সমাজবাদী পার্টির মুখ্যমন্ত্রী মুখ অখিলেশ যাদব। ফাইল চিত্র।
গত কয়েক দিন ধরেই বিজেপির পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোটব্যাঙ্কে লাগাতার থাবা বসিয়েছেন তিনি। তাঁরই উদ্যোগে ভোটের মুখে বিজেপি ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন একাধিক পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেতা। ওই ধারাবাহিক দলত্যাগের ঘটনায় শাসক শিবিরের পিছিয়ে থাকা শ্রেণির ভোটব্যাঙ্কে যে ভাল ভাঙন ধরেছে, তা বুঝেই আজ সমাজবাদী পার্টির মুখ্যমন্ত্রী মুখ অখিলেশ যাদব দাবি করেন, আসন্ন ভোটে তিন-চতুর্থাংশ আসন নয়, মাত্র তিন-চারটি আসন পাবে বিজেপি। কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, তাঁর দল আসন্ন নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের চার ভাগের তিন ভাগ আসন দখল করতে চলেছে। কিন্তু আজ বিজেপি শিবিরে থাকা দুই ওবিসি মন্ত্রীর যোগদানে উজ্জীবিত অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকে পাল্টা জবাব দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
অতীতে কংগ্রেস-বিএসপি-র মতো দলের সঙ্গে জোট করে লাভের পরিবর্তে লোকসানের মুখ দেখেছে এসপি। তাই এ বার তথাকথিত অন্য বড় দলের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া গোড়া থেকেই এড়িয়ে গিয়েছেন অখিলেশ। উল্টে তিনি জোট করেছেন ছোট দলগুলির সঙ্গে। যারা উত্তরপ্রদেশের দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। এসপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, যাদব ও মুসলমান ভোট গোড়া থেকেই দলের সঙ্গে রয়েছে। দলের তাই লক্ষ্য ছিল, যাদব নয়, এমন পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে এক জোট করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে লড়া। পাশাপাশি বিজেপিতে থাকা অসন্তুষ্ট পিছিয়ে থাকা শ্রেণির নেতাদের ভাঙিয়ে আনার কৌশল নিয়েছিলেন অখিলেশ। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই সফল হয়েছে তাঁর দল। আজ এসপি-তে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগী মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য ও ধরম সিংহ সাইনি যোগ দেন। আর এক মন্ত্রী দারা সিংহ চৌহান মকর সংক্রান্তির পরে সম্ভবত রবিবার এসপি-তে যোগ দেবেন। মন্ত্রীদের পাশাপাশি আজ অখিলেশের দলে যোগ দিয়েছেন বিজেপির পাঁচ বিধায়কও। দল ছেড়ে এসপি-তে যোগ দিয়েছেন আপনা দল (সোনেলাল)-এর বিধায়ক অমর সিংহ চৌধরিও। এসপি সূত্রের বক্তব্য, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির এই নেতাদের যোগদানের ফলে যাদব নয়, এমন ভোটও অখিলেশের দলের ঝুলিতে আসা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। যার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে পূর্বাঞ্চলের অন্তত একশোটি আসনে।
আজ বিজেপি থেকে আসা নেতাদের যোগদান সভায় দৃশ্যতই খুশি অখিলেশ দাবি করেন, ওই নেতাদের আসার ফলে এসপি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাঁর দাবি, ওবিসি-দলিত শ্রেণির উপর পাঁচ বছরের বঞ্চনার ফল আসন্ন নির্বাচনে পাবে বিজেপি। সম্প্রতি যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, রাজ্যের ৮০ শতাংশ মানুষ বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। কুড়ি শতাংশের সমর্থন রয়েছে বিরোধীদের পিছনে। ওই কুড়ি শতাংশ বলতে তিনি রাজ্যের মুসলিম ভোটারদের পরোক্ষে বোঝাতে চেয়েছিলেন বলে মনে করছিলেন রাজনীতির অনেকে। আজ সেই প্রসঙ্গে অখিলেশ পাল্টা আক্রমণে যোগীকে উদ্দেশ করে বলেন, “আগেই বলেছিলাম, যোগী আদিত্যনাথের একজন অঙ্কের মাস্টার প্রয়োজন! আমার মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন, রাজ্যের ৮০ শতাংশ মানুষ বিরোধীদের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু এখন এই নেতাদের যোগদানের পরে রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে চলে এসেছেন। যোগী বলেছিলেন, বিজেপি তিন-চতুর্থাংশ আসন পাবে। আসলে বিজেপি তিন থেকে চারটে আসন পেতে চলেছে।’’
আজ যোগদান সভায় এসপি সমর্থকদের ভিড় ছিল দেখার মতো। স্বভাবতই ওই ভিড়ে কোভিড বিধি ভাঙার একাধিক নজির সামনে আসায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন লখনউয়ের জেলাশাসক অভিষেক প্রকাশ। তিনি জানিয়েছেন, কোভিড আবহে কোনও দলকেই ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আজ সমাজবাদী পার্টির যে জনসভা হয়, তার কোনও অনুমতি প্রশাসন দেয়নি। ফলে কোভিড বিধি অনুসারে ওই দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাল্টা দাবিতে সমাজবাদী পার্টির নেতা নরেশ পটেল বলেছেন, “আজকের অনুষ্ঠান দলীয় দফতরে ভার্চুয়াল ভাবে হওয়ার কথা ছিল। আমরা কোনও সমর্থককে আসার জন্য বলিনি। কিন্তু মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছেন। তাঁরা কোভিড-বিধিও পালন করেছেন। বিজেপি মন্ত্রীদের ঘরের সামনেও ভিড় রয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের যত সমস্যা আমাদের নিয়ে!’’ এসপি নেতা ওই যুক্তি দিলেও কেন্দ্রের সংখ্যালঘু মন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম মুসলিম মুখ মুখতার আব্বাস নকভির দাবি, “এসপি বরাবরই নিয়ম ভাঙার পক্ষে। রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য তারা সমস্ত ধরনের নিয়ম ভাঙতে পারে। কারণ এসপি নেতারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন। ওই নেতাদের এখন হাসতে দিন। ভোটের ফল প্রকাশের পরে তো কাঁদতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy