স্ট্যান স্বামী। —ফাইল চিত্র।
রাতারাতি গায়ে ‘শহুরে নকশাল’ তকমা সেঁটে জেলে ভরে দেওয়া হয়েছিল। তার পর বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ, বার বার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। আজীবন আদিবাসীদের সামাজিক অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু তাই নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। এমন পরিস্থিতিতে এ বার গোটা মামলার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলল আমেরিকার একটি ফরেনসিক সংস্থা। তাদের দাবি, স্ট্যান স্বামীর মতোই মাওবাদী সংযোগের অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে সুরেন্দ্র গ্যাডলিংকে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রমাণ দেখানো হয়েছে, তার সবটাই ভুয়ো। হ্যাকার নিয়োগ করে সেগুলি তৈরি করা হয়েছিল। ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে দু’বছর ধরে মাওবাদীদের ওই চিঠি তাঁর কম্পিউটারে ঢোকানো হয়, যাতে মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রমাণ করা যায়।
স্ট্যান স্বামীর মতোই নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই(মাওবাদী)-এর সঙ্গে সুরেন্দ্রর সংযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। সন্ত্রাসী আইনে গ্রেফতার করা হয় মোট ১৬ জনকে। বলা হয় ইমেলে মাওবাদীদের সঙ্গে কথোপকথন চালাতেন তাঁরা। ভীমা-কোরেগাঁও হিংসায় তাঁদের দায়ী করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগও আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সুরেন্দ্রর কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভটি পরীক্ষা করে আমেরিকার বস্টনের সংস্থা আর্সেনাল কনসাল্টিং জুন মাসে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, দলিতদের অধিকার নিয়ে লড়াই করা সুরেন্দ্রর অনলাইন গতিবিধির উপর ২০ মাস ধরে নজর রাখছিল অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকাররা। যে সমস্ত ব্যক্তি এবং সংগঠনের সঙ্গে ইমেলে কথা বলতেন সুরেন্দ্র, একই রকমে ম্যালওয়্যার তৈরি করে ইমেলে সুরেন্দ্রকে পাঠানো হয়। ২০১৬-র ২৯ ফেবরুয়ারি সেই ম্যালওয়্যার খোলেন সুরেন্দ্র। তাতেই তাঁর কম্পিউটার, ইমেল অ্যাকাউন্ট এবং কম্পিউটারে মজুত যাবতীয় নথিপত্রের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হ্যাকারদের হাতে চলে যায়।
আর্সেনাল কনসাল্টিং জানিয়েছে, ২০১৬-র ডিসেম্বর থেকে ২০১৭-র অক্টোবর পর্যন্ত ষড়যন্ত্রমূলক ১৪টি চিঠি ‘মেটেরিয়াল’ নামের একটি গোপন ফোল্ডারে রেখে দেয় হ্যাকাররা। এমনকি, সুরেন্দ্র ওই ফোল্ডার কখনও খোলেনইনি বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। একই ধরনের ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে ৩০টি নথি তৈরি করে মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত রোনা উইলসনের ইমেলেও ৩০টি নথি ঢোকানো হয়েছিল বলে এর আগে দাবি করেছিল আমেরিকার সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। তারাও আর্সেনাল কনসাল্টিংয়ের রিপোর্টই তুলে ধরেছিল। ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে লেখা ওই ইমেল স্ট্যান স্বামী এবং সুধা ভরদ্বাজকেও পাঠানো হয়। তাই প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা প্রমাণ এবং নথিও হ্যাকারদের তৈরি।
সুরেন্দ্রর কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভটি এনআইএ-র কাছেই রয়েছে। তার একটি কপি রয়েছে সুরেন্দ্রর আইনজীবীদের কাছেও। তাঁরাই আর্সেনাল কনসাল্টিংয়ের কাছে সেটি পাঠিয়েছিলেন। তা যাচাই করেই ওই রিপোর্টটি তৈরি করেছে আর্সেনাল কনসাল্টিং। ওই সংস্থা এর আগে বস্টন ম্যারাথন বিস্ফোরণের মতো উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে যুক্ত ছিল। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর পর ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্তদের নিয়ে তৈরি তাদের রিপোর্ট নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy