Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
CAA

CAA: ক্ষতিপূরণ দাও, পুলি‌শি হেনস্থা উত্তরপ্রদেশে

দেশজুড়ে বেনজির বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে নস্যাৎ করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ) পাশ করিয়ে নেয় মোদী সরকার।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৪১
Share: Save:

প্রথমে হয়েছে ধর-পাকড়। দাঙ্গা, সরকারি কাজে বাধা, সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র, বেআইনি জমায়েত এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের মতো অভিযোগে একের পর এক মামলা দিয়ে জেলে ভরে হেনস্থা করা হয়েছে গরিব মানুষগুলোকে। জেল থেকে জামিনে বেরিয়েও রেহাই নেই। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির বিভিন্ন একতরফা হিসেব দিয়ে পুলিশ এ বার সেই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে সেই সব পরিবারকে। এ সব দেখে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাওয়া পরিবারগুলির প্রশ্ন— দু’বছর আগে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আর কত ‘প্রতিশোধ’ নেবে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার!

দেশজুড়ে বেনজির বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে নস্যাৎ করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ) পাশ করিয়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু তার পরে তা কার্যকর করেনি এখনও। কবে করবে তার কোনও দিনক্ষণও বলতে পারছেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নানা শহরে ও মহল্লায় যে সব সাধারণ মানুষ পরিবার নিয়ে দেশছাড়া হওয়ার আতঙ্কে এই আইনের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছিলেন, দু’বছর ধরে তাঁদের সইতে হচ্ছে প্রশাসনের নির্যাতন। এমনিতেই অন্য সব রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভকারীদের প্রতি নির্দয় আচরণ করেছে পুলিশ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে যথেচ্ছ লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে রাজ্যে পুলিশের হাতে মারা গিয়েছিলেন ২২ জন। আন্দোলনকারীদের ধরে গুরুতর অভিযোগে একের পর এক মামলা দিয়ে হেনস্থাও করা হয়েছে। এর পরে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নামে চলছে আর এক দফা নির্যাতন। অভিযোগ, সম্পত্তি ভাঙার ঘটনায় অভিযুক্ত জড়িত ছিলেন— এমন কোনও প্রমাণ দেখাতে রাজি নয় পুলিশ। এমনকি এ জন্য কোনও আইনও হাতে নেই তাদের। হাই কোর্টে একটি মামলায় বিচারপতির নির্দেশকে সর্বজনীন হিসেবে দাবি করে তারা ভোটের মুখে ক্ষতিপূরণ আদায়ের অভিযান শুরু করেছে। সেই নির্দেশও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

উত্তরপ্রদেশের ১০টি জেলায় সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের হাতে ক্ষয়ক্ষতির ৩.৩৫ কোটি টাকার হিসেব তৈরি করে তা আদায়ের জন্য ৫০০-রও বেশি নোটিস জারি করেছে প্রশাসন। পুলিশ গিয়ে পরিবারগুলির হাতে নোটিস ধরিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়ে এসেছে— নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে নির্ধারিত পরিমাণ টাকার অঙ্ক জমা দিয়ে আসতে হবে। অন্যথায়...। টাকা জমার দিনক্ষণ থেকে টাকার অঙ্ক নির্ধারণের পুরোটাই হচ্ছে একতরফা। লখনউয়ের হজরতগঞ্জে সব চেয়ে বড় অবস্থানটি তোলার জন্য ২০১৯-এর ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ লাঠি ও জলকামান চালায়। পুলিশের হিসেবে, সে দিন আন্দোলনকারীরা ৬৪ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছিলেন। সে দিন ধরা পড়ে জামিনে মুক্ত ৪৬ জনের কাছে নোটিস দিয়ে ওই টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে থানায় এসে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন লখনউয়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক। কয়েকটি পরিবারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে ওই ভাঙচুরে জড়িত, তার প্রমাণ চেয়েছিলেন তাঁরা। ভিডিয়ো এবং সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া কিছু অতি-ঝাপসা ছবি তাঁদের দেখিয়ে পুলিশ দাবি করেছে— এটাই ওঁরা। একই ঝাপসা ছবি প্রমাণ হিসেবে একাধিক জনকেও দেখানো হয়েছে। আইনজীবীদের দাবি— কোনও আত্মপক্ষ সমর্থনের অবকাশ নেই, জবাবদিহির সুযোগ নেই, পুলিশ যা বলছে তা করতে হবে, এটা বোধ হয় একমাত্র যোগী-রাজ্যেই সম্ভব।

কানপুরে এমন একটি ঘটনায় ইতিমধ্যেই ২১ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলেছে পুলিশ। প্রত্যেককে দিতে হয়েছে ১৩ হাজার ৪৭৬ টাকা করে। এই ২১ জনের এক জন রিকশাচালক, এক জন ঠেলাচালক, এক জনের বাজারে মুরগির দোকান, এক জন দুধ বিক্রেতা, একটি ছেলে বাবার ছোট কাপড়ের দোকান দেখাশোনা করেন, একটি কিশোর যাকে অবাবে লেখাপড়া চেড়ে দিতে হয়েছে এবং ৮ জন দিন মজুর, যাঁদের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা— অবশ্যই কাজের সংস্থান হলে তবে। ২১ জনের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বয়স ৭০, কম ১৮ বছর। এঁদের আইনজীবীদের কথায়, তাঁদের মক্কেলরা সকলেই হদ্দগরিব। তার পরেও এই হেনস্থা থেকে রেহাই নেই। অনেকে ধার করে টাকা জোগাড় করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন। এক আইনজীবী জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে তাঁরা আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের কড়া নির্দেশ— যাই করুন, ক্ষতিপূরণ জমা দিয়ে তার পরে।

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Narendra Modi Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE