সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিকে) এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি সংক্রান্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভে এখনই ইতি টানতে চাইছে না বিজেপি। বরং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ওই আন্দোলনকে কলকাতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। শুক্রবার সকালে সন্দেশখালি নিয়ে আগামী দিনে দল কোন পথে চলবে, তা স্থির করতে বৈঠকে বসেন রাজ্যের শীর্ষ নেতারা। বিজেপি সূত্রে খবর, বৈঠকেই স্থির হয়, সন্দেশখালির ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে খাস কলকাতায় টানা তিন দিন ধর্না কর্মসূচি পালন করবে দল।
ধর্না কর্মসূচিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত টানা তিন দিন কলকাতার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এই ধর্না চলবে। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, যে কোনও এক দিন সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদেরও ধর্নামঞ্চে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। আগামী রবিবার পর্যন্ত সন্দেশখালি নিয়ে একের পর এক কর্মসূচি আগেই নিয়ে রেখেছিল বিজেপি। তার পরেও শাসক তৃণমূল এবং প্রশাসনের উপর ‘চাপ’ বাড়িয়ে এই ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাইছে পদ্মশিবির।
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, সোমবার ফের সন্দেশখালি যেতে পারেন শুভেন্দু। পরে বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বিরোধী দলনেতার এই সফর পিছিয়ে গিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। কিন্তু পরে জানা যায়, শাহের বঙ্গ সফর বাতিল হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় এলে রাজ্য নেতাদের ব্যস্ততা বাড়ত। তা না হওয়ায় এ বার যাবতীয় মনোযোগ আপাতত সন্দেশখালিতেই দিতে চাইছে বিজেপি। শুভেন্দুর সফর পিছোনো এবং শাহের সফর বাতিলের পর যে ‘অবসর’ মিলছে, তার সদ্ব্যবহার করতেই তিন দিন ধর্না কর্মসূচি বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
বিভিন্ন কমিশন সন্দেশখালি আসায় তার থেকেও ফয়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। সেই ধারাই চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পদ্মশিবিরের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেটা চান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। সেই নির্দেশকে কাজে লাগাতে পরিকল্পনাও পাকা বঙ্গ বিজেপির। সন্দেশখালিতে গিয়ে বা সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের রেশ ধরে রেখেই লোকসভা ভোটে আসনসংখ্যা বাড়াতে চায় তারা। সন্দেশখালি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই লাগাতার কর্মসূচি চলছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার গিয়েছিলেন সন্দেশখালিতে। সেখানে গিয়ে অবশ্য পুলিশের সঙ্গে বিবাদ এবং ‘খলিস্তানি’ বিতর্কে জড়ান বিজেপি নেতৃত্ব। এ বার সেই ‘খলিস্তানি’ বিতর্ক থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে আবার সন্দেশখালিকে ঘিরে রাজনৈতিক আবহ বদলাতে মরিয়া বিজেপি। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি যান সুকান্তও। তিনি সন্দেশখালি থানার সামনে অবস্থানে বসেন। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান তিনি। শুক্রবার সন্দেশখালি গিয়েছে বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্যেরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকেরা। তার পর থেকেই ধীরে ধীরে সেখানে জনবিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। তৃণমূল নেতা শাহজাহান-সহ তাঁর দুই শাগরেদ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করতে শুরু করেন সন্দেশখালির মহিলারা। সন্দেশখালিতে তফসিলি সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগও ওঠে। এ ছাড়াও তোলাবাজি, চাষের জমি কেড়ে ভেড়ি তৈরি-সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যার জেরে ‘অস্বস্তি’তে পড়ে শাসক তৃণমূল। শিবু ও উত্তমকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। কিন্তু এখনও বেপাত্তা শাহজাহান। তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে রোজই কোথাও না কোথাও আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। যার জেরে এখনও পর্যন্ত সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরেনি। দফায় দফায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে পুলিশকে। তা নিয়ে আবার আদালতে গিয়েছে বিজেপি। এই ঘটনা পরম্পরায় তৃণমূল ‘অস্বস্তি’-তে পড়েছে বলেই দাবি প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। ফলে তারা সেই পরিস্থিতিকে যথাসম্ভব জিইয়ে রাখতে চায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy