Advertisement
E-Paper

‘পরিবেশ কলুষিত করতে পারে এমন কথা নয়’! ব্যাঙ্ককে ইউনূসকে বার্তা মোদীর: বিদেশ মন্ত্রক

ইউনূসের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে মোদী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় বিদেশসচিব। মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষত হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে সে দেশের সরকার বলেই তাঁর প্রত্যাশা।

What PM Narendra Modi said to Muhammad Yunus in Bangkok talk

মুহাম্মদ ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৪২
Share
Save

মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পরে ব্যাঙ্ককে এই প্রথম তাঁর মুখোমুখি হলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই প্রথম সাক্ষাতেই প্রতিবেশী দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানের কাছে সে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদী। পরে বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, ঢাকাকে ‘বাক্‌সংযম’-এরও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার ইউনূসকে তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিবেশ কলুষিত করতে পারে এমন কথা’ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। দিন কয়েক আগে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ইউনূস। সেই আবহে প্রতিবেশী দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানকে মোদীর এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

ব্যাঙ্ককের রাজধানী তাইল্যান্ডে বিমস্টেক সম্মেলন চলছে। বৃহস্পতিবার ওই সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজে মোদী এবং ইউনূসকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তবে দু’জনকে বাক্যালাপ করতে দেখা যায়নি। শুক্রবার ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তার কিছু ছবি প্রকাশ করেছে দু’দেশেরই বিদেশ মন্ত্রক। সেখানে দু’জনকে হাসি মুখেই দেখা গিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পরে বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, উন্নয়নশীল, সর্বব্যাপী বাংলাদেশের জন্য ভারতের সমর্থন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানিয়েছেন, দু’দেশের সম্পর্কে যাতে জনগণের ভাল হয়, ভারত তাতেই বিশ্বাসী। দীর্ঘ কাল ধরে দু’দেশের সহযোগিতার কারণে দুই দেশেরই নাগরিকেরা উপকৃত হয়েছেন, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদী। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারত যে আগ্রহী, তা-ও অধ্যাপক ইউনূসকে বলেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।’’

মিস্রী আরও জানিয়েছেন, দু’দেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখা নিয়ে ঢাকাকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিদেশসচিবের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এই আর্জিও জানিয়েছেন যে, পরিবেশ কলুষিত করতে পারে এমন কথাবার্তা এড়িয়ে চলাই ভাল।’’ সীমান্ত নিয়েও প্রধানমন্ত্রী কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিস্রী। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সেখানে আইনের কড়া প্রয়োগ এবং বেআইনি ভাবে পারাপার বন্ধ রাখা (বিশেষত রাতে) প্রয়োজন।’’ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে মোদী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান ভারতীয় বিদেশসচিব। মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষত হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে সে দেশের সরকার বলেই তাঁর প্রত্যাশা।

মোদী-ইউনূসের বৈঠক নিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশও। ওই বিবৃতি অনুযায়ী, ইউনূস মোদীকে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘মূল্য’ দেয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিপদের সময়ে ভারত যে ভাবে সমর্থন করেছিল, সে জন্য তাঁরা ‘বাধিত’ থাকবেন বলেও জানিয়েছেন ইউনূস। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেই প্রসঙ্গে ইউনূস জানিয়েছেন যে, ‘বেশিরভাগই ভুয়ো খবর’। বাংলাদেশের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইউনূস এই বিষয়ে সরকারের করা পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন।

গত অগস্টে বাংলাদেশে আন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশ ছাড়েন। তার পরে শাসনভার হাতে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সেই থেকে এই প্রথম দুই রাষ্ট্রপ্রধান মুখোমুখি হলেন। বৈঠকে সেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বেগ জানালেন মোদী। পাশাপাশি, ইউনূসকে পরামর্শ দিলেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন ইউনূস। চিনকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার আর্জি জানান তিনি। সেই সূত্রেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি বলেন, “সমুদ্রের (বঙ্গোপসাগর) একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” চিন এবং বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন যে, “ভারতের পূর্ব দিকের সাত রাজ্যকে বলা হয় সাত বোন। এগুলি স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। এদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও পথ নেই।” ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। মনে করা হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গেই ইউনূসকে কিছু কথাবার্তা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মোদী, যা পরিবেশকে কলুষিত করতে পারে।

PM Narendra Modi advisor of the interim government of Dr. Muhammad Yunus Bangladesh Situation Sheikh Hasina

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}