বিপর্যয়ের পথ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রত্যেকটা ভয়ঙ্কর রাতের পরেই একটা ঝলমলে সকাল আসে। রবিবারের পর সোমবার সকালটাও তেমনই। রবিবার সারাদিন আকাশ ছিল মেঘলা। বৃষ্টি হয়েছে মাঝে মাঝেই। সোমবার কড়া রোদে সব ঝকঝক করছে। আকাশ পরিষ্কার। পরিষ্কার তপোবন বিষ্ণুগ়ড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকাটাও। পাহাড়ের উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলে, পুরনো কংক্রিটের ইতিউতি খণ্ডাংশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।
টানেলের মধ্যে সোমবার সকালেও বহু লোক আটক। একটা টানেল থেকে উদ্ধার হয়েছেন অনেকে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমাদের সামনে দিয়েই। দ্বিতীয় টানেলে যাঁরা আটকে, তাঁদের অনেকের বাড়ির লোক এসে হাজির হয়েছেন তপোবন এলাকায়। পাথর ফাঁকে, কাদার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে একাধিক মৃতদেহ। চেনার উপায় নেই। তবু নিখোঁজদের বাড়ির মানুষরা অপেক্ষায় আছেন, যদি খোঁজ পান তাঁদের।
সকাল থেকে এলাকায় উদ্ধার কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন সেনাবাহিনীর জওয়ান, ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ কর্মীরা। মাটি খোঁড়া হচ্ছে, দুর্বল কাদা মাটি ধসে গিয়ে আবার সেই গর্তের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রাণের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। কত জন আটকে আছেন টানেলে? কেউ বলছেন ১০০, কেউ বলছেন ১৫০, কেউ বলছেন তার চেয়েও অনেক বেশি।
কী ভাবে ঘটল ঘটনা? এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবু স্থানীয় মানুষের ধারণা, রন্টি নালার কাছে ধসের কারণে পাথরের দেওয়ালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হিমবাহের মুখ। তাতে তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী জলাধারও। জলের চাপে সেই পাথরের দেওয়ালই রবিবার ভেঙে গিয়েছে। আর বেরিয়ে এসেছে বিপুল পরিমাণে জল।
রন্টি নালার দিকে পর্যটকরা বিশেষ যান না। পর্বতারোহনও খুব কম হয়। ফলে ওখানে কবে অস্থায়ী জলাধার তৈরি হয়েছিল, তা বলা কঠিন। কিন্তু স্থানীয় মানুষ এটাকেই এখন বিপর্যয়ের কারণ বলে মনে করছেন।
কিন্তু এই ভাবনা, এই কারণ বিশ্লেষণ, এই তত্ত্ব— এর কোনওটাই পারবে না হারিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে দিতে। তবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।
রবিবার বলাগাঁও, রেনি গ্রামের অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই তালিকায় ছিলেন আমার বেশ কয়েক জন বন্ধুও। শঙ্কর সিংহ রানা তার মধ্যে একজন। সোমবার সকাল পর্যন্ত তার কোনও খোঁজ নেই। জানি না, তার সঙ্গে আর কখনও দেখা হবে কি না। আপাতত অপেক্ষা এই তপোবনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy