Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Google

মুসলিম মায়ের সঙ্গে মিলন রাম-ঘরনির

রামদুলারি মালিকের কাছে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মেয়েটি যে মুসলিম। নাম সরিতন্নেসা। রাম জানায়, কুছ পরোয়া নেই।

৪০ বছর পরে: জামাই, নাতি ও মেয়ে আশার সঙ্গে হাজেরা খাতুন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

৪০ বছর পরে: জামাই, নাতি ও মেয়ে আশার সঙ্গে হাজেরা খাতুন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

বারো বছরের এক কিশোরীকে গুয়াহাটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে সতেরো বছরের কিশোর রামদুলারি প্রসাদের মায়া হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কিশোরটি গুয়াহাটিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মেয়েটিকে সে মালকিনের কাছে নিয়ে আসে। তিনি তাকে বাড়ির কাজে লাগান। রামদুলারি যখন ২৩, সে গোরক্ষপুরে, নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ততদিনে প্রাপ্তবয়স্ক ওই কিশোরীও। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে প্রেম।

রামদুলারি মালিকের কাছে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মেয়েটি যে মুসলিম। নাম সরিতন্নেসা। রাম জানায়, কুছ পরোয়া নেই। বউয়ের নাম দেয় ‘আশাদেবী’। গুয়াহাটিতে বিয়ে সেরে রাম ও আশা পাড়ি দেয় গোরক্ষপুরে। পিছনে পড়ে থাকে সরিতন্নেসার অতীত। সেই স্মৃতি, গুগল আর ছেলের নাছোড়বান্দা মনোভাবের জেরেই চার দশক পরে দেখা হল মা-মেয়ের।

মেয়েকে দেখে আত্মহারা, অশীতিপর হাজেরা খাতুন জানান, অভাবের সংসার। তাই একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই গুয়াহাটিতে বিভিন্ন বাড়িতে তিনি কাজ করতেন। মেয়েকে রেখে যেতেন অস্থায়ী আস্তানায়। এক দিন মাকে খুঁজতে বেরিয়ে হারিয়ে যায় সরিতন্নেসা। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও মেয়েকে না পেয়ে গ্রামে ফিরে আসেন হাজেরা।

এ দিকে, রামদুলারি ও আশাদেবীর তিন সন্তান। এখনও মিস্ত্রির কাজ করা রামদুলারিবাবু ছেলেদের লেখাপড়ায় কার্পণ্য করেননি। বড় ছেলে এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্ন। মেজো বিজ্ঞানের শিক্ষক। ছোট ছেলেও ডাক্তারি পড়ছে। আশাদেবী বলেন, “ছোট ছেলেকে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে একদিন বলি, খুঁজে দে দেখি আমার গ্রামটা।” নগরবেরা আর জলজলি নদীর নামটুকুই মনে ছিল আশার।

ছেলে খোঁজ শুরু করে। মিলে যায় নগরবেরার সার্কল অফিসার ধ্রুবজ্যোতি দাসের মোবাইল নম্বর। সেখানে ফোন করেই মায়ের গল্প শোনায় ছেলে। ধ্রুবজ্যোতিবাবু খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কল্যাণপুর-বালিজারা গ্রামে হাজেরা খাতুনের মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি এখনও বেঁচে। সেই গ্রামের পাশেই বইছে জলজলি। গত সপ্তাহে স্বামী ও ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ বছর পরে সরিতন্নেসা হাজির হন তাঁর শৈশবের গ্রামে। ১২ বছরের সেই হারানো মেয়ে এখন ৫২। তিন সন্তানের মা। হাজেরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না!

কিন্তু হিন্দু মা যে আসলে মুসলিম, তা জেনে সমস্যা হয়নি ছেলেদের?

আশাদেবী জানান, ছেলেরা বড় হওয়ার পরেই সে কথা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের
জন্মগত ধর্ম নিয়ে তাদের কারও মাথাব্যথা ছিল না। রামদুলারি বিশ্বাস করেন, ‘‘এক দিন অসহায় এক কিশোরীকে আশ্রয় দিয়ে যে পুণ্য করেছেন, তারই ফল তিন রত্ন-ছেলে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Google Gorakhpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy