ভিকে সিংহ ও নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।
সেনা অভ্যুত্থান বিতর্কে এ বার নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হলেন ভিকে সিংহ। চিঠি লিখে চাইলেন উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। ২০১২-য় মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-২ সরকারের আমলে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেইসময় সেনাবাহিনীর তরফে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে, তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। তত্কালীন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ইন্ধনেই সেইসময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছাড়ানো হয়েছিল বলে সম্প্রতি দাবি করে ‘দ্য সানডে গার্ডিয়ান’ পত্রিকা।
বৃহস্পতিবার সংসদের ভাষণেও এ নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। যার পর নিজের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন বর্তমানে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিংহ। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। ভিকে সিংহ বলেন, ‘‘দেশঅন্ত প্রাণ সেনাবাহিনীর। কোনও পরিস্থিতিতেই দেশের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। সেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়ানো দেশদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। তাই বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি আমি। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছি। যাতে গোটা ঘটনায় ইউপিএ-২ সরকারের যে মন্ত্রীদের ইন্ধন ছিল, তাঁদের নাম সকলের সামনে উঠে আসে।’’এর আগে ২০১২ সালে, তৎকালীন ইউপিএ-২ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও চিঠি লিখিছিলেন তিনি। যারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন। কিন্তু মনমোহন সরকার তাঁর আবেদন ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি বলেও দাবি করেছেন ভিকে সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী অসাংবিধানিক কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না বলে তখনই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম। তত্কালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একে অ্যান্টনিও এ ব্যাপারে একমত ছিলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’
যদিও ইউপিএ-২ আমলে দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন ভিকে সিংহ। তবে মনমোহন সিংহ এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কোনওকালেই বিশেষ বনিবনা ছিল না তাঁর। এমনকি তিনিই দেশের প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন। ২০১২ সালে সেনা সেনাবাহিনী থেকে অবসরের বয়স নিয়ে মনমোহন সরকারের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে তাঁর। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার সময় ভুল করে তাঁর বয়স একবছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। তা শুধরে নিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। যদিও বিষয়টি থেকে হাত তুলে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বাধ্য হয়ে আবেদন তুলে নিতে বাধ্য হন ভিকে সিংহ। কিন্তু সেনা অভ্যুত্থান সংক্রান্ত পুরনো বিতর্ক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ক’টা ধর্না করবেন করুন, লুটেরাদের বাঁচাতে পারবেন না: মমতাকে চ্যালেঞ্জ মোদীর
আরও পড়ুন: কাল সিবিআই জেরা, শিলং পৌঁছলেন রাজীব কুমার, সঙ্গে আরও দুই পুলিশকর্তা
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে দিল্লি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সঙ্ঘাতের খবর বেরোয় একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করে দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকা। তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে তখন জেরবার মনমোহন সিংহের সরকার। সেই সময় ভিকে সিংহের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোপন সূত্রে খবর মেলে। সেই মতো ইনটেলিজেন্স ব্যুরোকে (আইবি) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন মনমোহন সিংহ। কিন্তু তদন্তে সেরকম কোনও ইঙ্গিত না মেলায় সেখানেই থেমে যায় বিষয়টি। কিন্তু গোপনীয়তা বজায় থাকেনি। বরং সরকারি সূত্রেই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। সেনাবাহিনী মনমোহন সিংহের সরকারকে উত্খাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
তত্কালীন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-ই ইচ্ছাকৃতভাবে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস করে দেন বলে দাবি করেছে দ্য সানডে গার্ডিয়ান। আর তাতেই তেড়ে উঠেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন ভিকে সিংহ। দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে কংগ্রেস পার্টি এবং তত্কালীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা মিলে ইচ্ছাকৃতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। যা গতকাল সংসদেও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউপিএ-২ আমলে কংগ্রেসের সহ সভাপতি ছিলেন রাহুল গাঁধী। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আবার বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তিনি। সেনাবাহিনীকে কালিমালিপ্ত করার পরিকল্পনা সেইসময় তাঁর মাথা থেকেই বেরোয়নি তো? টুইটারে বিজেপির তরফে এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছে। তবে কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy