(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্যনাথ (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
চালিয়ে খেলছেন তিনিও। রামমন্দিরের যাবতীয় কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদী একাই নিচ্ছেন বলে বিরোধীদের একাংশ যখন অভিযোগ তুলেছেন, তখন অযোধ্যার ঘরোয়া পিচে রান বাড়িয়ে নিতে পিছপা হচ্ছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। বার্তা স্পষ্ট, অযোধ্যা ও রামমন্দির যতটা নরেন্দ্র মোদীর, ততটা তাঁরও।
সোমবার বেলা ১২টা বেজে ২০ মিনিটে রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে দিনের প্রচারের আলো যে গোটাটাই তিনি শুষে নেবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কারও। রাজনীতিকদের মতে, যা তাঁকে লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় বার জিতিয়ে আনার প্রশ্নে অনেকটাই সুবিধা দিতে চলেছে। বিজেপিও মনে করছে, রামমন্দির প্রতিষ্ঠার কারণে হিন্দুত্বের হাওয়ায় অনায়াসে পার হওয়া যাবে লোকসভা বৈতরণী।
কিন্তু নিজের রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বাড়তি জমি ছাড়তে কার্যত নারাজ যোগী। গত এক মাস ধরে কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে প্রতি তিন দিন অন্তর অযোধ্যায় গিয়েছেন তিনি। চরকির মতো পাক খেয়েছেন অযোধ্যা জুড়ে। মন্দির নির্মাণের প্রস্তুতি পর্ব থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থার খুঁটিনাটি সবই খতিয়ে দেখেছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, রামমন্দির নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প হলেও, সেই কর্মযজ্ঞে তিনিও ততটাই সামিল। অযোধ্যা জুড়ে যে সংখ্যায় পোস্টার পড়েছে মোদীর ছবি দিয়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চোখে পড়েছে যোগীর ছবিও। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সমান ভাবে নিজের উপস্থিতি বজায় রেখে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
যেমন করলেন আজ। প্রস্তুতি পর্ব খতিয়ে দেখার আজই ছিল কার্যত শেষ দিন। কাল থেকে অযোধ্যায় বাহন প্রবেশে প্রবল কড়াকড়ি শুরু হতে চলেছে। আর রবিবার থেকে মন্দির চত্বরের নিরাপত্তার ভার চলে যাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’-এর হাতে। আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় হনুমানগড়হি চলে আসনে যোগী। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা বলে হনুমানগড়হি মন্দিরে পুজো দেন। কথা বলেন অনেকের সঙ্গে। সেখান থেকে গাড়িতে এক কিলোমিটার দূরে রামমন্দির। রামমন্দিরের পরিসরে নেমে হেঁটে মন্দির পর্যন্ত যান যোগী। চত্বরের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। এর পর মন্দিরের ভিতরে গিয়ে কথা বলেন। স্থানীয় সন্ন্যাসী ও মোহন্ত সমাজের সঙ্গে। তাঁদের কোনও ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, তা জানতে চান।
এর পরেই অযোধ্যার সামগ্রিক পরিকাঠামো ব্যবস্থা দেখতে বেরিয়ে পড়েন যোগী। কথা বলেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে। যাঁরা পায়ে হেঁটে অযোধ্যায় এসেছেন, তাঁদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন। দেখা করতে যান তুলসী পীঠাধীশ্বর শ্রীরামভদ্রাচার্যের সঙ্গেও। ওই পীঠাধীশ্বরের ৭৫ বছর উপলক্ষে অযোধ্যার কাশীরাম কলোনিতে অমৃত মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বসেছে পাঠের আসর। সেখানে প্রায় আধ ঘণ্টা ছিলেন যোগী।
নিয়ম মেনে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে না, ওই যুক্তিতে চার মঠের শঙ্করাচার্য অযোধ্যায় আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের মতে, বরফ যাতে গলে, শঙ্করাচার্যেরা যাতে আসেন, যোগী আদিত্যনাথের তরফে তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি যদি সফল হন, সে ক্ষেত্রে তাঁর মুকুটে বাড়তি পালক যোগ হবে। যোগীর ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, “তাঁর রাজ্যে এসে বাইরের কেউ সব কৃতিত্ব নিয়ে যাবেন, তা যোগীর পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। এ দিকে সরাসরি কৃতিত্ব দাবি করাও মুশকিল। কিন্তু হিন্দুত্বের প্রশ্নে তিনি যেন পিছিয়ে না থাকেন, তা ঘরোয়া ভাবে নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে আলাদা ও নিয়মিত বৈঠক করে, যে কোনও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি।”
এ দিকে, গত কাল গর্ভগৃহে মূর্তি স্থাপনের পরে আজ সকালে রামলালার চোখঢাকা মূর্তির ছবি সামনে আসে। পরে সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা শাহজাদ পুনেওয়ালা যে ছবিটি। নিজের এক্স হ্যান্ডলে দেন, তাতে দেখা যায়, মূর্তির হাতে সোনার তির ও ধনুক। চোখ আবরণহীন। মূর্তিকে বেড় দিয়ে পাথরের যে কাঠামো রয়েছে, তাতে দু'পাশে পাঁচটি করে বিষ্ণুর দশ অবতারের মূর্তি খোদিত রয়েছে। মূর্তির শীর্ষে রয়েছে স্বস্তিক চিহ্ন, ওঁ, শঙ্খ, চক্র, গদার প্রতিকৃতি। রামলালা দাঁড়িয়ে রয়েছে পদ্মের উপরে। এ ছাড়া রয়েছে হনুমান ও গরুড়ের খোদাই করা মূর্তি।
রামমন্দিরে আজ নবগ্রহ স্থাপন করা হয়। যজ্ঞের আগুনও জ্বালানো হয়েছে। এ ছাড়া মূর্তির ঔষধি অধিবাস, কেশর অধিবাস, ঘৃত অধিবাস ও ধান্য অধিবাস হয়। আগামিকাল ‘বাস্তুশান্তি’র লক্ষ্যে পুজো হবে বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy