কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের কন্যা টি বীণা। ছবি: সংগৃহীত।
এ বার ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বে বিতর্ক কেরলের রাজনীতিতেও। ‘প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কন্যা একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে তিন বছরে এক কোটি ৭২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন, এই অভিযোগে দক্ষিণী ওই রাজ্যে সরব হয়েছে বিজেপি। সেই বিতর্কেই নতুন ইন্ধন দিয়ে আসরে নামলেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। অভিযোগের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। শাসক দল সিপিএম অবশ্য অভিযোগ এবং গোটা বিতর্কই ‘ভিত্তিহীন’ বলে খারিজ করে দিয়েছে। যে বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী-কন্যার কাছে টাকা যাওয়া নিয়ে হইচই, সেই সংস্থাও জানিয়েছে চুক্তি মোতাবেকই যা হওয়ার, হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের কন্যা টি বীণা একটি পরামর্শদাতা সংস্থা চালান। আয়কর দফতরের সেট্লমেন্ট বোর্ড সম্প্রতি নয়াদিল্লি থেকে একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, কেরলের একটি বেসরকারি সংস্থা সিএমআরএল-এর কাছ থেকে বীণার সংস্থার কাছে এক কোটি ৭২ লক্ষ টাকা গিয়েছে ‘অবৈধ’ ভাবে। ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংযোগের কারণেই মাসিক কিস্তিতে ওই টাকা বীণা পেয়েছেন বলে আয়কর দফতরের ওই শাখার দাবি। বীণার স্বামী মহম্মদ রিয়াজ় ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের নেতা, এখন তিনি কেরলে এলডিএফ মন্ত্রিসভার সদস্য। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি। এমতাবস্থায় কোচিতে গিয়ে রাজ্যপাল আরিফ বলেছেন, ‘‘অভিযোগের যাবতীয় তথ্য এখনও হাতে আসেনি। তবে যতটা সামনে এসেছে, তাতে অভিযোগ যথেষ্টই গুরুতর। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে কি না, ভেবে দেখছি।’’
রাজ্যপাল ‘সক্রিয়’ হওয়ার আগেই সিপিএম অবশ্য এমন বিতর্কের পিছনে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’র পাল্টা অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের কোণঠাসা করার লক্ষ্যে নানা রকম অভিযোগ খাড়া করে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং শাসক ফ্রন্ট এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজনের বক্তব্য, ‘‘বীণা একটি নামী পরামর্শদাতা সংস্থা চালান। যে বেসরকারি সংস্থার কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসেবে বীণার সংস্থার চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী টাকা মেটানো হয়েছে। পুরোটাই তো সাদা এবং টিডিএস কেটে আয়কর দফতরের কাছে তার সব হিসেবও গিয়েছে। এর মধ্যে অস্বচ্ছতা বা অবৈধ কিছু এল কোথা থেকে?’’ জয়রাজনের আরও দাবি, ‘‘সাজানো অভিযোগ তুলে হইচই করা রাজনৈতিক অভিসন্ধিরই অঙ্গ। যদি বেআইনি ভাবে টাকা নেওয়া হত, তা হলে তো ওই সংস্থা অভিযোগ করত! তারা কি এমন কিছু অভিযোগ করেছে?’’ ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এন শশীধরন কার্তাও আয়কর দফতরকে জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিপণন এবং সফ্টঅয়্যার সংক্রান্ত চুক্তি ছিল পরামর্শদাতা সংস্থার (বীণা যার প্রধান) সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ীই টাকা মেটানো হয়েছে। আয়করের সেট্লমেন্ট বোর্ডের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, যে সময়ের চুক্তি ছিল, এই টাকা সেই সময়ের নয়।
বাম-শাসিত রাজ্যে এমন অভিযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয় বিজেপি। দলের কেরল রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের দাবি, ‘‘বিরোধী দলগুলি দুর্নীতিগ্রস্ত বলেই জাতীয় স্তরে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। কোনও পরিষেবা না দিয়েই এখানে মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা তাঁর প্রভাব খাটিয়ে টাকা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত প্রয়োজন।’’ কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরনকে একটি প্রতারনার মামলায় নোটিস দিয়েছে ইডি। বিজয়ন-কন্যাকে নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেস এখনও বিশেষ হইচই করেনি। সুধাকরনের মতে, ‘অস্বচ্ছ’ কিছু না থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর কন্যার উচিত সব তথ্য সামনে আনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy