কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার। -ফাইল চিত্র।
উন্নাও ধর্ষণ-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। সেই সঙ্গে তাঁকে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক। নির্যাতিতার পরিবারকে এক মাসের মধ্যেই ওই টাকা দিতে হবে বলে নির্দেশ আদালতের।
শুক্রবার দুপুর ২টোয় দিল্লির তিসহাজারি কোর্টে সেঙ্গারের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক ধর্মেশ শর্মা। গত সপ্তাহে এই মামলার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজার আবেদন করেছিল সিবিআই। তবে সেঙ্গারের আইনজীবীর আর্জি ছিল, যাবজ্জীবন নয়, ১০ বছরের সাজা দেওয়া হোক তাঁকে। এ দিন সাজা ঘোষণার সময় সেই আর্জি খারিজ করে বিচারকের মন্তব্য, “জনপ্রতিনিধি হিসাবে মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন সেঙ্গার।” আদালতের মতে, উন্নাওয়ের ওই ধর্ষিতাকে নানা ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন সেঙ্গার।
আজীবন কারাবাস ছা়ড়াও বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়েছে সেঙ্গারের। এক মাসের সেই টাকা দিতে না পারলে তাঁর সম্পত্তি বাজেআপ্ত করা হবে বলে নির্দেশ আদালতের।
আরও পড়ুন: আজও বিক্ষোভ দিল্লিতে, উত্তরপ্রদেশে কার্ফু, ইন্টারনেট বন্ধ বহু জায়গায়
আরও পড়ুন: প্রথম দশে দুই বলি নায়িকা, ফোর্বস ইন্ডিয়ার তালিকার এক নম্বরে বিরাট কোহালি
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে সেই অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের। সেই সঙ্গে সেঙ্গারের ভাই অতুল সেঙ্গারের বিরুদ্ধে নির্যাতিতার বাবাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়তে থাকে। আরও অভিযোগ, গুরুতর আহত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের বদলে ভুয়ো অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দু’দিন পর পুলিশি হেফাজতেই মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। এর পর সুবিচারের দাবিতে লখনউতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারি বাসভবনের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোরী। তাতেই যেন নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ওই মামলার অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয়।
উন্নাও-কাণ্ড ঘিরে প্রবল জনরোষের মুখে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেঙ্গার ও তাঁর ভাই-ছাড়া আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। চলতি বছরের জুলাইতে নির্যাতিতা ও তাঁর দুই আত্মীয়া একটি পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। ঘটনায় তাঁর ওই দুই আত্মীয়ার মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। ওই ঘটনাতেও সেঙ্গারের হাত রয়েছে বলে দাবি করে নির্যাতিতার পরিবার। ওই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈইকে চিঠি লেখেন উন্নাওয়ের ওই নির্যাতিতা। গত অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উন্নাও-সহ মোট পাঁচটি মামলা লখনউ থেকে দিল্লির আদালতকে হস্তান্তর করে। সে মাসেই বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয় চার বারের বিধায়ক সেঙ্গারকে। ৯ অগস্ট সেঙ্গার এবং শশী সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা সিবিআই। ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপহরণ ছাড়াও পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।
গত সোমবার তিসহাজারি কোর্টে বিচারক ধর্মেশ শর্মারএজলাসে দোষী সাব্যস্ত হন সেঙ্গার। শশীকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রেখে ছাড়া হয়। তবে সে দিনই সেঙ্গারের সাজা ঘোষণা করা হয়নি। নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওযার জন্য, নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সেঙ্গারের সম্পত্তির পরিমাণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরের দিন আদালতের কাছে সেঙ্গারের হলফনামার নথি জমা করেন সেঙ্গারের আইনজীবী। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা।
শুনানির সময় বিচারক ধর্মেশ শর্মার এজলাসে ওই অপরাধের জন্য তাঁর আজীবন কারাবাসের আবেদন করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী অশোক ভারতেন্দু। তবে কুলদীপের আইনজীবী তনভীর আহমেদ মিরের আর্জি ছিল, কুলদীপের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হোক। তাঁর বক্তব্য ছিল, “রাজনৈতিক কেরিয়ারে কোনও দাগ নেই সেঙ্গারের। ২০০২ থেকে আজ পর্যন্ত বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।” তবে আদালত যাতে সেঙ্গারকে যাবজ্জীবন কারাবাস দেয় তার আর্জি জানায় সিবিআই। সিবিআইয়ের মতে, “এটি এ ধরনের জঘণ্য অপরাধের জন্য নির্যাতিতাদের আর্তি।” তবে এ দিন সেঙ্গারের কোনও আর্জিই কাজে আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy