আগামী জানুয়ারি মাসেই উত্তরাখণ্ডে কার্যকর হবে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’। দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে সেখানে চালু হতে চলেছে এই আইন। বুধবার এ কথা জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা পুষ্কর সিংহ ধামী। তিনি বলেন, ‘‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের সরকার সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েছে।’’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরখণ্ড বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়েছিল ধামী সরকার। সেই প্রথম দেশের কোনও রাজ্যের বিধানসভায় এই বিল পাশ হয়েছিল। এর পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ওই বিলে অনুমোদন দেন। চলতি বছরের অক্টোবরে বিধানসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই ওই আইন কার্যকরের ‘গেজেট নোটিফিকেশন’ জারির খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করে ধামী সরকার।
বস্তুত, ২০২২ সালে উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা ভোটে বিজেপি জিতলেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ধামী। ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফেরার পরেই সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হয়েছিলেন তিনি। উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার আইনি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে সে রাজ্যের সরকার। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছিল বিলের খসড়া।
সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত এক এবং অভিন্ন আইন প্রচলনের কথা বলা হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে। সূত্রের খবর, সুপারিশের খসড়ায় ধর্ম নির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ বন্ধ এবং একত্রবাস নথিভুক্ত করার আইনের কথা বলা হয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান, তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন। ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলকের কথা বলা হয়েছে এই বিধিতে। কোনও যুগল ‘লিভ-ইন’ করতে চাইলে প্রথমেই তাঁদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ঘোষণাপত্র সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা আছে এই বিলে। দম্পতিকে নির্দিষ্ট সময় ‘কুলিং অফ’ পিরিয়ডে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিলে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার থাকবে। জন্ম দেওয়া সন্তান এবং দত্তক নেওয়া সন্তান— দু’জনেই সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমানাধিকারী হবে।