ ধারায় খুনের মামলা। বিচারপতি কোহালি প্রশ্ন করেন, “সম্ভবত?” সালভে জবাব দেন, “সম্ভবত বলছি, কারণ আমি চাই না অভিযুক্ত আগে থেকেই মনস্থির করে ফেলুক।” আশিস ও তার বাবা অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করেছে, সে ঘটনাস্থলে ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy