Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Indian Army

শীতের লাদাখে পাতালে তেলের ট্যাঙ্ক, প্রস্তুত ভারতীয় সেনা

লাদাখে মজুত করা হচ্ছে বিশেষ ধরনের ডিজেল, যা হিমাঙ্কের নীচে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও কার্যকরী থাকে।

লাদাখে ভারতীয় সেনার রসদবাহী ট্রাক— ফাইল চিত্র।

লাদাখে ভারতীয় সেনার রসদবাহী ট্রাক— ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ১৪:১০
Share: Save:

চিনা ফৌজ নয়। শীতের লাদাখে সবচেয়ে বড় শত্রু প্রকৃতি। প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলা করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) কৌশলগত অবস্থানগুলি দখলে রাখতে তাই এখন চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা।

সেনা সূত্রের খবর, আসন্ন শীতে লাদাখের এলএসি-তে মোতায়েন সেনার জন্য শীতের উপযোগী পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম এবং রসদ পাঠানোর পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিকাঠামো নির্মাণে। লাদাখের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ তেলের ট্যাঙ্ক। এই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ফুয়েল ডাম্প’-গুলির প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৪ লক্ষ লিটার করে। সেগুলিতে পৃথক ভাবে মজুত করা হচ্ছে সেনাদের রান্নার কেরোসিন, টি-৯০ ট্যাঙ্ক আর বিএমপি-২ ‘ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল্’-এর ডিজেল এবং অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের ‘অ্যারো টার্বাইন ফুয়েল’। রয়েছে শীতে ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ শ্রেণির ডিজেল। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) তৈরি এই ডিজেল হিমাঙ্কের নীচে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও কার্যকরী থাকে।

সেনার একটি সূত্রের খবর, লেহ্‌ থেকে হেলিকপ্টারে খাবার, ফলের রসের প্যাকেট, জ্বালানি তেলের সঙ্গেই প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁবু, গরম কাপড়ের সেনা পোশাক, বিশেষ জুতো, বরফে ব্যবহারের সানগ্লাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ এখন শেষপর্বে। পাঠানো হচ্ছে বাড়তি সেনাও। ওই সূত্র জানাচ্ছে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র মোকাবিলায় লাদাখের ৮২৬ কিলোমিটার লম্বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আপাতত ৫০ হাজার ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। যাতে প্রয়োজনে আরও সেনা দ্রুত এলএসিতে পাঠানো যায়, তার জন্য এখন থেকেই কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা লাদাখের বিভিন্ন ঘাঁটিতে পাঠিয়ে রাখার কাজ চলছে।

লেহ্ থেকে দাবরুক, শিয়োক হয়ে দৌলত বেগ ওল্ডি (ডিবিও) বায়ুসেনা ঘাঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত নয়া সড়কপথে দুর্গম সেনা চৌকিগুলিতে রসদ, জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম পৌছনোর কাজে প্রায় ৮,০০০ ট্রাক ব্যবহার করছে ভারতীয় সেনা। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনার ‘সি-১৩০জে হারকিউলিস’ এবং ‘আইএল-৭৬’ পরিবহণ বিমানের। ফরওয়ার্ড পোস্টগুলিতে পাঠানো হচ্ছে ‘চিনুক’ এবং ‘এমআই-২৬’ পরিবহণ হেলিকপ্টার। এলএসি বরাবর বিভিন্ন স্থানে নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মোবাইল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ইউনিট’। মনিটর-যুক্ত এই ব্যবস্থা সিয়াচেনেও ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা।

আরও পড়ুন: চিনকে ঠেকাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন ‘নির্ভয়’

এই বিপুল পরিমাণ সেনার জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় জলের সংস্থান করা কঠিন কাজ। শীতকালে জমে যাওয়া নদী ও পাহাড়ি ঝোরাই মূল ভরসা। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে লাদাখে ভূগর্ভস্থ জলের উৎসগুলিও খোঁজার কাজ চলছে পুরোদমে। সেনার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাসস্থান ও রসদ সরবরাহ সংক্রান্ত ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও শীতের মোকাবিলার জন্য মোটামুটি ভাবে আমরা প্রস্তুত।’’ তিনি জানান, গত সাড়ে তিন দশকে সিয়াচেন হিমবাহের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনার কাজে এসেছে।

আরও পড়ুন: চিনের চাপেই গিলগিট নিয়ে তৎপর ইমরান

পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেনে পাক হামলা ঠেকাতে বছরভরই মোতায়েন থাকে ভারতীয় সেনা।কারাকোরাম পর্বতের প্রায় ১৯ হাজার ফুট উচ্চতায় শীতের মরসুম কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় সেনার অনেক অফিসার এবং জওয়ানের। তখন সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে যায়। অন্যদিকে, পূর্ব লাদাখে শীতের মরসুমে তাপমাত্রা হয় মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে চিনা ফৌজ অভিজ্ঞতায় নিরিখে অনেক পিছিয়ে বলেই অনুমান। পূর্ব লাদাখের এলএসি-তে যুদ্ধের প্রস্তুতির দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় সেনার ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কোর’-এর উপর। এই বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল অরবিন্দ কপূরের কথায়, ‘‘শুধু ভারত নয়,এই রকম চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার যুদ্ধের প্রস্তুতিতে বিশ্বে জুড়ি নেই আমাদের কোরের।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy