বিনোদ নিকোলে
মহা-নাটকে জমজমাট মহারাষ্ট্র। সুপ্রিম কোর্টে মামলায় রায় যাই হোক, নানান বড়-ছোট দলের থেকে শুরু করে নির্দল বিধায়ক পর্যন্ত ‘দাম’ এখন অনেক। পাঁচতারা হোটেল বা রিসর্ট নিয়ে গিয়ে তাঁদের আদরে আগলে রাখা হচ্ছে। ফস্কে যাওয়া বা হাতিয়ে নেওয়ার ভয়ে কার্যত বন্দি দশায় দিন কাটাতে হচ্ছে একটা বড় অংশের বিধায়ককে।
কিন্তু এর মাঝে ব্যতিক্রম এক জন। তাঁর রোজকার রুটিনে তেমন কোনও রদবদল হয়নি। তাঁকে নিয়ে কোনও টানাহ্যাঁচড়াও নেই। তিনি মহারাষ্ট্রের একমাত্র সিপিএম বিধায়ক বিনোদ নিকোলে! যে পরিস্থিতিতে এক জন বিধায়কও টাগ অব ওয়ারে থাকা দুই পক্ষের কাছে ভীষণ ভীষণ মূল্যবান, তখন টানাটানির বাইরে নিজেকে রেখে, নিজের মতো করে নিশ্চিন্তে কাটাচ্ছেন তিনি।
কী করে এটা সম্ভব হল? সম্ভব হল, কারণ সব দলই তাঁকে কমবেশি চিনে ফেলেছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে যত বেআইনি বা যত অন্যায়ই হোক, ‘কেনাবেচা’র ঘটনা যে আটকানো যায়নি, তা সবাই জানেন। কিন্তু এই ‘নোংরা রাজনীতি’র মধ্যে বিনোদকে টেনে আনার কথা ভাবতে পারেনি কোনও দল।
আরও পড়ুন: প্রথম বার একসঙ্গে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের ৬২ বিধায়ক, শক্তি প্রদর্শন মহা-জোটের
পালঘর জেলার দহানু বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী বিনোদ রাজ্যের ২৮৮ জন বিধায়কের মধ্যে সবচেয়ে কম সম্পত্তির অধিকারী। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা নথিতে তিনি জানিয়েছেন, ৫২ হাজার ৮২ টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। তবে বিধায়ক হওয়ার পর ৪৩ বছরের বিনোদ জানিয়েছিলেন, নিজের কেন্দ্রের মানুষজনের সমস্যা মেটাতে জোর দেবেন তিনি।
গত ১৫ বছর ধরে সিপিএমের একনিষ্ঠ কর্মী বিনোদ নিজের কেন্দ্রকে হাতের তালুর মতো চেনেন। অপুষ্টি, চিকিৎসা পরিষেবার অভাব বা যথাযথ পরিকাঠামোর অনুপস্থিতিতে সেখানকার মানুষ দিশেহারা। ভোটের আগে সংবাদমাধ্যমে বিনোদ জানিয়েছিলেন, মূলত তাঁদের জন্যই লড়াই চালিয়ে যেতে চান। এক সময় অভাবের চাপে মাঝপথেই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন খেতমজুরের সন্তান বিনোদ। হাইস্কুলের পড়া ছেড়ে এর পর খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে দহানু শহরেই চা ও বড়া-পাওয়ের দোকান খোলেন। সেই দোকানেই এল বি ধাঙ্গাড় নামে এক কমিউনিস্ট নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ। তার পর রাজনীতির পথচলা শুরু।
আরও পড়ুন: আস্থাভোট কবে? ফডণবীস সরকার গঠন কি বৈধ? শীর্ষ আদালত রায় জানাবে মঙ্গলবার
সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা ওই কেন্দ্রের বিধায়ক পাস্কাল ধনারেকে ৪ হাজার ৭৪২ ভোটে হারিয়েছেন বিনোদ। তাঁর জয়ের নেপথ্যে নিজের কেন্দ্রের মানুষজনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক নাটকের নিত্যনতুন বদল ঘটলেও তাতে প্রভাব পড়েনি তাঁর জীবনে। কেন? বোধহয়, নিজের শিকড়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাতারাতি ৯টি সেচ দুর্নীতির ফাইল বন্ধ করলেন ফডণবীস, অজিত-যোগ নেই, দাবি তদন্তকারীদের
ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে বিধায়ক কেনাবেচা যখন প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে সময় বিনোদের মতো এক ব্যতিক্রমী চরিত্ররা ফের এক বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আসলে তিনি ব্যতিক্রম নন। এটাই স্বাভাবিক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy