কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের হাতিয়ার কেড়েই নোট-বাতিলের বিরোধিতার মুখ বন্ধ করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী! তাঁর নোট-বাতিলের সিদ্ধান্ত ভোটের ময়দানে ব্যুমেরাং হতে পারে, আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দলেই। পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে মোদী এ বার জাতপাতের অঙ্ক মুছে গরিবমুখী হওয়ার দাওয়াই দিলেন দলকে। বিজেপি নেতারা বলছেন, আসলে বহু দশক ধরে এই গরিব-অস্ত্রটি নিজেদের কাছে রেখেছে কংগ্রেস। এ বারে সেটিই কেড়ে নিতে চাইছেন মোদী। নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তকে গরিবরাই সব থেকে বেশি সমর্থন করেছে— এই প্রচার চালিয়ে তাদের পাশে টানার মন্ত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
ভোটের আগে মোদীর এই চেষ্টায় জল ঢালতেই আগামী বুধবার দিল্লিতে বড় আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। নোট-বাতিলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ, মহিলাদের থালা হাতে প্রতিবাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি। আজ বিদেশ থেকে ফিরে মোদীর অন্যান্য ‘জনবিরোধী’ প্রকল্পের বিরুদ্ধেও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাহুল।
কংগ্রেসের এই আক্রমণ আঁচ করেই বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকের শেষ দিনে মোদী আজ দলের নেতাদের মনে করিয়ে দেন, সমালোচনা ও অভিযোগ আসবে। সেগুলি এড়িয়েই গরিবদের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি নিজেও গরিবের ঘরে জন্মেছেন, দারিদ্র দেখেছেন। উপনিষদের শ্লোক আউড়ে মোদী বলেন, ‘‘ক্ষমতা, মোক্ষ, পুনর্জন্ম চাই না। শুধু গরিবের চোখের জল মোছাই আমার লক্ষ্য।’’ দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাই মোদীর আহ্বান, বুথে সমর্থনের ভিত মজবুত করতে হবে। গরিবের প্রতিনিধি হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
রাহুল ঠিক এই জায়গাটিতেই আঘাত করতে চাইছেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় কংগ্রেসই প্রকৃত বন্ধু, এই বার্তা দিতে আগামী বুধবার দিল্লিতে ‘জনবেদনা সম্মেলন’ করবেন তিনি। সনিয়া গাঁধীও থাকবেন ওই সম্মেলনে। তবে মোদীর টক্কর নিতে রাহুলই হবেন প্রধান মুখ। সনিয়া যে ভাবে রাহুলকে প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন, কিংবা দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাহুল যে ভাবে এগিয়ে আসছেন তাতে কংগ্রেসের বহু নেতাই চাইছেন, ওই জনবেদনা সম্মেলনের দিনই রাহুলকে দলের সভাপতি ঘোষণা করে দিন সনিয়া। ৫ রাজ্যের ভোট আগামী লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল। তাই এখান থেকেই দলের কাণ্ডারি হিসেবে লড়াই শুরু করে দিন রাহুল।
কংগ্রেসের এই পরিবার-কেন্দ্রিক ভাবনাকেই আজ এক হাত নিয়েছেন মোদী। গাঁধী পরিবারকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আমরা কোনও পরিবারের দল নই।’’ তাই দলের নেতাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, আত্মীয়-স্বজনের জন্য ভোটে লড়ার টিকিট না চেয়ে গরিবের জন্য কাজ করুন। ঐক্যবদ্ধ ভাবে গরিবদের জীবনের মান বাড়ানোর জন্য ঝাঁপান। মন দিন গরিব-সেবায়। মোদী মনে করছেন, গরিবদের কথা বললে জাত-পাতের অঙ্কও ধুয়েমুছে যাবে। বাজেট নিয়ে এখন বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশনের প্রশ্ন সামলাতে হচ্ছে। কিন্তু দলের এক নেতা জানান, শেষ পর্যন্ত যদি ভোটের আগে বাজেট পেশ করা না যায়, তা হলে নির্বাচনী ইস্তাহারে গরিবদের জন্য স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির ব্যবস্থা করা হবে।
কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, মোদী যতই চেষ্টা করুন, গরিবদের মন জয় করতে ব্যর্থ হবেন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী বলেন, ‘‘নোট-বাতিলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গরিবরাই। বিশেষ করে মহিলারা। অনেকে রোজগার হারিয়েছেন। ৫০ দিনের বেশি পেরিয়ে গিয়েছে, মোদী এখনও রাহুল গাঁধীর পাঁচটি দাবি মানেননি। গরিবদের জন্য যে নতুন প্রকল্প ঘোষণার আশা ছিল, সেটাও তিনি করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy