ফাইল চিত্র।
শ্রমিক স্পেশাল চালাতে গিয়ে প্রথম থেকে কাঠগড়ায় রেল। সময়ে না-পৌঁছনো, বা ভুল স্টেশনে পৌঁছনোর মতো গুরুতর অভিযোগ তো ছিলই, এ বার ট্রেনে খাবার ও জল না-পেয়ে যাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগও ওঠায় চাপের মুখে সব দায় ঝেড়ে ফেলতে তৎপর হল রেল মন্ত্রক।
আমপান ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে এক দিনে ৩০টি শ্রমিক ট্রেন পাঠাতে চেয়েছিল মহারাষ্ট্র। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে নবান্ন। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ মহারাষ্ট্রের মুখ্যসচিবকে জানান, এক দিনে ৩০টি ট্রেন সামলানোর পরিস্থিতি এখন নেই। কারণ, আমপানের ক্ষতি সামলাতে রাজ্যের বড় অংশে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চলছে। এর মধ্যেই বুধবার রাজ্যের পুরনো তালিকা অনুযায়ী মহারাষ্ট্র থেকে ২টি এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে আরও ১২-১৩টি ট্রেন রাজ্যে পৌঁছবে। এই অবস্থায় ট্রেন নিয়ে দু’রাজ্যের জটিলতা নিজেদের মধ্যে মেটাতে বলে সকালেই বার্তা পাঠায় পীযূষ গয়ালের রেল মন্ত্রক। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, রেল মন্ত্রকের অঙ্ক কি এটাই যে, পরে এ নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে রেলকে যাতে কেউ নিশানা করতে না-পারে, উল্টে রেলই বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে বিঁধতে পারে?
দৃশ্যত, এই অঙ্কেই গত ক’দিন ধরে মহারাষ্ট্রকে নিশানা করছেন পীযূষ গয়াল। দেশের মধ্যে কোভিড সংক্রমণের শীর্ষে মহারাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের নিজের রাজ্যে পাঠাতে চাইছে উদ্ধব ঠাকরের সরকার। এদের মধ্যে অনেকেই এ রাজ্যের। কিন্তু তাঁদের ঘরে ফেরায় বাদ সেধেছে আমপান পরবর্তী পরিস্থিতি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার দাবি মান্য। কিন্তু তা যে রাজ্য থেকে তাঁরা আসছেন, আর যেখানে তাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাদের মধ্যে সহমতের ভিত্তিতে ঠিক হওয়ার কথা। কিন্তু একটি রাজ্য অতি তৎপর হয়ে অনেকগুলি ট্রেন একসঙ্গে রাজ্যে পাঠাতে চাইছে। তা নিয়ে কথাবার্তা চালানো হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করা হবে না: আইসিএমআর
আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘বিষয়টি নবান্নের পক্ষ থেকে মহারাষ্ট্র প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সাময়িক ভাবে ক’দিনের জন্য মহারাষ্ট্র প্রশাসনকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ভার নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ আজ রাজ্যের মুখ্যসচিব মহারাষ্ট্র প্রশাসনকে জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনে মহারাষ্ট্র থেকে ৩৪টি ট্রেন রাজ্যে নিয়ে আসার তালিকা রেলওয়ে বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬টি ট্রেন এসে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মাথায় রেখে মহারাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাইছে নবান্ন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওই অনুরোধ মহারাষ্ট্র মেনে নিলেও বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি ও একই সঙ্গে দায় ঝেড়ে ফেলতে তৎপর রেলমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধ মানায় প্রায় ত্রিশটি ট্রেন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেশনে খালি পড়ে থাকছে। আজ তা নিয়ে টুইটারে পীযূষ বলেন, মহারাষ্ট্র সরকারের কথা মতো আজ ১৪৫টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫০টি ট্রেন বেলা তিনটের মধ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যাত্রীর অভাবে তেরোটি ছেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪১টি ট্রেন যাওয়ার ছিল, কিন্তু ছেড়েছে মাত্র দু’টি। ফলে গোটা দেশে শ্রমিক স্পেশাল চালানোর প্রশ্নে সামগ্রিক পরিকল্পনা রূপায়ণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ রেল মন্ত্রক বোঝাতে চায়, শ্রমিকদের আটকে থাকা, খাবার না পাওয়ার দায় সব রাজ্যের। রেলের কোনও ভূমিকা নেই।
১ মে থেকে শ্রমিক স্পেশাল চালানো শুরু করেছে মোদী সরকার। আর প্রথম দিন থেকেই নাস্তানাবুদ হচ্ছে পীযূষ গয়ালের মন্ত্রক। শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্রের মতো অ-বিজেপি রাজ্যগুলি রেল মন্ত্রকের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে। এরই মধ্যে ভুল স্টেশনে পৌঁছনো, ২৮ ঘণ্টার পথ চার দিনে পৌঁছনো, জল ও খাবার না পেয়ে যাত্রীদের স্টেশন ভাঙচুর এবং শেষে খাবার ও জলের অভাবে এক যাত্রীর ট্রেনেই মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠায় চাপে পড়েছে রেল। ডেরেকের অভিযোগ, ব্যর্থতা ঢাকতেই অন্য রাজ্যের দিকে আঙুল তুলছে রেল। খাবার ও জলের অভাবে যাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ উড়িয়ে রেলের বক্তব্য ময়না-তদন্ত হলেই সত্য জানা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy