কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য যে অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) জারি করেছিল, মঙ্গলবার সংসদের বাদল অধিবেশনের তা পাশ করিয়ে পুরদস্তুর আইনের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হবে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় বিলটি পেশ করবেন বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে। ওই অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বিচারাধীন। শীর্ষ আদালত গত মাসে জানিয়েছে, অর্ডিন্যান্সের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তে মণিপুরকাণ্ডের জেরে উত্তপ্ত বাদল অধিবেশনে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে মোদী সরকারের অর্ডিন্যান্সটিকে নয়া বিলের খসড়ায় কিছুটা বদল করার হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। দিল্লির আমলাদের রাশ হাতে রাখতে গত ১৯ মে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে বিতর্কিত অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল, তাকে স্থায়ী আইনের রূপ দিতে তৈরি হয়েছে বিলের খসড়া। কিন্তু সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই অর্ডিন্যান্সের অন্তত তিনটি বিষয়ে সংশোধন করা হয়েছে বিলের খসড়ায়। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের বাদল অধিবেশনে খসড়াটি পেশ করতে পারেন বলে ওই সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, অর্ডিন্যান্সের ৩এ ধারাটি বিলের খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও আদালতের কোনও রায়, নির্দেশ বা ডিক্রিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, ওই অনুচ্ছেদে অনুযায়ী আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আইনসভার। প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ নির্দেশে বলেছিল, ‘‘জন পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শাসনের সাংবিধানিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করা যায় কি না, সাংবিধানিক বেঞ্চ তা বিবেচনা করবে।’’ এমনকি, সংসদ সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে বদল ঘটিয়ে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির শাসন ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা-ও ‘সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচার্য’ বলে জানানো হয়েছে তিন বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশে।
১০ পাতার ওই নির্দেশে বলা হয়, অর্ডিন্যান্সের ৩এ ধারা সরাসরি দিল্লি সরকারের হাতে থাকা ৪১ নম্বর ধারা (পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা)-য় হস্তক্ষেপ করছে। ফলে তার সাংবিধানিক বৈধতা বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। এর পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। সেখানে এখন মামলাটি বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ এড়াতেই খসড়া বিলে মোদী সরকারের এই অবস্থান বদল বলে মনে করা হচ্ছে।
নয়া বিলের খসড়ায় ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিস অথরিটি’র বার্ষিক প্রতিবেদন সংসদ এবং দিল্লি বিধানসভায় পেশ করা ‘বাধ্যতামূলক’ করা হয়েছে বলেও সরকারি সূত্রের খবর। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, আমলাদের উদ্দেশে দিল্লির মন্ত্রীরা যে নির্দেশিকা পাঠাবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (উপরাজ্যপাল) এবং মুখ্যমন্ত্রীর আগে তা কেন্দ্রকে পাঠাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য মোদী সরকারের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় অবিজেপি দলগুলির সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আবেদন জানিয়েছেন, ওই অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ী রূপ দিতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে বিরোধী দলগুলি যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার বিরোধিতা করে। মে মাসেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেজরী। তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে সহায়তার আশ্বাস মিললেও প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে দাঁড়ায়নি।
শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকের আগে গত ১৬ জুলাই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, বিতর্কিত ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী’ আইনে পরিণত করতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে তার বিরোধিতা করা হবে। এর পরেই কেজরী ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রের আনা বিলের বিরোধিতার জন্য ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল তাদের সাংসদদের উদ্দেশে হুইপ জারি করেছে। যদিও লোকসভায় মোদী সরকারের বিপুল গরিষ্ঠতা রয়েছে। রাজ্যসভাতেও অন্ধ্রের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সমর্থন মেলায় বিল পাশ কার্যত নিশ্চিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy