—ছবি সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, প্রস্তুতি শেষ ধাপে। আর প্রতিষেধকের ছাড়পত্র সংক্রান্ত কমিটির শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, নতুন বছরে সম্ভবত হাতে ‘কিছু একটা’ থাকবে। ফলে বর্ষশেষের রাতে অনেকের মনে আশা— নতুন বছরের প্রথম দিনেই হয়তো ভারতে ছাড়পত্র পেতে চলেছে করোনার এক বা একাধিক প্রতিষেধক।
এ দেশে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষেধক ব্যবহারের ছাড়পত্র চেয়ে তিন সংস্থার আবেদন পর্যালোচনা করতে আগামিকাল বৈঠকে বসছে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। তবে তার আগেই আজ ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ভি জি সোমানি একটি ওয়েবিনারে বলেন, ‘‘আমি এটুকু ইঙ্গিত দিতে পারি যে, আগামিকাল নতুন বছরের প্রথম দিনে আমাদের হাতে কিছু থাকবে।’’ এর বেশি আর ব্যাখ্যা করেননি সোমানি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি বড় অংশের আশা, পয়লা জানুয়ারিতেই দেশবাসীকে সুখবর শোনাবে ডিসিজিআইয়ের অধীনস্থ বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ দেশে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধক ছাড়পত্র পাবে কি না, সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ওই কমিটিই। গত কাল ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের টিকার ছাড়পত্র পাওয়াকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করে এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়াও আশাবাদী যে, কয়েক দিনের দিনের মধ্যে প্রতিষেধক ছাড়পত্র পাবে ভারতে।
দেশ যে প্রতিষেধক পাওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, আজ সকালে তা কার্যত স্পষ্ট করে দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের রাজকোটে এমসের শিলান্যাসের মঞ্চ থেকে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘প্রতিষেধকের বিষয়ে ভারতে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। এ দেশে তৈরি প্রতিষেধক দ্রুততার সঙ্গে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস এখন অন্তিম পর্যায়ে।’’ একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাকরণ অভিযান’ বলে ব্যাখ্যা করেন মোদী।
আরও পড়ুন: ২০২২-এর মার্চেই কোভিডের আগের অবস্থায় ফিরবে অর্থনীতি: নীতি আয়োগ
আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির আড়ালের সেনাপতি শিবপ্রকাশের দায়িত্ব বাড়ল ভোটের মুখে
এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারের ছাড়পত্রের আবেদন করেছে তিনটি সংস্থা— ফাইজ়ার, ভারত বায়োটেক ও সিরাম ইনস্টিটিউট। ফাইজ়ারের টিকা ব্রিটেনে ছাড়পত্র পেয়েছে, যার ভিত্তিতে এ দেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না-করেই টিকা ব্যবহার করতে চেয়েছে ফাইজ়ার। হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেকের নিজস্ব টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা এখনও চলছে। তাই দ্বিতীয় ধাপের তথ্যের ভিত্তিতে ছাড়পত্র চেয়েছে বায়োটেক। তৃতীয় সংস্থা হল সিরাম। তারা ভারতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার তৈরি
‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকের পরীক্ষা ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে। ভারতে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ছাড়াও ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া পরীক্ষার ফলও জমা দিয়েছে তারা।
ওই তিন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করতে আগামিকাল, অর্থাৎ গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় এ নিয়ে দ্বিতীয় বার বৈঠকে বসতে চলেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। ডিসিজিআই সোমানি আজ বলেন, ‘‘কোভিড অতিমারির কথা মাথায় রেখে (টিকাকে) ছাড়পত্র দেওয়ার পদ্ধতি ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ করা হয়েছে। তা করতে গিয়ে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বটিকে সমান্তরাল ভাবে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সুরক্ষার প্রশ্নে কোনও আপস করা হয়নি।’’ ঘরোয়া মহলে সিরাম ও বায়োটেক দুই সংস্থাই আশা করছে, আগামিকাল তাদের প্রতিষেধক ছাড়পত্র পাবে। তবে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র মেলায় এই দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে অক্সফোর্ডের টিকা। আজ সিরামের অন্যতম শীর্ষ কর্তা উমেশ শালিনগাম দাবি করেন, ‘‘সংস্থা ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত কোটি প্রতিষেধক উৎপাদন করে ফেলেছে। অনুমতি পেলে জানুয়ারির মধ্যে সেই সংখ্যা দশ কোটি ছুঁয়ে ফেলবে।’’
কেন্দ্রের লক্ষ্য, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকেই এ দেশে গণ-টিকাকরণ শুরু করা। করোনার টিকা দেওয়া শুরু হলে অতীতের পোলিয়োর মতো তা নিয়ে দেশ জুড়ে গুজব ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। একই চিন্তা প্রধানমন্ত্রীরও। আজ মোদী বলেন, ‘‘আমাদের দেশে গুজবের বাজার এমনিতেই চড়া থাকে। কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে থাকেন। হতে পারে, প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলে গুজবেরও বাজার আরও চড়বে। কারও (সরকারের) ক্ষতি করতে গিয়ে মানুষের হিতের কথা না-ভেবে অগুনতি কাল্পনিক, মিথ্যা প্রচার করা হবে। কিছু তো ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, করোনার মতো অচেনা দুশমনের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে গুজবকে প্রশ্রয় দেবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা এল, তা-ই ফরোয়ার্ড করবেন না।’’ প্রতিটি দেশবাসীকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গণ-টিকাকরণ অভিযানে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে যোগদান করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy