কিন্তু দ্রুতগামী রেল প্রকল্প ‘সিলভার লাইন’ ঘিরে যে ভাবে বিরোধিতা দানা বাঁধছে, উন্নয়নের রথ বেশি জোরে ছোটাতে গিয়ে বাংলার বামফ্রন্ট সরকারের পরিণতি হবে না তো? মুখে মানছেন না কেরল সিপিএমের নেতারা। তবে দলের একাংশ সিঁদূরে মেঘ দেখছে!
কান্নুরের ই কে নায়নার অ্যাকাডেমিতে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ২২০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতার অপরিসর আবাসনে তাঁর কাছে খবরটা এখনও কেউ পৌঁছে দেয়নি হয়তো! জেনে তিনি খুশি হবেন, না প্রমাদ গুনবেন, তা-ই নিয়েও দলেই দ্বিমত আছে!
কিন্তু ঘটনা হল, যে উন্নয়নের চাকায় সওয়ার হতে গিয়ে বাংলায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রথ মাটিতে বসে গিয়েছিল, সেই উন্নয়নের রথেই দক্ষিণের কেরলে এ বার চেপে বসেছেন পিনারাই বিজয়ন। কেরলে বেনজির কাণ্ড ঘটিয়ে টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বার্তা দিচ্ছেন, ভবিষ্যতের কথা ভাবলে উন্নয়নের পথে এগোনা ছাড়া বিকল্প নেই। স্বল্পমেয়াদী ভাবনায় যাঁরা এই পরিকল্পনায় বাধা দিতে চাইছেন, তাঁরা উত্তর প্রজন্মের ক্ষতি করছেন। দ্বিতীয় এলডিএফ সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন করার লক্ষ্যে বিজয়নের ‘কেরল মডেলে’র বড়সড় প্রদর্শনী চলছে এই কান্নুরেই। যে শহরে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস বসছে, সেখানে সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের নজর ওই ‘কেরল মডেলে’র দিকে টেনে আনাই যে লক্ষ্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যাকে বলে, রথ দেখা আর কলা বেচা একই সঙ্গে!
বাংলা থেকে আসা চোখে বিজয়নের এই কর্মকাণ্ড দেখলে এবং তাঁর বক্তব্যের সুর শুনলে বুদ্ধবাবুর কথা মনে পড়াই স্বাভাবিক। রাজ্যসভার এক প্রাক্তন সাংসদ তথা কেরল থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণের নিরিখে বু্দ্ধদেব ও বিজয়নের মধ্যে ফারাক আছে। বুদ্ধবাবু যখন শিল্পায়ন ও উন্নয়নের যুক্তি তুলে ধরে এগোতে চাইছিলেন, দলের মধ্যে তাঁর বিরোধিতা নেহাত কম ছিল না। রাজ্য সিপিএমের একাংশ বিরোধিতা করেছিল, কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশও দলের অন্দরে সুযোগ পেলেই প্রবল সমালোচক ছিলেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের পরে বাম সরকার মুখ থুবড়ে পড়ার আগে অবধি প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা অবশ্য প্রকাশ্যে ভিন্ন সুরে বিবৃতি দেননি। বুদ্ধবাবুর পাশে আগাগোড়া ছিলেন বরং তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। আর বিজয়ন এই বিরোধিতার বালাই-ই রাখেননি!
কেন্দ্রীয় কমিটির ওই সদস্যের কথায়, ‘‘দ্বিতীয় এলডিএফ সরকার আসার পরে মন্ত্রিসভায় পুরনো বহু মুখকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। গত মাসে রাজ্য সম্মেলনে দলের রাজ্য নেতৃত্বেও বিজয়নের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন দলের মধ্যে ভিন্ন সুর ধরবে কে?’’ বাম-শাসিত একমাত্র রাজ্য হিসেবে কেরলই যে হেতু প্রদীপ জ্বেলে রেখেছে, তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বিজয়নকে সমঝে চলছেন।
কান্নুরের বার্নাচেরির ই কে নায়নার অ্যাকাডেমিতে কাল, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে পার্টি কংগ্রেস। শহরেরই আর এক দিকে পুলিশ ময়দানে জাঁক-জমক করে চলছে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী। উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং বিজয়ন। কান্নুর তাঁর খাস জেলাও বটে। এ বারের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লাল পতাকা নিয়ে বিশেষ ‘ফ্ল্যাগ ডে’ হয়েছে। কমিউনিস্ট ইতিহাসের টুকরো ছবি ও তথ্য তুলে ধরে সাজানো হয়েছে গোটা কান্নুর। কিন্তু সব কিছুর মধ্যেই সেই বার্তা স্পষ্ট— এটা ‘বিজয়ন শো’!
রাজধানী শহর তিরুঅনন্তপুরমে আগামী ২০ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘এন্টে কেরলম’ প্রদর্শনীর সমাপ্তি হবে। সে দিনই দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজয়নের শপথের এক বছর পূর্তি। সাড়ম্বর আয়োজন এবং দলে আধিপত্য না হ্য় থাকল। কিন্তু দ্রুতগামী রেল প্রকল্প ‘সিলভার লাইন’ ঘিরে যে ভাবে বিরোধিতা দানা বাঁধছে, উন্নয়নের রথ বেশি জোরে ছোটাতে গিয়ে বাংলার বামফ্রন্ট সরকারের পরিণতি হবে না তো? মুখে মানছেন না কেরল সিপিএমের নেতারা। তবে দলের একাংশ সিঁদূরে মেঘ দেখছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy