কারখানা চত্বরে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ছবি: পিটিআই
দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিকের ঘটনা। আর এই দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে গাফিলতির অভিযোগই তুলছে বিশাখাপতনম পুলিশ। তাদের মতে, যে ট্যাঙ্ক থেকে গ্যাস লিক করেছে তা রক্ষণাবেক্ষণই হত না। এ দিন দুর্ঘটনার কিছু পরে অবশ্য বিবৃতি দিয়েছে এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই কারখানাটির মূল সংস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেম। তারা জানিয়েছে, লকডাউনের জেরে কারখানা বন্ধ ছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মীরা ছিলেন। তার পরেও কী কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা।
কারখানা থেকে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিক। এ দিন বিশাখাপতনমের গোপালপতনমের ওই দুর্ঘটনার হাত ধরে ফিরে এসেছে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি। এ দিনের দুর্ঘটনা নিয়ে পলিমার সংস্থাটির মালিক দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাটারি প্রস্তুতকারক সংস্থা এলজি কেম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লকডাউনের জেরে কারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত কর্মীরা প্ল্যান্টে ছিলেন। তার পরেও কী ভাবে গ্যাস লিক হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও বলা হয়েছে, গ্যাস লিকের জেরে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মৃত্যুর কারণ ও দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ তথ্য তারা খতিয়ে দেখছে। অসুস্থদের দ্রুত চিকিৎসাও চাইছে ওই কোরীয় সংস্থাটি। সংস্থাটির দাবি, ওই গ্যাস নাকে গেলে মানুষের বমিভাব আসতে পারে ও মাথা ঘুরতে পারে। এ দিনের দুর্ঘটনায় এক শিশু-সহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার জেরে আশেপাশের এলাকার প্রায় ১০০০ জন অসুস্থও হয়ে পড়েন।
কিন্তু কোরীয় সংস্থা যে দাবি করেছে, তার উল্টো কথাই বলছে পুলিশ। আর তাতে সংস্থাটির বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠে আসছে। বিশাখাপতনমের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ (এসিপি) স্বরূপা রানি বলছেন, এ দিন একটি বড় ট্যাঙ্ক থেকেই ওই বিষাক্ত গ্যাস লিক করেছে। সেই ট্যাঙ্কটি মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কোনওরকম ভাবে দেখভাল করা হয়নি বলেও জানাচ্ছেন স্বরূপা। কারখানা পুরোপুরি বন্ধ থাকার দাবি পুরোপুরি মানছেন না গ্রেটার বিশাখাপতনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার সৃজনা গুম্মালা। তাঁর মতে, দিন কয়েক আগে লকডাউন শিথিল হতেই ওই প্ল্যান্টটি চালু করা হয়েছিল। তবে এলজি কেম জানিয়য়েছে, কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সংস্থাটি অবশ্য জানিয়েছে, রাতের শিফটে কাজ করা এক কর্মীই গ্যাস লিকের বিষয়টি আবিষ্কার করেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানান।
আরও পড়ুন: গ্যাস লিক নিয়ে জরুরি বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর, সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হচ্ছে ফৌজদারি মামলা
কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন এসিপি স্বরূপা রানি। তাঁর দাবি, লকডাউনের জন্য গ্যাসের ট্যাঙ্কটি দেখভাল করা হয়নি। রাসায়নিক বিক্রিয়ার জেরে ট্যাঙ্কের মধ্যে থাকা ওই গ্যাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তার ফলেই গ্যাস লিক করে।
স্বরূপা বলছেন, এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ ওই কারখানার আশপাশে কর্তব্যরত এক সাব ইন্সপেক্টর তাঁকে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। ফোনে ওই সাব ইন্সপেক্টরের গলায় আতঙ্ক ফুটে উঠেছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ দিনের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে স্বরূপা বলছেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি দেখতে পান কারখানার কাছাকাছি গ্রামের অনেক বাসিন্দাই অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি ১৫ জনের বেশি মানুষকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিয়েছি। তাঁরা সকলেই পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান।’’
আরও পড়ুন: গ্যাস লিক নিয়ে জরুরি বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর, সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হচ্ছে ফৌজদারি মামলা
বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিক কাণ্ডের পর পরই এ দিন জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন তিনি। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্যাস লিকে অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য এবং মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy