Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sex Racket

Sex Racket: চাকরির টোপে দিল্লি, ২৫ দিন যৌনচক্রের ফাঁদে বন্দি বিদেশিনী, কৌশল খাটিয়ে মুক্তি: রিপোর্ট

বন্ধুর কথায় ভারতে এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। সেই বন্ধুই যে তাঁকে অন্য এক জালে জড়়িয়ে ফেলবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি উগান্ডার জেন্ডায়া।

২৫ দিন ধরে বন্দি ছিলেন উগান্ডার জেন্ডায়া (নাম পরিবর্তিত)।

২৫ দিন ধরে বন্দি ছিলেন উগান্ডার জেন্ডায়া (নাম পরিবর্তিত)। প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২২ ১৮:৩৯
Share: Save:

কাজের সন্ধান পেয়ে বন্ধুর কথায় এসেছিলেন ভারতে। কিন্তু সেই বন্ধুই যে তাঁকে অন্য এক জালে জড়়িয়ে ফেলবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তিনি! রাজধানীতে যৌনচক্রের শিকার হয়েছেন বলে এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করলেন উগান্ডার এক মহিলা। বেশ কয়েক দিন ঘরবন্দিও থাকার পর শেষমেশ বুদ্ধি করে যৌনচক্রের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এলেও নিস্তার মেলেনি। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও হয়রানি শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন ওই বিদেশিনী। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরে অবশ্য পুলিশের উপর চাপ বাড়াতে থাকায় ২৪ ঘণ্টা পর তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। পরে গ্রেফতারও হন ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের। তাঁদের ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে বহু নথিপত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি ওই রিপোর্টে।

চলতি বছরের গত জুলাই মাসে দিল্লিতে আসেন উগান্ডাবাসী জেন্ডায়া (নাম পরিবর্তিত)। শহরে পা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বপ্নভঙ্গের শুরু। সেই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’-কে জানালেন তিনি। জেন্ডায়া জানান, প্রচুর উপার্জনের লোভ দেখিয়ে স্কুলের বন্ধু জুডিথ তাঁকে দিল্লি নিয়ে আসেন। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘ দিনের বন্ধুই ফাঁদ পেতে তাঁকে যৌনব্যবসার অলিগলিতে নিয়ে গিয়েছেন। ভারতে আসার জন্য পাসপোর্ট এবং টাকা কিছুই ছিল না তাঁর কাছে। দিল্লিতে বসবাসকারী জেনিফার নামে উগান্ডারই এক মহিলা তাঁকে পাসপোর্ট আর টাকার ব্যবস্থা করে দেন। জেন্ডায়ার কথায়, ‘‘জেনিফার আর ওঁর বন্ধু ভিকি বিমানবন্দরে আমায় নিতে এসেছিলেন। সেখান থেকে মোহন গার্ডেন এলাকার একটি বাড়িতে আমাকে নিয়ে যান ওঁরা।’’

জেন্ডায়ার অভিযোগ, ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, ছ’লক্ষ টাকা নগদ দিলেই পাসপোর্ট মিলবে। তাঁর কথায়, ‘‘টাকার বিনিময়ে আমায় পুরুষদের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে বলেন ওঁরা। আমায় হুমকি দেন, এ ভাবে টাকা রোজগার না করলে ভারত ছাড়়তে দেবে না আমায়। আমায় সেলসের কাজের কথা বলা হয়েছিল। যৌনপেশা নয়। আমি সঙ্গে সঙ্গেই জুডিথের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু আমার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া হয়। তখনই বুঝলাম, আমার বন্ধুও এ সবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আমার দুই সন্তান রয়েছে। টাকার দরকার ছিল। আমার অভাবের এই ভাবে সুযোগ নেবে, বুঝতে পারিনি।’’ জেন্ডায়া জানান, তাঁকে দিনের পর দিন বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপে পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করা হত। ‘খরিদ্দার’ খুঁজতে বলা হত।

‘দ্য ওয়্যার’-এর সাক্ষাৎকারে জেন্ডায়া জানান, তাঁকে ঘর থেকে বেরোতে দেওয়া হত না। ‘খরিদ্দার’ পেলেই বেরোতে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। নাতাশা নামে এক মহিলাই তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে দাবি করেন জেন্ডায়া। তাঁর কথায়, ‘‘দিনে এক ঘণ্টার ঘুম। আর বার খাওয়া। এই ছিল আমার বন্দিজীবন। আমার ভীষণ শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমায় হুমকি দিয়েছিল, পালানোর চেষ্টা করলে কালা জাদু করে মেরে ফেলবে।’’

কিন্তু এই চক্র থেকে কী ভাবে বেরোলেন জেন্ডায়া? তিনি বলেন, ‘‘সুযোগ পেয়েই উগান্ডায় পরিচিতদের গোটা বিষয়টি জানাই। হোয়াটসঅ্যাপে উগান্ডান প্রেয়ার গ্রুপে যোগাযোগ করি। তার পর ওঁরাও ভারতে পরিচিত সমাজসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর পর ভারতের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ওয়াল্টার নামে এক কর্মীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। ওঁর সাহায্য নিয়েই পালানোর পরিকল্পনা করি। কয়েক দিনের মধ্যে এক খরিদ্দারেরও খোঁজ পাই। বড়লোক খরিদ্দার দেখে আমার বেরোতে দেওয়া হয়। ওই সময় বাড়ি থেকে বেরিয়েই ওয়াল্টারের সঙ্গে দেখা করে পুলিশের কাছে যাই।’’

কিন্তু পুলিশের কাছে গিয়ে তৎক্ষণাৎ সুরাহা হয়নি বলেই দাবি করেন জেন্ডায়া। তিনি জানান, সফদরজং থানার পুলিশের তরফে জানানো হয়, কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে এফআইআর গ্রহণ করা যাবে না। কোনও সাহায্য না পেয়ে থানায় দাঁড়িয়েই ১১২ নম্বরে (ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন) ফোন করেন তাঁরা। তার কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে। জেন্ডায়ার আরও অভিযোগ, দিল্লিতে জেনিফার কোথায় থাকে, তা পুলিশকে জানানোর পরেও কোনও তল্লাশি হয়নি। গ্রেফতার তো দূরের কথা। এ ব্যাপারে ‘দ্য ওয়্যার’-এর তরফে সফদরজং থানার এসিপি ভিকেপিএস যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি বলেই দাবি।

পরে অবশ্য নাতাশার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় জেন্ডায়ার পাসপোর্ট। তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে জেনিফার এখন অধরা। ওয়াল্টার অবশ্য বলেন, ‘‘এসিপি ভিকেপিএস যাদব বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার পরেই দ্রুত তদন্ত এগোতে থাকে।’’ আপাতত হোমে রয়েছে জেন্ডায়া। তাঁর কথায়, ‘’১৭ অগস্ট ভারতে এসেছি। এক মাসের মধ্যে এক কিছু ঘটে গেল। আমি এখন শুধু বাড়ি ফিরতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sex Racket Delhi Uganda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy