Visually impaired girl cracks state civil service examination in her first attempt dgtl
tapaswini das
সংরক্ষিত আসনে নয়, প্রথম চেষ্টাতেই সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় সফল দৃষ্টিহীন এই তরুণী
ছোট থেকেই ক্লাসে প্রথম ছাড়া কোনওদিন দ্বিতীয় হননি তপস্বিনী। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, দৃষ্টিশক্তির অনুপস্থিতি যেন মেধাবীকন্যার এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনও বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১১
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় অবধি পৃথিবীটা তার কাছে রঙিনই ছিল। তারপর থেকেই দু’ চোখে নিকষ অন্ধকার। কিন্তু চোখের অন্ধকারকে জীবনে চলার পথে নেমে আসতে দেননি তপস্বিনী দাস। দৃষ্টিশক্তিহীন এই তরুণী এ বার সফল হয়েছেন ওড়িশার সিভিল সার্ভিসে। সংরক্ষিত নয়, তিনি পরীক্ষায় বসেছিলেন সাধারণ বিভাগের পরীক্ষার্থী হয়ে।
০২১১
ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা তপস্বিনী পড়তেন ডিএভি স্কুলে। সাত বছর বয়স থেকে তাঁর অসহ্য মাথাযন্ত্রণা হতে শুরু করে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায় তাঁর একটি চোথে দৃষ্টিশক্তি ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। অন্যটিতেও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
০৩১১
দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু চোখের আলো তো ফিরে আসেইনি, উপরন্তু তপস্বিনী সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে যান। তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ, চিকিৎসকের গাফিলতিতেই এই পরিণতি।
০৪১১
ছোট থেকেই ক্লাসে প্রথম ছাড়া কোনওদিন দ্বিতীয় হননি তপস্বিনী। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, দৃষ্টিশক্তির অনুপস্থিতি যেন মেধাবীকন্যার এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনও বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।
০৫১১
ছাড়তে হল ডিএভি স্কুল। তপস্বিনী ভর্তি হলেন দৃষ্টিশক্তিহীন ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ স্কুলে। শুরু হল নতুন যুদ্ধ। ব্রেইল পদ্ধতিকে হাতিয়র করেই সেই যুদ্ধে জয়ী হলেন তিনি। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার পরে স্নাতক স্তর। সব পরীক্ষায় তপস্বিনীর ফল তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।
০৬১১
ক্লাস নাইনে থাকতেই তপস্বিনী ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেবেন। মেয়ের অভিলাষ পূর্ণ করতে পাশে ছিলেন বাবা অরুণকুমার দাস এবং মা কৃষ্ণপ্রিয়া মহান্তি। অরুণকুমার নিজেও ছিলেন ওড়িশা সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। কৃষ্ণপ্রিয়া পড়াতেন স্কুলে।
০৭১১
তপস্বিনী নিজে এখনও ছাত্রী। ভুবনেশ্বরের উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন। এম এ পড়তে পড়তেই প্রথমবারের জন্য বসেছিলেন সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায়। তাতেই বাজিমাত। প্রথমেই ঠিক করেছিলেন তিনি দৃষ্টিহীন বলে কোনও বাড়তি সুযোগসুবিধে নেবেন না। তাই পরীক্ষায় বসেছিলেন জেনারেল ক্যান্ডিডেট হিসেবেই।
০৮১১
তপস্বিনী জানিয়েছেন, এটা তাঁর কাছে নিছক সাফল্য নয়, বরং স্বপ্নপূরণ। পাঁচ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বসেছিলেন ওড়িশা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই পরীক্ষায়। সফল হয়েছেন ২১৮ জন। মেধাতালিকায় তপস্বিনীর স্থান ১৬১ নম্বরে। ওড়িশা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে না হলেও তিনি হয়তো শুল্ক ও রাজস্ব বিভাগে যোগ দেবেন।
০৯১১
তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তপস্বিনী। তাঁর স্বপ্ন ইউপিএসসি-তে সাফল্য। তাঁর আদর্শ দেশের প্রথম দৃষ্টিহীন আইএএস অফিসার প্রাঞ্জল পাতিল। ২০১৮ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল প্রাঞ্জল এখন তিরুঅনন্তপুরমের সাব কালেক্টর।
১০১১
ভবিষ্যতে ইউপিএসসি পরীক্ষায় মেয়ের সাফল্য নিয়ে নিশ্চিত তপস্বিনীর বাবা-মা। তাঁরা কোনওদিন একমাত্র মেয়ের দৃষ্টিহীনতাকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি। মেয়েকেও শিখিয়েছেন, অন্ধত্বকে বাধা হিসেবে না ভাবতে। অন্ধকার থেকেই আলোর পথে উত্তরণ হয়েছে তপস্বিনীর।
১১১১
এর আগেও দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা সফল হয়েছেন ওড়িশা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। ২০১৭ সালে এই পরীক্ষায় সফল হয়ে আটজন দৃষ্টিশক্তিহীন আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। (ছবি: শাটারস্টক ও ফেসবুক)