নিজস্ব চিত্র। ফাইল চিত্র।
সাউথ অ্যাভিনিউয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বুধবার দু’টি বিষয় পর পর প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক, এ বারের দিল্লি সফরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর দেখা করার কোনও প্রশ্ন নেই। দুই, শীঘ্রই মুম্বইয়ে গিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার এবং শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রাজনৈতিক শিবির বলছে, আগামী দিনে বিরোধী জোটে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা এই জোড়া মন্তব্যে উস্কে দিয়েছেন মমতা। যদিও কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘নতুন জোটের’ মোড়কে আসলে কংগ্রেসকেই ভাঙতে চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। উদ্দেশ্য, কংগ্রেসকে দুর্বল করে নরেন্দ্র মোদীর সুবিধা করে দেওয়া।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে উদ্ধব এবং পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। অথচ ২৯ নভেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু। সেই হিসেবে ১ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে সংসদ অধিবেশনে হাজির থাকার কথা ছিল পওয়ারের। কিন্তু মমতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে তিনি দিল্লি না এসে অপেক্ষা করবেন মুম্বইয়ে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।
দলীয় সূত্র ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে জোট তৈরি করতে চাইছেন মমতা। গত কাল রাতে মেঘালয়-কাণ্ডের পরে এ কথা আরও স্পষ্ট যে, এ বার প্রকাশ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের দুর্গে হানা দেবে তৃণমূল। আজ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেসকে ভাঙার চক্রান্ত শুধু মেঘালয়ে নয়, পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে চালাচ্ছে তৃণমূল।”
গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক শিবিরে যে তর্ক সামনে এসেছে, তা হল, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোটের ধারণা আসলে সোনার পাথরবাটি কি না। দেশে ১২০টিরও বেশি আসনে লড়াই সরাসরি কংগ্রেস বনাম বিজেপির। কোনও স্থানীয় দলের পায়ের ছাপ সে ভাবে সেখানে নেই। এমনও নয় যে, পোড়খাওয়া নেত্রী মমতা জাতীয় রাজনীতির এই বাস্তবতা জানেন না। আর তাই কংগ্রেস শিবিরের তোপ, আসলে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে জোট গড়ার নামে বিজেপির হাতই শক্ত করছে তৃণমূল।
তৃণমূলের অবশ্য যুক্তি অন্য। সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে দলীয় সংগঠন বাড়িয়ে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের বিজেপি বিরোধী মুখকে আরও ঝকঝকে করতে চাইছেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে কার্যত দুরমুশ করার পরে যা যথেষ্ট উজ্জ্বল। এক দিকে তাই রাজ্যে-রাজ্যে কংগ্রেস থেকে নেতা-কর্মীদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্য দিকে, অকংগ্রেসি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো শুরু করছেন মমতা। সম্ভবত ১ ডিসেম্বর পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে তার সূচনা।
এর পরে উত্তরপ্রদেশেও যেতে পারেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের হিসাব, আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে মমতা নিজের নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করে রাজ্যে-রাজ্যে একটি পোক্ত বিজেপি-বিরোধী জোট বানাতে পারলে, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস বিরোধী জোটে নেতৃত্বের প্রশ্নে খবরদারি করতে পারবে না। বরং পরিস্থিতি তেমন দাঁড়ালে, বাইরে থেকে মমতা-কেন্দ্রিক আঞ্চলিক জোটকে সমর্থন দিতে বাধ্য হবে তারা।
বুধবারই মমতা স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমরা সব রাজ্যে লড়ব না। যেখানে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, আমরা তাদের পাশে থেকে সমর্থন দেব।” যে কারণে উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের ইউনিট খোলার কথা জানিয়েও তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব যদি সাহায্য চান, তিনি সমর্থন করবেন। পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকটিকেও এই প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
তৃণমূলের হয়ে কাজ করা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পি কে) কয়েক মাস আগে বার বার পওয়ারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন মুম্বইয়ে। উদ্দেশ্য ছিল, মমতার সঙ্গে পওয়ারকে আলোচনার টেবিলে বসানো। কিন্তু জুলাইয়ে দিল্লি এসে মমতা পওয়ারের সঙ্গে দেখা করেননি। অপেক্ষা করছিলেন পওয়ার। সূত্রের খবর, সেই সময়ে কে নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে কার বাড়িতে যাবেন, তা নিয়ে একটা ‘ইগোর’ লড়াই তৈরি হয়েছিল। সূত্রের দাবি, এ বার মমতা নিজেই যেহেতু পওয়ারের শহরে যাচ্ছেন, তাই তাঁর গিয়ে দেখা করায় সমস্যা নেই।
পওয়ারের সঙ্গে এ বারের বৈঠকে ভোটের মুখে দাঁড়ানো গোয়ায় এনসিপি-তৃণমূল সমঝোতা নিয়েও কথা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়ে সরকার চালাচ্ছে এনসিপি। স্বাভাবিক ভাবেই সে রাজ্যে মমতার ‘কংগ্রেসকে বাইরে রেখে জোটের তত্ত্ব’ পওয়ার বা শিবসেনার পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এনসিপি গোয়ায় লড়ছে ছোট বিরোধী দল হিসেবে। তাই সেখানে তৃণমূল-এনসিপি জোট সম্ভব।
আরও একটি রাজনৈতিক অঙ্ক সামনে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফলাফল ঘোষণার কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। হিসাব বলছে, যদি উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের পতন হয়, বিরোধীদের সামনে সুযোগ চলে আসবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে জিতিয়ে আনার। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এক সময়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের ‘স্বপ্ন দেখা’ পওয়ারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অভিলাষ ক্ষমতার করিডরে গোপন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে ঘুঁটি সাজাতে পারে তৃণমূল। মমতার উদ্যোগে যদি বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে পওয়ারের নামে সম্মত হয়, তখন সনিয়া-রাহুল তাতে আর কোনও বিরোধী বাদ সাধতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy