রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র।
উন্নাওয়ে নিগৃহীতাকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে উঠে এল এলাকার আর এক বিজেপি নেতার নাম। ৭ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে সিবিআই বিজেপির নবাবগঞ্জ ব্লকের প্রধান অরুণ সিংহের নাম এফআইআরে যোগ করেছে। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের প্রভাবশালী কৃষিমন্ত্রী রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিংহের জামাই অরুণ। এ ছাড়া প্রধান অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার-সহ ১০ জনের নাম রয়েছে সিবিআইয়ের এফআইআরে।
পাশাপাশি, প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ করে ধর্ষণের মামলাটি উত্তরপ্রদেশের বাইরের কোনও আদালতে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে লেখা উন্নাওয়ের নিগৃহীতা ও তাঁর পরিবারের চিঠিটি কেন তাঁর কাছে আসেনি, সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে তা জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রবিবার তাঁর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কার সপ্তাহ দুয়েক আগেই নিগৃহীতা এই চিঠি লিখেছিলেন। ঘটনায় গাড়ির আরোহী তাঁর কাকিমা ও কাকিমার বোন মারা গেলেও সংকটাপন্ন অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন নিগৃহীতা। বুধবার ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও এখনও ভেন্টিলেশনে রয়েছেন নিগৃহীতা। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ধর্ষণের মামলার প্রধান অভিযুক্ত কুলদীপ সেঙ্গারের দলবলই দুর্ঘটনাটি ঘটিয়ে নিগৃহীতাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।
প্রধান বিচারপতিকে লেখা উন্নাওয়ের নিগৃহীতা এবং তাঁর মা ও কাকিমার চিঠিটির প্রতিলিপি ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং রাজ্য সরকারকেও পাঠানো হয়েছিল। তাতে অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত বিধায়কের অনুগামীরা নিয়মিত তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মামলাটি উত্তরপ্রদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হোক।
শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের সহায়ক সিনিয়র আইনজীবী ভি গিরি এ দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের সামনে চিঠিটির উল্লেখ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে চিঠিটির বিষয়ে পদক্ষেপ করা। এর পরেই বিচারপতি গগৈ বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক যে চিঠিটি আমার হাতেই আসেনি, অথচ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পড়ে মনে হচ্ছে আমি সেটি পড়েছি।’’ বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং অনিরুদ্ধ বোস জানান, সংবাদপত্রের রিপোর্ট পড়ে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সুপ্রিম কোর্ট চিঠিটি পেয়েও ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরেই প্রধান বিচারপতি সেক্রেটারি জেনারেলকে দেখতে বলেন কেন নিগৃহীতার চিঠিটি তাঁর কাছে পৌঁছয়নি। কাল এ বিষয়ে শুনানি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মামলা রাজ্যের বাইরে পাঠানোর আর্জি জানিয়ে নিগৃহীতার মায়ের করা একটি মামলায় এর আগে সিবিআই ও রাজ্য সরকারকে নোটিস দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত সূত্রের খবর, সোমবার বিষয়টি বিচারপতিদের কাছে না তুলেই সিবিআইকে জবাব দেওয়ার জন্য আরও চার সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার। ২৯ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখও ঠিক করে দেন তিনি। বিচারপতিদের এড়িয়ে মামলা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে।
বুধবার নিগৃহীতার কাকিমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তাঁর কাকাকে রায়বরেলী জেল থেকে নিয়ে আসা হয়। তবে সাংবাদিকদের তাঁর কাছে ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। কিন্তু ফেরার পথে গাড়ি থেকে তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এনে বিচার চাওয়ার জন্য আমাদের গোটা পরিবারকে নিকেশ করে দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে পোরা হয়েছে!’’ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নিগৃহীতার কাকা বলেন, ‘‘কুলদীপ সেঙ্গারই সব করাচ্ছে। আমার কাছে তার প্রমাণ রয়েছে।’’ নিগৃহীতা অভিযোগ তোলার পরের দিনই তাঁর বাবাকে বেধড়ক মারধর করে কুলদীপের ভাই। পুলিশ তাঁকেই গ্রেফতার করে। সে দিনই পুলিশ হেফাজতে মারা যান নিগৃহীতার বাবা। এর পরে আইন ভেঙে অস্ত্র রাখার দায়ে কাকাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
উন্নাও-কাণ্ডে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বুধবারেও বিরোধীরা বিষয়টি তোলেন। অখিলেশ যাদব সিবিআই তদন্তের দাবি করার পরে তা মেনে নিয়েছে যোগী সরকার। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বুধবার টুইটে বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের হাত মাথার ওপর না-থাকলে এ ভাবে একটি মেয়ের গোটা পরিবারের উপর নিগ্রহ সম্ভব নয়।’ প্রিয়ঙ্কা লেখেন, মেয়েটির পরিবার যাতে বিচার পায়, কংগ্রেস তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy