বর্ষা ঢুকল কেরলে। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
অবশেষে কেরল দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে ঢুকল বর্ষা। মৌসম ভবন জানিয়েছে, শনিবার কেরলে বর্ষা ঢুকেছে। তবে এখনও সে ওই রাজ্যের পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েনি। তবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কেরল এবং দক্ষিণ তামিলনাড়ুতে শুক্রবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কেরলের চারটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু বাকি এলাকায় সে কবে ছড়াবে, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি মৌসম ভবন।
নিয়মমাফিক আন্দামানে মে মাসেই বর্ষা ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষার আগমনে বিস্তর বিলম্ব হয়েছে। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, ১ জুন কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা। সাধারণত ৮ জুন, বর্ষা গাঙ্গেয় বঙ্গে ঢুকে পড়ে। কেরলে বর্ষা ঢুকলেও এ বছর এ রাজ্যে বর্ষা কবে আসবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না হাওয়া অফিস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘বর্ষা আসার অনুকূল পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। তাই গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা কবে আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’ তবে গাঙ্গেয় বঙ্গ লাগোয়া ঘূর্ণাবর্ত এবং সাগর থেকে যেটুকু জোলো হাওয়া ঢুকছে তাতেই গত ক’দিনে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ দিনও আকাশ মেঘলা ছিল। হাওয়া অফিসের খবর, আন্দামান থেকে বর্ষার একটি শাখা অবশ্য মায়ানমারের ছড়াচ্ছে। কাল, সোমবার সেটি মিজোরামে ঢুকতে পারে।
The Southwest Monsoon has set in over Kerala today, the 8th June 2019.
— India Meteorological Department (@Indiametdept) June 8, 2019
For more details kindly visit: https://t.co/dnHG35ZgWQ pic.twitter.com/AEvoQNNLG7
আবহাওয়া দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা, বর্ষার আগমন সুগম করতে এ রাজ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো বাতাস ঢুকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে মধ্য ভারতে তাপপ্রবাহ চলার পরে সেই গরম হাওয়া ঢুকছে এ রাজ্যে। তার ধাক্কায় বাধা পাচ্ছে সাগরের জোলো হাওয়া। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘বঙ্গোপসাগরে প্রচুর মেঘ রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমের গরম হাওয়ার ধাক্কায় তা ঢুকতে পারছে না।’’ মৌসম ভবনের খবর, মধ্য ভারতে আরও দিন তিনেক এই তাপের প্রবাহ বইবে।
মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এল নিনো পরিস্থিতি বা প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বেশি থাকার ফলে এ বার বর্ষা শুরুতে দুর্বল থাকবে। ফলে কেরলে বর্ষা ঢোকার পর তা তরতরিয়ে বাকি ভারতে ছড়িয়ে পড়বে, তেমন আশা কম। সেটাও পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার পৌঁছতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ।
এ বার গ্রীষ্মেও দেশের বহু জায়গায় বৃষ্টি কম হয়েছে। তার ফলে মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, কর্নাটক এবং মধ্য ভারতের বহু এলাকায় খরা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বর্ষা পৌঁছনোর খবরে সামান্য হলেও আশার আলো দেখছেন অনেকে। তাঁদের আশা, বর্ষার ছোঁয়ায় খরা কাটবে। বন্ধ হবে তাপের প্রবাহ।
মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, প্রাক-বর্ষার মরসুমে বা গ্রীষ্মে বৃষ্টির ঘাটতি তো ছিলই, ১ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত গোটা দেশের বৃষ্টির ঘাটতি ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি ৫১ শতাংশ। হিসেব বলছে, গোটা দেশের বৃষ্টির ৭০-৮০ শতাংশ বর্ষার থেকে মেলে। শীতকালীন কৃষিকাজের জলও এ সময়ে বিভিন্ন জলাধারে সঞ্চয় করে রাখা হয়। ফলে বর্ষা স্বাভাবিক না-হলে সারা বছর ধরে তার ফল ভুগতে হতে পারে। এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘গ্রীষ্মের অনাবৃষ্টির ফলে এমনিতেই জলাধারের জল শুকিয়েছে, ভূগর্ভের জলস্তরেও টান পড়েছে। তার উপরে এ বার বর্ষা জোরালো না-হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ফলে এই ঘাটতি আদৌ মিটবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।’’
মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ গা-ঝাড়া দিতে পারে বর্ষা। সে সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি মিলতে পারে। তবে আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, মাস দেড়েকের বৃষ্টিতে ঘাটতি মেটার কথা নয়। ওই সময়ের মধ্যে ঘাটতি মেটাতে হলে অতিবৃষ্টি প্রয়োজন। তাতে খাতার হিসেবে ঘাটতি
মিটলেও কৃষক এবং নাগরিকদের লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হবে। কারণ, অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে তা চাষের ক্ষতি করে, ভূগর্ভের জলের ঘাটতিও পূরণ করে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy