জয়ের পর কুস্তিগির বিনেশ ফোগাট। ছবি: পিটিআই।
গণনার প্রথম দিকে এগিয়ে ছিলেন। বেলা গড়ানোর আগেই পিছিয়ে পড়েন। হরিয়ানার জুলানা কেন্দ্রে ষষ্ঠ রাউন্ডের গণনা শেষেও হাজারখানেক ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু খেলা ঘুরল নবম রাউন্ডে। ফের চার হাজার ভোটে এগিয়ে গেলেন কংগ্রেসের বিনেশ ফোগাট। পঞ্চদশ তথা শেষ রাউন্ড পর্যন্তও তার হেরফের হল না। বিজেপিকে হারিয়ে জুলানায় শেষ হাসি হাসলেন বিনেশই।
হরিয়ানার জিন্দ জেলার জুলানা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এ বার কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়ছেন কুস্তিগির বিনেশ ফোগাট। প্রতিপক্ষ সেনার অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন বিজেপির যোগেশ কুমার বৈরাগী। গণনা শুরুর একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে যোগেশ এগিয়ে থাকলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ছাপিয়ে এগিয়ে যান বিনেশ। গণনা শুরুর প্রথম এক ঘণ্টা শেষেও এগিয়ে ছিলেন বিনেশই। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে আচমকা বিনেশকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান যোগেশ। দু’জনের মধ্যে হাজার তিনেক ভোটের ব্যবধান ছিল। পঞ্চম রাউন্ডের শেষ থেকেই ব্যবধান কিছুটা কমাতে সমর্থ হন বিনেশ। সপ্তম রাউন্ডে ৩৮ ভোটে এগিয়ে যান। একাদশ রাউন্ডের শেষে সেই ব্যবধান বেড়ে প্রায় ছয় হাজারে গিয়ে ঠেকে। চতুর্দশ রাউন্ডের শেষেও পাঁচ হাজারের ব্যবধান ধরে রাখেন বিনেশ। তখন থেকেই জল্পনার শুরু, তা হলে জুলানায় কি এ বার কংগ্রেসের মান রাখতে পারবেন কুস্তিগির বিনেশ? কারণ কংগ্রেসের ইতিহাস বলছে, ভোটের অঙ্কে এমন আচমকা পালাবদল হওয়া দুঃসাধ্য নয়। শেষমেশ সেই জল্পনাই সত্যি হল। ছ’হাজার ভোটে জিতলেন কুস্তিগির বিনেশ।
মঙ্গলবার সকালে হরিয়ানায় ভোটগণনা শুরুর পর থেকে প্রথমে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। প্রায় ৬০টি আসনে এগিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। গণনার প্রাথমিক ইঙ্গিতে সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় সমীকরণ। এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে শুরু করে বিজেপি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৪৯টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে ৩৫টি আসনে। আইএনএলডি এবং বিএসপির জোট দু’টি আসনে এগিয়ে। অন্যরা এগিয়ে রয়েছে তিনটি আসনে।
ভাগ্যের ফেরে প্যারিস অলিম্পিকে নিশ্চিত সোনা খুইয়ে আসার পর থেকেই বিনেশের নাম দেশের সবার মুখে মুখে ফিরেছে। বিনেশকে কুস্তির রিংয়ের পাশাপাশি বার বার দেখা গিয়েছে নানা আন্দোলনেও। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের তৎকালীন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে বছরখানেক আগে রোদ-জল মাথায় নিয়ে টানা ৪০ দিন যন্তর মন্তরের ধর্নামঞ্চে কাটিয়েছেন বিনেশরা। দাবি তুলেছেন ন্যায়বিচারের। সঙ্গে ছিলেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ারাও। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিনে রাজধানীর রাস্তা থেকে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের টেনেহিঁচড়ে প্রিজ়ন ভ্যানে তুলেছিল দিল্লি পুলিশ। অপমানে, লজ্জায় হরিদ্বারের গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পদক। অথচ এঁদের অনেকেই এক সময় ছিলেন ঘোষিত বিজেপি সমর্থক। কিন্তু দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় অসহযোগিতায়, পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগে সুর বদলেছে তাঁদেরও। এক কালের সমর্থকদের মুখেই স্লোগান উঠেছে ‘মোদী তেরি কবর খুদেগি’, অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর কবর খোঁড়া হবে। সমাজমাধ্যমে জুটেছে ‘দেশদ্রোহী’র তকমাও। তবু দমেননি বিনেশেরা। সব অপমানের জবাব দিতে নতুন উদ্যমে নিজেকে তৈরি করেছেন প্যারিস অলিম্পিকের জন্য। সেই লড়াকু বিনেশ মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় অলিম্পিকের ফাইনাল থেকে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেছেন নিন্দকেরাও।
প্যারিস থেকে দেশে ফেরার পরেই কুস্তি থেকে অবসর ঘোষণা করেন বিনেশ। রেলের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন সক্রিয় রাজনীতিতে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে গিয়ে হাত-শিবিরে যোগ দেন বিনেশ। কংগ্রেসে যোগ দেন কুস্তিগির তথা এক কালের আন্দোলনের সহযোদ্ধা বজরং পুনিয়াও। সে দিনই হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ৩১ জনের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায়, তালিকায় রয়েছে বিনেশের নাম। শেষমেশ বিনেশ হরিয়ানার জুলানা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়তে নামেন। সেই কেন্দ্র থেকে লড়েই দলের মান রাখলেন তিনি। অলিম্পিকে যা পারেননি, এ বার জুলানায় তা-ই করে দেখালেন বিনেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy