প্রতীকী চিত্র
মণীন্দ্রনাথ দাস। বয়স পঁচাশি। বাড়ি হাওড়া জেলার শ্যামপুরে। পেশায় চাষী হলেও শারীরিক কারণে এখন আর মাঠে যেতে পারেন না। রুজির যোগাড়ে মণীন্দ্রনাথের ছেলে থাকেন কলকাতায়। বয়স্কদের করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার খবর জেনে ছেলেকে ফোন করে বৃদ্ধ জানতে চেয়েছিলেন, “আমিও কি টিকা পাব? তার জন্য কী করতে হবে? কোথায় টিকা দেবে? টিকা নিলে কিছু হবে না তো?” টিকা নিয়ে তাঁর বৃদ্ধ পিতার এমনই কিছু ‘নিরীহ’ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি টিভি মেকানিক সুজিত দাস।
আগামী ১ মার্চ থেকে বয়স্কদের টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। করোনায় মৃত্যুহার কমাতে যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি, কিন্তু দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও এই দফায় প্রতিষেধকে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই টিকাকরণ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। মণীন্দ্রনাথের মতোই অনেকেরই প্রশ্ন, কোন পদ্ধতিতে টিকা দেওয়া হবে বয়স্কদের? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে রাজ্যগুলির কাছে এখনও সেই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা পৌঁছয়নি। যদিও বিভিন্ন রাজ্য তাদের মতো করে ওই বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রশ্নোত্তরে তার নির্যাস—
প্রশ্ন: কোন পদ্ধতিতে বয়স্কদের করোনার প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হবে?
উত্তর: টিকা যাঁরা নেবেন, তাঁদের কো-উইন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। তাতে নিজের নামধাম, পরিচয়পত্র নথিভুক্ত (রেজিস্ট্রেশন)করতে হবে।
প্রশ্ন: কী ধরনের নথি লাগবে?
উত্তর: যেহেতু দ্বিতীয় দফায় বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাই সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ডের নম্বর দিয়ে নাম নথিবদ্ধ করাতে হবে। সেই নথিভুক্তিকরণ আবার স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরে মিলিয়ে দেখা হবে।
প্রশ্ন: যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের উপর এবং কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁরা কী করবেন?
উত্তর: এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে রাজ্যগুলির কাছে পৌঁছয়নি। যদিও রাজ্যের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কিডনি সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন অথবা যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ সমস্যা আছে, তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: কোথায়, কবে টিকা দেওয়া হবে, তা কী করে জানা যাবে?
উত্তর: কো-উইন অ্যাপের মারফত বয়সের প্রমাণপত্র যাচাই হলে ওই অ্যাপেই কবে, কোথায় টিকা দেওয়া হবে, তা জানা যাবে। প্রয়োজনে টিকা দেওয়ার কেন্দ্র এবং টিকার দিনও ইচ্ছে অনুযায়ী গ্রহীতারা ঠিক করে নিতে পারবেন।
প্রশ্ন: টিকা নিতে কি টাকা লাগবে?
উত্তর: দেশের ১০ হাজার সরকারি হাসপাতাল এবং ২০ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হবে। সরকারি হাসপাতালের প্রতিষেধক বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য টাকা দিতে হতে পারে। তার পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
প্রশ্ন: এক রাজ্যের বাসিন্দা কি অন্য রাজ্য থেকে টিকা নিতে পারবেন?
উত্তর: পারবেন। তেমনই চিন্তাভাবনা রয়েছে কেন্দ্রের। এক রাজ্যের বাসিন্দা কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকলে তিনি ওই রাজ্যে টিকা নিতে পারবেন। তবে তাঁকে একই ভাবে কো-উইন অ্যাপের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের শিক্ষা অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “কী ভাবে বয়স্কদের টিকাকরণ হবে, সে বিষয়েকেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আমরা গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।” গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এ রাজ্যে করোনার প্রতিষেধক টিকাকরণের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৮ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা যোদ্ধা। ১৭,৫৭৭জন টিকার দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন। কিন্তু যে দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “এর পিছনে প্রধানত দু’টি কারণ রয়েছে। এক, কেন্দ্রের কো-উইন অ্যাপ অনেক সময়ই কার্যকর হচ্ছে না। ফলে হাতেকলমে নাম নথিবদ্ধ করাতে হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা অনেকেই টিকা নিতে ভয় পাচ্ছেন।”
চিকিৎসকেরা মনে করছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঁচ করেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১ মার্চ থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভয় কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীও টিকা নিয়ে বার্তা দিতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে ২৭ কোটি নাগরিকের জন্য টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মী, তার পরে পুলিশ, আধাসেনা, সাফাইকর্মীদের মতো প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ সপ্তাহে প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ নাগরিক প্রতিষেধকের আওতায় এসেছেন বলে দাবি কেন্দ্রের। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত দু’টি প্রতিষেধকের মাধ্যমে ভারতে টিকাকরণ চলছে। একটি হল সিরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ‘কোভিশিল্ড’। অন্যটি ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’। রাশিয়ায় তৈরি টিকা ‘স্পুটনিক ভি’ এখনও জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy