Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

বিপর্যয়ের আশঙ্কা আগেই করেছিলেন উত্তরাখণ্ডের রাইনি গ্রামের বাসিন্দারা

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ে অনেকেই আঙুল তুলেছেন ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে। ২০১৯ সালে রাইনির বাসিন্দারা ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদালতে যান।

বিপর্যয়ের পর উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় চলছে উদ্ধারকাজ।

বিপর্যয়ের পর উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
দেহরাদূন শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:১২
Share: Save:

হিমালয়ের কোলে একের পর এক বিপর্যয় ঘটে গেলও উত্তরাখণ্ডের রাইনি গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা কাজে আসেনি। সম্প্রতি চামোলি জেলায় হিমবাহের একাংশ ভেঙে যে বিপর্যয় হল, তা-ও এ কথা প্রমাণ করল। শনিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৮। নিখোঁজ ২০০-রও বেশি।

গত শতকের সাতের দশকে ‘চিপকো’ আন্দোলনের ধাত্রীভূমি বলে পরিচিত উত্তরাখণ্ডের অলকানন্দা উপত্যকার ওই গ্রামের লোকজন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যথেচ্ছ গাছ কাটা, যেখানে-সেখানে সেতু তৈরি, বাঁধ দেওয়া অথবা পর্যটকদের আনাগোনায় রাশ টানা না হলে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে উত্তরাখণ্ড। সে সময় এই গ্রামের বাসিন্দাদের আন্দোলেনর চাপেই মূলত ১৯৮০ সালে বনআইন পাশ হয় সংসদে। তার পর থেকে এই গ্রামের বাসিন্দারা লাগাতার প্রকৃতি ধ্বংস করার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। কিন্তু, তাঁদের কথায় কোনও হেলদোল হয়নি। উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বিপর্যের পর ফের এক বার ওই সতর্কবার্তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।

৭ ফেব্রুয়ারি চামোলি জেলার রাইনি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে যেন দুঃস্বপ্নের বিভীষিকা নিয়ে এসেছিল। হড়পা বানের ধাক্কায় ঋষিগঙ্গা উপত্যকায় ভাসিয়ে নিয়ে গিছে সেতু, রাস্তা, ঘরবাড়ি— সব কিছুই। চারপাশের কাদামাটি এবং ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে উদ্ধারকাজে নামতেই লেগে গিয়েছে সপ্তাহখানেক। তা-ও সব জায়গায় পৌঁছতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ঋষিগঙ্গার বাঁধের টানেলে এখনও অনেকে চাপা পড়ে রয়েছেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আবহাওয়াও।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হিমালয় উপত্যকায় এ ধরনের বিপর্যয় অবশ্য আগেও দেখেছেন রাইনি গ্রামের বাসিন্দারা। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথকে কার্যত ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল প্রাণঘাতী বন্যা। ওই হড়পা বানে নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৬ হাজার। রাজ্য প্রশাসনের তরফে তাকে ‘হিমালয়ের সুনামি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে হড়পা বান বা ধসের চিত্র পরিচিত হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাহীন ভাবে পর পর বাঁধ নির্মাণ, তড়িঘড়ি সড়ক তৈরি করা, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ নির্মাণ বা নিকাশি ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থার সঙ্গে হিমালয়ের কোলে পর্যটকদের বাড়বাড়ন্তের ফলে কেদারনাথের বিপর্যয় ঘটেছিল। সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ কমিটি ওই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিল। কেদারনাথের বিপর্যয়ের ফলে বাঁধগুলিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল কি না, তা-ও তদন্তের ভার পড়েছিল কমিটির। কমিটির তদন্তে প্রকাশ, বাঁধ নির্মাণর জন্য পাহাড়ের ধারে বড় বড় টানেল তৈরি করায় তা আসলে পাহাড়কেই দূর্বল করে দিয়েছিল। যার ফলে ধসের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল।

উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পিছনে অনেকেই আঙুল তুলেছেন পাহাড়ের কোলে ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে। ২০১৯ সালে রাইনি গ্রামের বাসিন্দারা ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদালতে জনস্বার্থ মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় গ্রামবাসীদের হয়ে আদালতে লড়েছিলেন আইনজীবী অভিজিৎ নেগি। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর কাছে অভিজিৎ বলেন, ‘‘অত্যন্ত সীমিত সংস্থান নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন রাইনি-র বাসিন্দারা। কথাবার্তা বলছিলেন স্থানীয় ভাষায়। তবে তার মধ্যেই নিজেদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা বলেছিলেন, এই প্রকল্প যদি ঠিকমতো রূপায়িত না হয়, তবে এক দিন আমাদের পাহাড়ই ভেঙে পড়বে।’’

কাদামাটিতে ঢাকা পড়েছে রাইনি গ্রাম।

কাদামাটিতে ঢাকা পড়েছে রাইনি গ্রাম। ছবি: পিটিআই।

গ্রামবাসীদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। বিপর্যয় এড়ানো যায়নি রবিবার। নেগির অভিযোগ, রবিবারের হড়পা বানের সময় জলের স্রোতে ওই ধ্বংসস্তূপ ধেয়ে এসেছিল নীচের দিকে। যা ভাসিয়ে দিয়েছিল তপোবন প্রকল্প-সহ আরও অনেক কিছু।

গত রবিবারের বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ। ’১৯-এ আদালতে গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য হিমাবাহে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে, নদীবক্ষে চলছে ড্রিলিং। কুন্দন গ্রুপ প্রকল্পের নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে। তবে সে অভিযোগ নস্যাৎ করে দেয় সংস্থাটি। সে বছরই ওই প্রকল্পে দু’টি স্থগিতাদেশ দেয় উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট। সমস্ত বিস্ফোরণ বন্ধ করা ছাড়াও প্রকল্পের জন্য যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে, তা সরানোরও নির্দেশ দেয় আদালত। তবে আদালতের নির্দেশই সার। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই নির্দেশ সত্ত্বেও বিস্ফোরণ চলতেই থাকে। বিস্ফোরণের পর যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছিল, তা-ও সরানো হয়নি। তা নিয়ে আরও এক বিপর্যয়ের সিদুঁরে মেঘ দেখছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। পরিবেশবিদ তথা সাতের দশকে চিপকো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চণ্ডীপ্রসাদ ভট্ট সিএনএন-কে বলেন, ‘‘আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে ১৯৭০-এর মতো আর একটা ধ্বংসলীলা দেখতে হবে না। তবে যে ভাবে গত কয়েক দশকে পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে এই এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজকর্ম শুরু হয়েছিল, তাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করতে শুরু করেছিলাম। তবে উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বিপর্যয় আমাদের সমস্ত আশঙ্কাকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

flood Uttarakhand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy