Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Indus Civilization

সরস্বতী থেকে হস্তিনাপুর, নির্মলার লক্ষ্য ঘিরে প্রশ্ন

সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ গবেষকদের বড় অংশ মনে করেন, ঋগ্বেদে বর্ণিত সরস্বতী ও সিন্ধু সভ্যতার সময়ে বয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী যদি এক হয়, তা হলে আর্যরা যে সিন্ধু সভ্যতার সময়ে ছিলেন তা প্রমাণ করা সম্ভব হবে।

বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।—ছবি পিটিআই।

বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।—ছবি পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৫
Share: Save:

উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাওয়া গিয়েছে হারিয়ে যাওয়া নদীর অস্তিত্ব। কিন্তু সেই নদীই কি বেদে বর্ণিত সরস্বতী? সেই বিতর্কের এখনও ফয়সালা হয়নি। আজ কিন্তু নিজের বাজেট ভাষণে আগাগোড়া সিন্ধু সভ্যতাকে ‘সরস্বতী-সিন্ধু’ সভ্যতা বলে গেলেন অর্থমন্ত্রী।

সরস্বতী নদী নিয়ে বিতর্ক বহু পুরনো। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ গবেষকদের বড় অংশ মনে করেন, ঋগ্বেদে বর্ণিত সরস্বতী ও সিন্ধু সভ্যতার সময়ে বয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী যদি এক হয়, তা হলে আর্যরা যে সিন্ধু সভ্যতার সময়ে ছিলেন তা প্রমাণ করা সম্ভব হবে। প্রমাণ হবে, আর্যরা ভারতের নাগরিক— যে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় রয়েছে সঙ্ঘ পরিবার।

কিন্তু বৈদিক সরস্বতী কি হরপ্পার সরস্বতী? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় গত বছর ইসরোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরস্বতীর নদীখাত নিয়ে গবেষক দলের সদস্য ছিলেন। ওঁদের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ‘নেচার’ গোষ্ঠীর জার্নালে। অনির্বাণবাবু জানান, সিন্ধু সভ্যতার সময় হরিয়ানা থেকে পাকিস্তানের চোলিস্তান মরুভূমি পর্যন্ত একটি শুকিয়ে যাওয়া নদীখাতের অস্তিত্ব মিলেছে। ওই নদীর দু’পাশে কালিবঙ্গান, রাখিগড়হির মতো সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ভূতাত্ত্বিক ভাবে খ্রিস্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত এই নদীর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তার পর তা শুকিয়ে যায়। ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর বর্ণনা কিন্তু এর প্রায় হাজার বছর পরের কথা।’’

রোমিলা থাপারের মতো ইতিহাসবিদদের মতে, এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সরস্বতী নদীর উপস্থিতি রয়েছে। ভারতের মতো দেশে সরস্বতী নদী একটি প্রতীক। বঙ্গবাসী কলেজের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রিয়দর্শিনী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রাজস্থান-হরিয়ানা অঞ্চলে একটি শুকিয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ বেদে বলা হয়েছে সরস্বতী আয়তনে বিশাল। যা হিমালয় ভেদ করে এ দেশে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া ইলাহাবাদের কাছে সঙ্গম হল গঙ্গা-যমুনা সরস্বতীর মিলনক্ষেত্র। আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে হারাক্সবতী নদীর নাম পাওয়া যায়। যার সঙ্গে সরস্বতীর মিল রয়েছে। ফলে ঋগ্বেদের সরস্বতী ঠিক কোন নদী, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’ অনির্বাণবাবুদের মতে, হরপ্পা সভ্যতাকে সরস্বতী-সিন্ধু সভ্যতা বলা যেতে পারে। কিন্তু সেই সরস্বতীর সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার সরাসরি সংযোগ রয়েছে, এখনও তা বলা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে এখনও সম্পূর্ণ মর্মোদ্ধার সম্ভব হয়নি সিন্ধু লিপিরও।। কিন্তু আজ বাজেটে বক্তব্যে সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেন নির্মলা সীতারামন।। আর্থিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে হরপ্পার লিপির উদাহরণ তুলে নির্মলার দাবি, লিপিতে থাকা শেঠি মানে পাইকারি ব্যবসায়ী, টাকারা কোলিমি মানে টিনের কারিগর, শ্রেণি মানে সঙ্ঘ, পোদ্দার মানে ধাতুর দাম নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ!

আজ বাজেট ঘোষণায় একটি ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেরিটেজ অ্যান্ড কনজ়ারভেশন’ স্থাপনের প্রস্তাব রাখলেন অর্থমন্ত্রী। সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে ‘ডিম্ড ইউনিভার্সিটি’র মর্যাদা পাবে নতুন এই প্রতিষ্ঠান। গুজরাতের লোথলে সামুদ্রিক প্রদর্শশালা এবং হরপ্পা সভ্যতার আমলের জাহাজ মেরামতির কারখানার একটি মডেল তৈরির কথা বলা হয়েছে বাজেটে। ব্রোঞ্জ যুগের বন্দরের চিহ্ন মিলেছিল লোথালে। বাজেটে বলা হয়েছে, পর্তুগালের সমু্দ্র বিষয়ক প্রদর্শশালার সাহায্যে লোথালের প্রদর্শশালাটিকে জলের নীচের জগতের প্রত্নবিদ্যা সংক্রান্ত একটি স্বশাসিত গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ভারত মহাসাগরে জাহাজডুবির জায়গাগুলি থেকে তুলে এনে কিছু

জিনিসপত্র রাখা হবে সেখানে। এ ছাড়াও রাঁচীতে জনজাতি বিষয়ক প্রদর্শশালা এবং দেশের পাঁচটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলকে সংরক্ষণ করে সংগ্রহশালা বানানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন নির্মলা। ওই পাঁচটি স্থানের মধ্যে রয়েছে, রাখিগড়হি (হরিয়ানা) ও ঢোলাভিরা (গুজরাত), যা হল সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। তৃতীয়টি অসমের শিবসাগর। চতুর্থটি হল তামিলনাড়ুর আদিচান্নালুর, যেখানে রয়েছে প্রাচীন তামিল সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ।

বিতর্ক তৈরি হয়েছে পঞ্চম স্থান হস্তিনাপুরকে ঘিরে। মেরঠের কাছে হস্তিনাপুরে মহাভারতের নিদর্শন রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয় লোকসভা কেন্দ্র হাপুরের সাংসদ রাজেন্দ্র আগরওয়াল নির্মলার ঘোষণার পরে জানিয়েছেন, এর ফলে ওই এলাকায় মাটির নীচে থাকা মহাভারতের সময়কার নিদর্শনের বিষয়ে জানতে পারবেন মানুষ। যা নিয়ে বিরোধীরা বলছেন, ইতিমধ্যেই অযোধ্যা রামের জন্মভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। এ বার কি মহাভারতকে পুরাণ থেকে ইতিহাসে পরিণত করার করার কাজ শুরু হল? সেই কারণেই কি হস্তিনাপুরে সংগ্রহশালার প্রস্তাব?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy