আদালত চত্বরে আইনজীবীদের হাতে নিগ্রহের প্রতিবাদে দিল্লি পুলিশের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির পুলিশ সদর দফতরের সামনে। ছবি: প্রেম সিংহ
উত্তেজিত ভিড়ের প্রবল চিৎকার। ‘‘হাউ ইজ দ্য জোশ? লো স্যার।’’ বড় কর্তারা আবেদন করছেন, কাজে ফিরে যান। বিক্ষোভকারীদের জবাব, ‘‘প্রশ্নই নেই। অনেক সয়েছি। এ বার বিহিত চাই।’’
আজ কার্যত ‘সিপাহি বিদ্রোহ’-এর সাক্ষী থাকল রাজধানী। যে পুলিশের কাজ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া, আজ তাঁরাই নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামলেন। আইনজীবীদের কাছে পরপর দু’দিন মার খাওয়ার প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। সকালে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে শ’খানেক পুলিশ কর্মীর নীরব বিক্ষোভ দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, দিন গড়াতে তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দিনভর ঘেরাওয়ের শেষে সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিল করেন পুলিশ কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ ধর্না ওঠে।
কিন্তু আজকের বিক্ষোভ এক দিকে যেমন বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা নিয়েও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে থাকা দিল্লি পুলিশের ওই বিদ্রোহ আদতে কেন্দ্রের প্রতি পুলিশ বাহিনীর অনাস্থা বলে আক্রমণ শানিয়েছে আপ ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এরই মধ্যে কর্নাটক ও কেরলের আইপিএস সংগঠন, হরিয়ানা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন-সহ একাধিক রাজ্য থেকে সমর্থন আসায় কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। ‘হ্যাশট্যাগ তিসহাজারি’ লিখে পশ্চিমবঙ্গের আইপিএস-রাও তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। পাশে দাঁড়াতে পথে নেমেছিলেন দিল্লি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীরাও।
মূল ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। সে দিন দুপুরে তিসহাজারি আদালত চত্বরে গাড়ি পার্ক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা বাধে আইনজীবীদের। যা গড়ায় হাতাহাতিতে। চলে গুলি। অভিযোগ, ওই ঘটনায় একতরফা শাস্তি দেওয়া হয় পুলিশকর্মীদের। ছাড় পেয়ে যান আইনজীবীরা। গত কাল সাকেত আদালতের সামনে ফের এক কনস্টেবলকে মারধর করেন আইনজীবীরা। ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক। ছবি: পিটিআই।
শীর্ষ পুলিশ কর্তারা সব জেনেও নীরব থাকায় আজ সকাল ১০টা থেকে পুলিশের সদর দফতরের সামনে সাদা পোশাকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন নিচুতলার কর্মীরা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আইটিও-তে পৌঁছতে থাকেন দলে দলে পুলিশ। বেলা ১২টা-সাড়ে ১২টার মধ্যে আইটিও জনসমুদ্রের আকার নেয়। ধর্নায় দাঁড়ানো কনস্টেবল মুকেশ কুমার ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘আইনজীবীদের কোনও দোষ নেই! সব দোষ পুলিশের! নেতৃত্ব দুর্বল হলে এমন হবেই।’’ দিল্লির প্রাক্তন সিপি নীরজ কুমারও বর্তমান সিপি অমূল্য পট্টনায়কের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘বাহিনীর কোনও নেতা নেই। একতা নেই।’’
আরও পড়ুন: চিনাতঙ্কেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে পিছপা, নজরে মনমোহন-জমানার পুরনো চুক্তি
জয়েন্ট সিপি থেকে পুলিশ কমিশনার— বিক্ষোভ তুলতে পথে নামেন পদস্থ কর্তারা। সব প্রচেষ্টাই বিফলে যায়। উল্টে পট্টনায়কের সামনেই তাঁর পরিবর্তে প্রাক্তন আইপিএস কিরণ বেদীর মতো দৃঢ়চেতা কাউকে কমিশনারের পদে বসানোর দাবি ওঠে। স্পষ্ট হয়ে যায়, বাহিনীর ভরসা হারিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সে কারণে পুলিশ কমিশনার বলতে উঠলে নিচুতলার কর্মীদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, পট্টনায়ক যখন বিচারবিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিচ্ছেন, বলছেন ‘দিল্লি পুলিশ শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনী’— তখন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। শেষে মুখ নিচু করে দফতরে ফিরে যান সিপি। আর সামনে আসেননি। দোষী আইনজীবীদের শাস্তি, সাসপেন্ড হওয়া পুলিশদের পুনর্নিযুক্তির দাবি মেনে নিলে বিক্ষোভ ওঠে।
কেন আইনজীবীরা পুলিশকে মারধর করলেন, তার যুক্তিসঙ্গত জবাব দিতে পারেননি কেউই। উল্টে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনন মিশ্র দাবি করেন, ‘‘যে পুলিশকর্মী শনিবার গুলি চালিয়েছিলেন, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’ দিল্লির জেলা আদালতের আইনজীবীরা কালও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন, এ কথাও বলে রেখেছেন তাঁরা। যদিও প্রাক্তন আইপিএস যশবর্ধন আজাদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দোষ করলে আইনজীবীদের কেন শাস্তি হবে না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy