Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Srinagar

‘উত্তরে শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি’, ভাইরাল ভিডিয়ো

সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় আলতাফের কিশোরী কন্যা জানিয়েছে, তার বাবা জঙ্গি নয়। বরং সংঘর্ষে তার বাবাকে ব্যবহার করেছে সামরিক বাহিনী।

পুলিশ-জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত ব্যবসায়ী মহম্মদ আলতাফ বাটের কিশোরী মেয়ে।

পুলিশ-জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত ব্যবসায়ী মহম্মদ আলতাফ বাটের কিশোরী মেয়ে।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৩৬
Share: Save:

কান্নাভেজা গলায় বাবার মৃত্যুর বর্ণনা দিচ্ছিল ১৩ বছরের কিশোরী। শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ে জানাল, নিরাপত্তা বাহিনীকে সে প্রশ্ন করেছিল, “আমার বাবাকে কেন মারলে?” প্রশ্নের উত্তরে তার জন্য বরাদ্দ ছিল শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর তাচ্ছিল্যের হাসি। সোমবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের হায়দরপোরা অঞ্চলে পুলিশ-জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত ব্যবসায়ী মহম্মদ আলতাফ বাটের কিশোরী মেয়ের ভিডিয়ো নিমেষে ভাইরাল সমাজমাধ্যমে।

সোমবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের হায়দরপোরায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে পুলিশি সংঘর্ষে নিহত হন চার জন। এদের মধ্যে দু’জন সাধারণ নাগরিক। তাঁদের নাম মুদাসির গুল ও আলতাফ বাট। মুদাসির পেশায় দন্তচিকিৎসক, ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে তাঁর একটি চেম্বার ছিল। আর আলতাফ ছিলেন ওই বাণিজ্যিক ভবনের মালিক, সেখানে তাঁর একটি দফতরও ছিল। প্রথমে তাঁদের জঙ্গি গোষ্ঠীর সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত করলেও পরে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয় গুলিযুদ্ধের মাঝে পড়ে ওই দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে সংঘর্ষে নিহত আরও দু’জন হায়দর ও আমির মাগরে আসলে জঙ্গি, এই দাবিতে অনড় পুলিশ।

সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় আলতাফের কিশোরী কন্যা জানিয়েছে, তার বাবা জঙ্গি নয়। বরং সংঘর্ষে তার বাবাকে ব্যবহার করেছে সামরিক বাহিনী। তার আত্মীয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, সে দেখেছে আলতাফকে তিন বার ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে যায় বাহিনী। তৃতীয় বার তিনি আর ফিরে আসেননি। একই কথা শোনা গিয়েছে আলতাফের অপর এক আত্মীয়া সালিমার মুখেও। টুইটারে পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাকাকে ‘মানব ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আলতাফ-কন্যার ভিডিয়োয় উঠে এসেছে মুদাসির গুলের ছেলের কথাও। সে জানিয়েছে, তার ভাই মুদাসির গুলের ছেলের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে। দুই পরিবারের তরফেই প্রশ্ন তুলেছে ১৩ বছরের কিশোরী, বাবাকে হারিয়ে এ বার তারা কী করবে? একই সঙ্গে দেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে নিহতদের পরিবারের তরফে।

হায়দরপোরায় সংঘর্ষের পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীর পদক্ষেপ নিয়ে। যদিও বাহিনীর দাবি, হায়দরপোরার ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে বসে জঙ্গিরা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নাশকতার ছক কযছিল। আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে নিহতদের দেহ এখনই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও পুলিশের দাবি মানতে রাজি নয় আলতাফ ও মুদাসিরের পরিবার। তাদের দাবি, ‘ভুয়ো’ সংঘর্যে হত্যা করা হয়েছে মুদাসির ও আলতাফকে। বুধবার একটি প্রতিবাদ মিছিলে একজোট হয়ে দেহ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। মুদাসিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলেকে এক বার বাবাকে শেষ দেখা দেখতে দেওয়া হোক।

জঙ্গি তকমা পাওয়া আমিরের বাবা আবদুল লতিফ মাগরে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে শ্রীনগরের একটি দোকানে কাজ করত। কোনও মতেই সে জঙ্গি নয়। তাঁদের পরিবারের কেউ কখনও জঙ্গি হতে পারে না। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে কাশ্মীরের রামবান জেলায় পাথর ছুড়ে জঙ্গি নিধন করেছিলেন আবদুল। তার জন্য সেনার থেকে শংসাপত্রও পেয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “আমি নিজে পাথর ছুড়ে জঙ্গি মেরেছি। ১১ বছর ধরে জঙ্গিদের জন্য এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বাসস্থান বদলাতে হয়েছে আমাদের। তার পুরস্কার কী পেলাম? আমার ছেলেকে আজ জঙ্গি বলে চিহ্নিত করা হল।”

এ দিকে, দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলায় বুধবার সংঘর্ষে নিহত হয়েছে পাঁচ জঙ্গি। তাদের মধ্যে এক জন নেতৃস্থানীয়, বুধবার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এই খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

Srinagar Viral Security Forces
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE