রাষ্ট্রপুঞ্জে বিদিশা মৈত্র। ছবি: টুইটার।
পুজোর মুখে কার্যত খড়্গহস্ত হয়েই নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশন সরগরম করে দিলেন এক বঙ্গনারী।
স্বভাবে শান্ত, স্বল্পভাষী, ২০০৮ ব্যাচের এই আইএফএস অফিসার পাকিস্তানের চোখে চোখ রেখে কথা বললেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একের পর এক বিষাক্ত ইনসুইঙ্গার শুধু সামলালেনই না, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিদলের ফার্স্ট অফিসার বিদিশা মৈত্র লড়াইটা পৌঁছে দিলেন ইমরানেরই কোর্টে। চমৎকৃত রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ‘জবাব দেওয়ার অধিকার’ (রাইট টু রিপ্লাই)-এ ভারতীয় নবীনাদের যে গৌরবের পরম্পরা সম্প্রতি তৈরি হয়েছে, তার প্রতি তাঁরা শুধু সুবিচারই করেননি, চুলচেরা বিচারে কোথাও কোথাও পূর্বসূরিদের ছাপিয়েও গিয়েছেন।
বিদেশনীতির সঙ্গে দিল্লির প্রবাসী বাঙালি বিদিশার সম্পর্ক যদি কিছুটা পারিবারিক হয়, তা হলে বাকিটা হৃদয়ের। বিদিশার বাবা ছিলেন আদতে ইলাহাবাদের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে আসেন দিল্লিতে।
‘Rarely has the #UNGA witnessed such misuse, rather abuse, of an opportunity to reflect.’ Here’s Indian MEA First Secretary Vidisha Maitra exercising India’s right to reply to @ImranKhanPTI’s juvenile, dangerous and terror-endorsing speech: pic.twitter.com/c3pt2D8jJk
— Shiv Aroor (@ShivAroor) September 28, 2019
বিদেশ মন্ত্রকেই চাকরি ছিল তাঁর। বিদিশা কিন্তু তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন রাজস্ব বিভাগের আইআরএস পরীক্ষা দিয়ে। ২০০৭ সালে মুসৌরিতে যান প্রশিক্ষণ নিতে। বিদেশ মন্ত্রকে যোগ-দেওয়া মায়াঙ্ক সিংহও গিয়েছিলেন সেই প্রশিক্ষণে। সেখানেই বিদিশার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বিদিশা স্থির করেন, তিনি আইআরএস ছেড়ে আইএফএস পরীক্ষায় বসবেন। কারণ সে-ক্ষেত্রে দুজনের এক জায়গায় থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। মায়াঙ্ক এখন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি চিফ অব প্রোটোকল। তবে এই পদে তাঁর কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। শীঘ্রই তিনি আমেরিকার ভারতীয় দূতাবাসে নিযুক্ত হবেন বলে
জানা গিয়েছে।
প্রবাসী হয়েও ঝরঝরে বাংলা বলেন বিদিশা। ফরাসি ভাষাতেও তিনি পারদর্শী। নিউ ইয়র্কে ভারতের কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী বললেন, “আমরা তো বাংলাতেই কথাবার্তা বলি। ‘রাইট টু রিপ্লাই’-এর আগে বাংলাতেই তো আলোচনা করে নিলাম।” মাত্র দু’মাস হল, আমেরিকায় পোস্টিং পেয়েছেন বিদিশা। স্থায়ী ভারতীয় প্রতিনিধিদলের কনিষ্ঠতম অফিসার তিনি। ভারতের যে ‘জবাবের’ দিকে তাকিয়ে থাকার কথা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার, সেই দায়িত্ব এমন এক জনকে কেন দেওয়া হল?
বিদেশ মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে, এর কারণ দু’টি। এর আগেও পরপর দু’বার মহিলা এবং অল্পবয়সিদের (ঘটনাচক্রে তাঁদের মধ্যে এক জন ছিলেন কলকাতার মেয়ে পৌলমী ত্রিপাঠী) বেছে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ভারতের যুবশক্তিকে তুলে ধরার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে কিছুটা অবজ্ঞা করার সঙ্কেতও মিশে থাকছে। অর্থাৎ এটাই বোঝানো যে, পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দেওয়ার জন্য ভারতের কনিষ্ঠতমা অফিসারটিই যথেষ্ট। এর আগে তখনকার কনিষ্ঠতমা পৌলমী রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ফাঁস করে দিয়েছিলেন, কাশ্মীর উপত্যকার নকল ছবি নিয়ে কী ভাবে ইসলামাবাদ প্রচার চালাচ্ছে। ‘টেররিস্তান’ শব্দপ্রয়োগ করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন আর এক নবীনা এনাম গম্ভীর।
তাঁদের পরে বিদিশা। এক বাঙালি কর্তা বললেন, ‘‘কলকাতা এই বক্তৃতা শুনবে মহালয়ার সকালে। বিদিশার হাতে দশপ্রহরণ ছিল না ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের যুক্তিজাল ছিন্নভিন্ন করে দিল নারীশক্তি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy